ফাইল চিত্র।
করোনা বিধিনিষেধ কাটিয়ে মানুষ আবার বেড়াতে বেরোচ্ছেন। যা দেখে আশায় বুক বাঁধছে পর্যটন শিল্প। তাদের বক্তব্য, দু’বছর আগে অতিমারির শুরুতে সব চেয়ে প্রথমে ব্যবসা বন্ধ হয়েছিল। আর সব চেয়ে দেরিতে নিষেধাজ্ঞার কবল থেকে বেরিয়েছে তারা। দেশের বাজারে প্রাক্-করোনা পর্বের ব্যবসা পেরোনো গিয়েছে। এমনকি সবেমাত্র আন্তর্জাতিক উড়ান চালু হওয়ায় বিদেশি পর্যটন এখনও সে ভাবে শুরু না-হলেও, আগামী দিনে তা বাড়বে বলে আশা। কিন্তু সুড়ঙ্গের শেষে আলোর বার্তাতেও ফের ছন্দপতনের উদ্বেগ ঝেড়ে ফেলতে পারছে না শিল্পের একাংশ। কারণ, তেল ও বিমানের জ্বালানির পাশাপাশি হোটেলের চড়া দর ঠেলে তুলছে বেড়ানোর খরচকে। সেটাই আগ্রহী পর্যটকদের পরিকল্পনায় বাধা তৈরি করবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান তারা। সেই সঙ্গে করোনা বিধিনিষেধ ওঠায় শিথিলতার জেরে ফের সংক্রমণের আশঙ্কাও চিন্তায় রাখছে।
পর্যটন শিল্পের প্রাথমিক হিসাব বলেছে, অতিমারিতে প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসা হারিয়েছে। শনিবার অ্যাসোসিয়েশন অব ডোমেস্টিক টুর অপারেটর্স অব ইন্ডিয়া (এডিটিওএআই), কনফেডারেশন অব টুরিজ়ম প্রফেশনালস অব ইন্ডিয়া (সিটিপিআই), ট্র্যাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (টাব) মতো সংগঠনগুলির কর্তারা জানান, ভারতে মার্চ-এপ্রিল-মে মাসের মরসুমের বুকিং প্রাক্-করোনা পর্বকেও ছাপিয়েয়েছে। যাতে পুজোর মরসুমেও ভাল ব্যবসার আশা বাড়ছে। বছর দেড়েকের মধ্যে পর্যটন থেকে বিদেশি মুদ্রা আয়ও ২০১৯ সালের আয়কে ছাপিয়ে যাবে, আশাবাদী সিটিপিআইয়ের প্রেসিডেন্ট সুভাষ গয়াল। তবে জ্বালানির চড়া দর গাড়ি ও বিমানের ভাড়াকেও ঠেলে তোলায় শঙ্কিত অনেকে। টাবের সেক্রেটারি অমিতাভ সরকার বলেন, ‘‘এখন বাড়তি খরচ হলেও বন্দিদশা কাটাতে মানুষ বেড়াতে যাচ্ছেন। কিন্তু ভাড়া আরও বাড়লে তখন যদি ইচ্ছা থাকলেও কেউ পরিকল্পনা স্থগিত রাখেন?’’
তার উপরে আন্তর্জাতিক উড়ান চালু হলেও ভাড়া বেশি হওয়ায় এখনই খুব বেশি পর্যটক বিদেশে যেতে আগ্রহী নন, দাবি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব টুর অপারেটর্সের প্রেসিডেন্ট রাজীব মেহরার। দেশেও ভাড়া চড়া দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘দু’তিন সপ্তাহের মধ্যে বিমানের ভাড়া কোন দিকে যায়, কত দ্রুত স্বাভাবিক উড়ান চলাচল শুরু হয়, তা দেখতে হবে।’’ সেই সঙ্গে রয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধকে ঘিরে ভয়ও। তবে সব কিছু ঠিকঠাক চললে মে থেকে বিদেশে যাওয়া এবং সেপ্টেম্বর থেকে ভারতে বিদেশি পর্যটক আসায় গতি আসবে বলে তাঁর আশা। দেশের বহু জায়গাতেই হোটেলের ঘরের চড়া ভাড়ার কথাও বলছেন এডিটিওএআইয়ের প্রেসিডেন্ট পি পি খন্না। তবে তিনি জানান, ভাড়ার ঊর্ধ্বসীমা বাঁধা নিয়ে হোটেলের সংগঠনগুলির সঙ্গে তাঁরা কথা বলছেন।
আর সকলেরই বক্তব্য, করোনা নিষেধাজ্ঞা উঠলেও মানুষ যেন সতর্ক থাকেন। বাধ্যতামূলক না-হলেও নিয়মিত মুখে মাস্ক ব্যবহার করেন। কারণ, ফের সংক্রমণ বাড়লে আবার সু়ড়ঙ্গের আঁধারেই ফিরতে হবে সকলকে।