গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
৩১ জুলাই আসতে চলল। চাকরিজীবীরা এই সময় ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন (আইটিআর) ফাইল করতে ব্যস্ত। কিন্তু ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন বা আয়কর খাতা বানিয়ে জমা দেওয়া হল এক মহা জটিল কাজ। প্রত্যেক বছর নতুন কোনও বিশেষজ্ঞকে ধরে আইটিআর ফাইল ঠিক করে মানুষ, কিন্তু ১২ মাস ঘুরলেই আবার সময়ের সঙ্গে একই যুদ্ধ। যতই জটিল হোক না কেন, একটু সময় এবং চিন্তাশক্তি ব্যবহার করলে নানা ভাবে ট্যাক্স ছাড় পেতে পারেন সবাই। চটজলদি ইনকাম ট্যাক্স ফাইল করবেন না। কী ভাবে নানা ছাড় পেতে পারেন?
ফর্ম-১৬ সব নয়
যাঁরা চাকরি করেন, তাঁরা প্রত্যেক আর্থিক বছরের প্রথমে কোথায় কোথায় বিনিয়োগ করবেন এই সব তথ্য অফিসে দেন। বছরের শেষে, অফিস থেকে ফর্ম-১৬ দেওয়া হয় যেখানে কতটা ট্যাক্স কাটা হয়েছে তার হিসেব এবং কী কী ট্যাক্স ছাড় নেওয়া হয়েছে বলা থাকে। কিন্তু এই ফর্ম-১৬ বেদবাক্য নয়। আপনি যদি ভুল করে থাকেন, বা কোনও ট্যাক্স ছাড় নিতে সত্যি সত্যি ভুলে যান, অফিসের ফর্ম-১৬-তে সেই তথ্য থাকবে না। তাই, ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন (আইটিআর) ফাইল বানানোর আগে এক বার ঠিক করে সব ট্যাক্স ছাড় পাওয়ার রাস্তা দেখে নিতে হবে।
যেমন, সুদ আয় করলে সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয়, কিন্তু সেভিংস অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে কিছু ছাড় আছে। আমাদের যে টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে থাকে, প্রত্যেক তিন মাস অন্তর তার উপর সুদ দেওয়া হয়। সেকশন ৮০-টিটিএ বলছে যে ১০,০০০ টাকা অবধি সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুদ পাবে ইনকাম ট্যাক্স ছাড়। পোস্ট অফিসের সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।
অনেক করদাতা বাড়ি ভাড়া দেন, কিন্তু মাইনেতে ‘হাউজ রেন্ট অ্যালাওয়েন্স’ (এইচআরএ) না থাকার জন্য কোনও ট্যাক্স ছাড়ের সুবিধা নিতে পারেন না। কিন্তু এ রকম ভাবা একটা মস্ত বড় ভুল। সেকশন ৮০-জিজি বলছে যে আপনি বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে ট্যাক্স সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। এটা করার জন্য আপনার স্যালারির মধ্যে এইচআরএ না থাকলেও পাবেন। কত? আপনার আয়ের ২৫%, ৫০০০ টাকা প্রতি মাসে বা ভাড়া থেকে আয়ের ১০% বাদ দিলে— এই তিনটির মধ্যে সব থেকে কম যেটা হবে, সেই হিসেবে আপনি ছাড় পাবেন। কিন্তু যদি আপনি আপনার স্বামী, স্ত্রী বা সন্তানদের বাড়িতে থেকে এই ট্যাক্স ছাড় নিতে যান, তা হলে সেটা পাবেন না।
আরও পড়ুন:
বিটকয়েনে বিনিয়োগ করেছেন? এখনই টাকা তুলে নিন
লোন চার্জে ছাড়
যাঁরা বাড়ির জন্য লোন নেন, তাঁরা কিছু ভাল কর ছাড় পেয়ে যান। কারণ বাড়ির লোন ফেরত দিলে, মূল এবং সুদ, দু’টোর উপরেই আয়কর ছাড় পাওয়া যায়। কিন্তু খুব কম লোকেই এটা জানেন যে বাড়ির লোনের প্রসেসিং ফি-র উপর ট্যাক্স ছাড় আছে। সেকশন ২৪ বলে যে প্রসেসিং ফি/চার্জকে ইনকাম ট্যাক্সে ছাড় পাওয়ার জন্য ধরা যায়।
তা ছাড়া, অনেকেই বাড়ির লোন নেওয়ার সময় বন্ধু বা পরিবারের কিছু মানুষের থেকে টাকা ধার নেন। কারণ, বাড়ি কেনার জন্য ব্যাঙ্ক ৮০% পর্যন্ত টাকা ঋণ দেয় এবং বাকি ২০% আপনাকে পকেট থেকে দিতে হয়। তাই, আমরা ধার নিয়ে নিই। মোটা টাকা সুদ দিলেও, ওই টাকার উপর কোনও ছাড় আমরা নিতে পারি না। কিন্তু সেকশন ২৪ বলছে যে বাড়ি কেনার জন্য, বা পুনঃসংস্কার করার জন্যে ঋণ নিয়ে সুদ দিলে, সেই সুদের টাকা ইনকাম ট্যাক্স থেকে ছাড় নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা যাবে। এটা করার জন্য একটা ঋণ চুক্তি তৈরি করতে হবে এবং কতটা সুদ দেওয়া হয়েছে তার প্রমাণ রাখতে হবে।
প্রতিবন্ধী শিশু, ক্যাপিটাল লোকসান
সাধারণত, শিশুর নামে টাকা বিনিয়োগ করলে সেই বিনিয়োগের থেকে আয় হলে সেটা বাবা-মার আয়ের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। ফলত, বেশি ট্যাক্স দিতে হয়। কিন্তু প্রতিবন্ধী শিশু হলে, তার নামে করা বিনিয়োগ থেকে আয়, যেমন সুদ ইত্যাদি হলে, বাবা-মায়ের আয়ের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় না। ব্যাঙ্কে ডিপোজিট বা নিশ্চিত আয় মিউচুয়াল ফান্ডের আয়ের উপর ইনকাম ট্যাক্স লাগে, কিন্তু প্রতিবন্ধী শিশুর নামে বিনিয়োগ থেকে কোনও আয় হলে বাবা-মার আয়ের সঙ্গে জোড়া হবে না। এর ফলে, ইনকাম ট্যাক্স কম লাগতে পারে।
আগের আর্থিক বছর যদি আপনি কোনও বিনিয়োগে লোকসান করে থাকেন, সেই ঘাটতিকে আপনি শেয়ার, জমি-বাড়ি, সোনা ইত্যাদির উপর লাভ হয়ে থাকলে অ্যাডজাস্ট করতে পারবেন। শর্ট-টার্ম ক্যাপিটাল লোকসান হলে সেটাকে ব্যবহার করুন শর্ট-টার্ম ক্যাপিটাল লাভ এবং লং টার্ম ক্যাপিটাল লাভের সঙ্গে। লং টার্ম ক্যাপিটাল লোকসান হলে সেটা ব্যবহার করুন শুধু লং-টার্ম ক্যাপিটাল লাভের সঙ্গে।
ফেসবুক এবং ইন্টারনেটের সময়ে, আমরা অনলাইন দান বা আর্থিক ভাবে কিছু সংস্থাকে সাহায্য করে থাকি। মনে করে দেখুন, আপনি এ রকম কিছু করেছেন কি না। আপনার অফিসের ফর্ম-১৬-এ এই দানের কথা না লেখা থাকতে পারে। কিন্তু আপনি এ রকম কিছু দান করে থাকলে এবং ঠিকঠাক সংস্থা হলে, সেকশন ৮০-জি আপনাকে ইনকাম ট্যাক্স ছাড় এনে দিতে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন, এ রকম দান আপনার বার্ষিক আয়ের ১০%-এর বেশি হতে পারবে না। দু’হাজার টাকার বেশি নগদে দান করে থাকলে, সেটা মানবে না আয়কর দফতর।