বিদ্যুতের চাহিদা হ্রাসের এই ছবি অপ্রত্যাশিত নয়।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাহিদার ধাক্কা প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার নেমেছে ছ’বছরের তলানিতে। শঙ্কা আরও বাড়িয়ে এ বার সারা দেশে সরাসরি কমল বিদ্যুতের চাহিদা। সেন্ট্রাল ইলক্ট্রিসিটি অথরিটির (সিইএ) তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে তা এক বছর আগের তুলনায় ১৩.২% কমেছে। চাহিদা হ্রাসের এই গতি গত ১২ বছরের দ্রুততম। এতটা না হলেও তার আগের দু’মাসেও বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে।
ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের বক্তব্য, অর্থনীতির যা পরিস্থিতি তাতে বিদ্যুতের চাহিদা হ্রাসের এই ছবি অপ্রত্যাশিত নয়। টানা দু’মাস শিল্পোৎপাদন সঙ্কুচিত হয়েছে। সেপ্টেম্বরে পরিকাঠামো উৎপাদনও সরাসরি কমেছে ৫.২%। যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। ফলে শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন কমলে বিদ্যুতের চাহিদাও যে কম হবে সেটাই তো স্বাভাবিক! বিশেষজ্ঞদের একাংশের ব্যাখ্যা, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কেন্দ্রের বিভিন্ন পদক্ষেপের সুফল যে স্বল্পমেয়াদে পাওয়া যাচ্ছে না, তা এক রকম স্পষ্ট। ফলে উৎসবের মরসুমের আগেও চাঙ্গা করা যায়নি শিল্পকে। বিদ্যুতের চাহিদা হ্রাসের মধ্যে আসলে তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। এই মাসের শেষে যখন দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের আর্থিক বৃদ্ধির ফলাফল বার হবে, সেখানও এর আংশিক প্রভাব দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।
কংগ্রেস টুইটারে লিখেছে, ‘‘উৎপাদন, কৃষি-সহ অর্থনীতির প্রায় সব ক্ষেত্রই সমস্যার মুখে। এই অবস্থায় বিদ্যুতের ব্যবহার কমার মধ্যে আশ্চর্যের কিছু নেই। বোঝাই যাচ্ছে যে, আমাদের অর্থনীতি আরও কঠিন সময়ের দিকে এগোচ্ছে।’’
সিইএ-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খেয়েছে শিল্পোন্নত রাজ্যগুলিতে। অক্টোবরে মহারাষ্ট্রে বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে ২২.৪%। গুজরাতে তা কমেছে ১৮.৮%। সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশের এই হার ৮.৩%। বস্তুত সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চারটি ছোট রাজ্যকে বাদ দিলে দেশের প্রায় সর্বত্র বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে।
চাহিদায় ধাক্কা
• অক্টোবরে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে ১৩.২%।
• এই পতন ১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড়।
• টানা তিন মাস কমল বিদ্যুতের চাহিদা।
• মহারাষ্ট্র ও গুজরাতের মতো শিল্পোন্নত রাজ্যে চাহিদা কমেছে সবচেয়ে বেশি।
উদ্বেগ
• বিদ্যুতের চাহিদা কমা শিল্প ক্ষেত্রের গতি মন্থর হওয়ার লক্ষণ।
• একেই বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী। এর মধ্যে বিদ্যুতের চাহিদাও কমলে তা আরও কমার আশঙ্কা।
২০২৪ সালের মধ্যে দেশের অর্থনীতিকে ৫ লক্ষ কোটি ডলারে নিয়ে যেতে চাইছে মোদী সরকার। তার জন্য উৎপাদন ক্ষেত্রের দিকে বেশি করে জোর দিতে চাইছে তারা। কিন্তু চাহিদা মন্থর হওয়ার বিরূপ প্রভাব সামগ্রিক ভাবেই পড়েছে শিল্পের উপরে। পাশাপাশি, কমেছে আর্থিক বৃদ্ধির হারও। অনেকে মনে করছেন, এই অবস্থায় বিদ্যুতের চাহিদার ছবি স্পষ্ট করল যে, উৎপাদন এবং তার কাঁধে ভর করে এখনই বৃদ্ধিতে গতি আসা কঠিন। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির অধ্যাপক এন আর ভানুমূর্তির কথায়, ‘‘অর্থনীতির এই মন্দগতির মূল অনেক গভীরে। বিশেষ করে শিল্প ক্ষেত্রে। এর ফলে চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার নিয়ে আশঙ্কা বাড়ল।’’ এই পরিস্থিতিতে পাঁচ বছরের মধ্যে ৫ লক্ষ কোটি ডলার অর্থনীতির স্বপ্ন ছোঁয়া সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই।