কয়েক দিন হল টানা কমছে তেলের দাম। তারই মধ্যে আচমকা নতুন বিতর্ক মাথাচাড়া দিল পেট্রল-ডিজেলকে ঘিরে। সাধারণত পেট্রলের দাম ডিজেলের থেকে বেশি থাকে। অথচ ওড়িশায় শনিবার থেকে উলটপুরাণ। দেখা গেল দামের দৌড়ে ভুবনেশ্বরে ডিজেলই হারিয়ে দিয়েছে পেট্রলকে।
শনিবারই প্রথম সেখানে ডিজেলের থেকে পিছিয়ে গিয়েছিল পেট্রল। রবিবার লিটারে ডিজেল ও পেট্রলের দাম ছিল যথাক্রমে ৮০.৬৯ টাকা ও ৮০.৫৭ টাকা। সোমবারও ৮০.৪০ টাকা এবং ৮০.২৭ টাকা।
পাম্পে মানুষ যে তেল কেনেন, তার দাম ঠিক হয় জ্বালানি দু’টির মূল দামের উপরে কেন্দ্র ও রাজ্যের কর বসার পরে। অশোধিত তেলের দামের ওঠাপড়া অনুযায়ী বিশ্ব বাজারেও ওঠেনামে ডিজেল, পেট্রলের দর। আর মূলত সেই দামের প্রেক্ষিতেই ভারতে তেলের মূল দরের হিসেব কষা হয়। এখন বিশ্ব বাজারে পেট্রলের মূল দাম ডিজেলের চেয়ে বেশি হারে কমছে।
তার উপর তেল সংস্থাগুলির সূত্রের খবর, ডিজেলের জ্বালানি শক্তি বেশি বলে চাহিদাও বেশি। আবার অশোধিত তেল থেকে ডিজেল প্রক্রিয়াকরণের খরচও বেশি পড়ে। সব মিলিয়ে তার মূল দাম বেশি হয়।
কিন্তু গণপরিবহণ ও পণ্য পরিবহণের জন্য বাণিজ্যিক গাড়িগুলি ডিজেলে চলে বলে দেশের প্রায় সর্বত্র পাম্পে পেট্রলের চেয়ে ডিজেলকে কিছুটা সস্তা রাখার চেষ্টা করা হয়। তাই ডিজেলে কেন্দ্রীয় উৎপাদন শুল্ক ও রাজ্যের ভ্যাট কম বসে পেট্রলের থেকে। ওড়িশার ছবিটা উল্টে গিয়েছে
এই ভ্যাটের কারণেই। কারণ, শুধু ওড়িশা ও আন্দামান-নিকোবরে দুই জ্বালানিতে ভ্যাট সমান। যেমন পশ্চিমবঙ্গে পেট্রলে ২৫% ও ডিজেলে ১৭% ভ্যাট বসে। উৎকল পেট্রোলিমায় ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা সঞ্জয় লাল জানান, ওড়িশায় দু’টিতেই ওই হার ২৬%। ফলে দামের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটে গিয়েছে উলটপুরাণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ভুবনেশ্বরে ডিজেলের মূল দাম পেট্রলের চেয়ে প্রায় চার টাকা বেশি পড়ছে। আবার উৎপাদন শুল্ক ডিজেলে প্রায় চার টাকা কম। ফলে মূল দাম ও শুল্ক ধরে পেট্রলের চেয়ে ডিজেলে সামান্য বেশি হয়েছে দু’দিন আগেই। এর উপর ভ্যাট সমান হওয়ায় সেখানে ডিজেলের দাম এখন সামান্য বেশি। যখন দু’টি জ্বালানির মধ্যে মূল দামের ফারাক আরও কম ছিল, তখন ডিজেল কম উৎপাদন শুল্কের সুবিধা পাচ্ছিল বলে সস্তা ছিল। এখন সেই সুবিধার ফারাক মুছে যাচ্ছে বলে দাবি সঞ্জয়ের।
ওড়িশার অর্থমন্ত্রী এস বি বেহরার অবশ্য অভিযোগ, কেন্দ্রের ভ্রান্ত নীতির জন্যই দরে সমস্যা হচ্ছে। এর পিছনে কেন্দ্র ও তেল সংস্থাগুলির মধ্যে ‘কৌশলী’ আঁতাতের সম্ভাবনাও দেখছেন তিনি। কংগ্রেস নেতা আর্য জ্ঞ্যানেন্দ্র বলেন, ‘‘তেলের দাম, বিশেষত ডিজেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ অদক্ষ সরকার।’’ তাঁর দাবি, ২০১৪ সালে পেট্রলের মূল দাম ডিজেলের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। এনডিএ সরকার তা উল্টে দিয়েছে।
রাজ্যে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক
পৃথ্বীরাজ হরিচন্দনের পাল্টা দাবি, ‘‘১৩টি রাজ্য ভ্যাট কমালেও, ওড়িশা তা করেনি। তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানও ভ্যাট কমানোর আর্জি জানিয়েছেন।’’
পশ্চিমবঙ্গে ইন্ডিয়ান অয়েল ডিলার্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট জন মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘তেল জিএসটিতে এলে সর্বত্রই এক কর হবে।’’ এমনিতেই ওড়িশার চেয়ে এ রাজ্যে ডিজেল সস্তা হওয়ায় তাঁদের মতে, সেখানকার অনেক ট্রাকই এখানের পাম্পে তেল ভরাবে। তবে অনেকের মতে, পরিবহণ ব্যবস্থা যখন ডিজেলের উপরেই নির্ভরশীল, তখন তার দর পেট্রলকে ছাপালে বিতর্ক বাঁধবেই। তা যে রাজ্যেই হোক না কেন।