—প্রতীকী চিত্র।
২০২২ সালে ১ নভেম্বর ভারতের প্রথম ডিজিটাল রুপি (সিবিডিসি) পাইলট প্রকল্প চালু করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। তবে অনেকেই জানেন না যে এই ডিজিটাল রুপি কী? এর সুবিধা কী কী? ক্রিপ্টোকারেন্সির থেকে কোথায় আলাদা এই ডিজিটাল রুপি?
কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছে, এই পাইলট প্রকল্পটি নির্বাচিত কয়েকটি স্থানে এবং বিশেষ কিছু সংখ্যক গ্রাহক এবং ব্যবসায়ীদের একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। এতে পর্যায়ক্রমে অংশগ্রহণ করে মোট ৪টি ব্যাঙ্ক। প্রথম ধাপে চারটি ব্যাঙ্ক অংশ নেয়। এই ব্যাঙ্কগুলি হল স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, ইয়েস ব্যাঙ্ক এবং আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাঙ্ক। এ ছাড়া, ব্যাঙ্ক অফ বরোদা, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক এবং কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক পরবর্তী কালে এই পাইলট প্রকল্পে পড়ে যোগ দেয়।
ডিজিটাল রুপি ক্রিপ্টোকারেন্সির তুলনায় অনেক বেশির নিরাপদ বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ডিজিটাল রুপির মধ্যে পার্থক্য কী?
ডিজিটাল রুপি কী?
ডিজিটাল রুপি হল ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের জারি করা মুদ্রা নোটগুলির ডিজিটাল রূপ। মূলত যোগাযোগহীন লেনদেনে ব্যবহার করা যেতে পারে এই ডিজিটাল মুদ্রা। ২০২২-’২৩ আর্থিক বছরের বাজেট পেশ করার সময়ই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ঘোষণা করেছিলেন, শীঘ্রই আরবিআই তার ডিজিটাল মুদ্রা চালু করবে। ব্লক চেন এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে চলবে আরবিআইয়ের ডিজিটাল রুপি। ২০২২ এর ১ ডিসেম্বর থেকে চালু হয়েছে সেই ডিজিটাল মুদ্রা।
সিবিডিসি দুই প্রকার। প্রথমটি হল খুচরো (সিবিডিসি রিটেইল)। খুচরো সিবিসিডি সকলেই ব্যবহার করতে পারবেন। আর দ্বিতীয়টি হল পাইকারি (সিবিডিসি হোলসেল)। এই ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা নকশা করা হয়েছে নির্বাচিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির ব্যবহারের জন্য।
এ বার জেনে নেওয়া যাক ক্রিপ্টোকারেন্সি কী?
ক্রিপ্টোকারেন্সি এমনই একটা অর্থনৈতিক লেনদেনের বিনিময়ের মাধ্যম, যেটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা। এটির কোনও বাস্তব অস্তিত্ব নেই অথচ মূল্য আছে যার উপর নির্ভর করে মানুষ লেনদেন করে। ক্রিপ্টোকারেন্সি সঙ্কেত লিপির দ্বারা নির্মিত এবং নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ। এটি কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থার নিয়ম দ্বারা আবদ্ধ নয়। কিন্তু, ব্লকচেন পদ্ধতিতে ব্যবহৃত এই মুদ্রাকে সুরক্ষিত বলে দাবি করা হয়। ক্রিপ্টোকারেন্সির সুবিধাজনক দিকগুলি হল, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এর ব্যবহার খুবই সহজ। কারণ, এতে লেনদেন খরচ খুবই কম। আবার খুব অল্প সময়ের মধ্যে লেনদেন করা সম্ভব।
ডিজিটাল রুপি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির পার্থক্য
সিবিডিসি হল একটি আইনি টেন্ডার, যা কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি একটি ডিজিটাল ফর্মে জারি করে। এটি একটি ফিয়াট মুদ্রার মতোই এবং একই মূল্যের সঙ্গে বিনিময়যোগ্য। এটি শুধু রুপির একটি ভিন্ন রূপ। ক্রিপ্টোকারেন্সি হল ব্লকচেন প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে নকশা করা একটি বিকেন্দ্রীকৃত ডিজিটাল সম্পদ। বিকেন্দ্রীকৃত, অর্থাৎ কোনও ব্যাঙ্ক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা সরকারি কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই চলে এর কর্মকাণ্ড। তাই, এই ডিজিটাল সম্পদ নিয়ে প্রচুর বিতর্ক রয়েছে। অন্য দিকে, আরবিআই-এর জারি করা সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সি বা সিবিডিসি, ডিজিটাল মুদ্রা হলেও, এর আইনি বৈধতা নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। সরকার সমর্থিত বলেই, এটি বিটকয়েন, ইথেরিয়াম বা অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির থেকে আলাদা। দ্বিতীয়ত, সরকারি সমর্থনের কারণে প্রকৃত টাকার সমতুল্য এই ডিজিটাল মুদ্রা। আরবিআই বলছে, ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো সিবিডিসি কোনও কমোডিটি বা ডিজিটাল অ্যাসেট নয়। ক্রিপ্টোকারেন্সি কারও দ্বারা ইস্যু করা হয় না। ক্রিপ্টো আসলে টাকা নয় এবং এটিকে কারেন্সি বলা যাবে না।
ডিজিটাল রুপি অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলি থেকে কতটা আলাদা?
ডিজিটাল রুপি এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলির মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। ডিজিটাল রুপি হল সেন্ট্রালাইজড এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অন্য দিকে বিটকয়েন এবং ইথেরিয়ামের মতো জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলির ক্ষেত্রে কোনও সেন্ট্রালাইজড মডেল নেই। অর্থাৎ, এর উপর কোনও একক প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই। আরবিআই ডিজিটাল রুপি ইস্যু করছে। তবে অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সিতে এমন কোনও ইস্যু করার প্রতিষ্ঠান নেই। এ ছাড়াও, ডিজিটাল রুপি অর্থের ট্রেল তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ, একটি লেনদেনের ক্ষেত্রে তার যাবতীয় তথ্য খুঁজে বার করতে পারে এই ডিজিটাল রুপি। কে অর্থ পাঠাচ্ছেন, কার কাছে পাঠাচ্ছেন, সব তথ্য হাতে আসার ফলে ডিজিটাল রুপির জন্য প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা নিয়ে আসে। ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলির ক্ষেত্রে কেবল এনক্রিপ্ট করা নম্বর এবং অক্ষরের দীর্ঘ স্ট্রিং পাওয়া যায়। আর এই পার্থক্যটাই ক্রিপ্টোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডিজিটাল রুপিকে আলাদা করে তোলে।
ডিজিটাল রুপির উপর কি ৩০ শতাংশ কর ধার্য করা হবে?
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বিটকয়েন, ইথেরিয়াম এবং লাইটকয়েন জাতীয় সমস্ত ভার্চুয়াল কারেন্সির উপর ৩০ শতাংশ কর ধার্য করে। তবে ডিজিটাল রুপির উপর এই জাতীয় কোনও কর ধার্য করা হবে না, ঠিক যে ভাবে নগদ টাকার উপর কোনও কর ধার্য করা হয় না।
কোন কোন ব্যাঙ্কে পাওয়া যাবে ই-রুপি?
এক বিজ্ঞপ্তিতে আরবিআই জানিয়েছে ডিজিটাল রুপির পাইলট প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য তারা ৯টি ব্যাঙ্ককে চিহ্নিত করেছে। এগুলি হল স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ব্যাঙ্ক অফ বরোদা, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক, ইয়েস ব্যাঙ্ক, আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাঙ্ক এবং এইচএসবিসি।