যে ভাবে করোনা-আতঙ্ক বাড়ছে, যে হারে একের পর এক দেশ বিদেশিদের ঢোকা বারণ করছে, তাতে দু’মাসের মধ্যে সব থেকে বেশি লোকসানের মুখে পড়বে বিমান পরিবহণ। দাবি আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহণের বিশেষজ্ঞ সংস্থা ক্যাপার। তাদের আশঙ্কা, এর জেরে বিশ্বের বেশ কিছু সংস্থা মুখ থুবড়ে পড়বে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, এতে থাকতে পারে ভারতের একাধিক সংস্থাও।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, এমনিতেই গত বছর ধারের ধাক্কা ও সুষ্ঠু পরিচালনার অভাবে উড়ান বন্ধ করেছে জেট এয়ার। এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, গো, এয়ারএশিয়া ইন্ডিয়া, বিস্তারার মতো সংস্থাও লোকসানে চলছে (চলতি অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিকের ফল অনুযায়ী)। তার উপরেই এ বার কামড় বসিয়েছে করোনা।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এগুলির মধ্যে একমাত্র এয়ার ইন্ডিয়াই সরকারি সাহায্য পেতে পারে। তবে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলেও কেন্দ্রকেই এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের দাবি, ‘‘কেন্দ্রের উচিত বিমান জ্বালানিতে কর তোলা। এতে ক্ষতির মুখে স্বস্তি পাবে সংস্থাগুলি। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ পরিষেবার বিনিময়ে তাদের থেকে যে টাকা নেয়, তা-ও এই পরিস্থিতিতে কিছু দিনের জন্য মকুব করলে সুরাহা হতে পারে।’’ সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা, তা না হলে জেটের মতোই হাল হবে অনেকের।
আশঙ্কা, ঘরোয়া যাত্রী জুনের মধ্যে আরও ৫০% কমতে পারে। এই লোকসান তারা খানিকটা পুষিয়ে নিতে পারত আন্তর্জাতিক উড়ান চালিয়ে। কিন্তু ১২ মার্চ বিদেশিদের ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্র। ফলে, একের পর এক আন্তর্জাতিক উড়ান বাতিল করছে তারা। বসে যাচ্ছে বিমান। অথচ ভাড়া নেওয়া এই প্রতিটি বিমানের জন্যই টাকা গুনতে হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি বছরেই মার্চের পর থেকে যাত্রী বাড়ে গড়ে প্রায় ১৬-২৩ শতাংশ। কিন্তু এ বার যাঁরা আগে থেকে টিকিট কেটে রেখেছিলেন, তাঁদের সিংহভাগ তা বাতিল করছেন। পরিস্থিতির চাপে সামান্য টাকা কেটে বাকিটা ফেরাতে বাধ্য হচ্ছে সংস্থা। ফলে লোকসান বাড়ছে। যে ক’টি উড়ান চালাচ্ছে, সেখানেও যাত্রী প্রায় ৫০%। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত, ৮০-৮৫ শতাংশ যাত্রী না পেলে উড়ানের খরচ ওঠে না। অর্থাৎ, প্রতিটিতেই বিপুল লোকসান।
সারা বিশ্বেই ছবিটা ভয়াবহ। ইতিমধ্যেই ইউরোপের উড়ান সংস্থা ফ্লাইবি দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। ক্যাপা-র আশঙ্কা, করোনার জেরে সেই পথে হাঁটতে পারে আরও সংস্থা। অনেকের রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। চুক্তির টাকা বাকি। মার্কিন সংস্থা ডেলটা ৪০% উড়ান বাতিল করেছে।