আর্থিক নীতি ঘোষণা করছেন আরবিআই গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। ছবি: পিটিআই
প্রধানমন্ত্রীর দাবি ছিল, করোনার ধাক্কা থেকে অর্থনীতিকে বার করে আনতেই ২০ লক্ষ কোটি টাকার ত্রাণ প্রকল্প এনেছে কেন্দ্র। কিন্তু প্রকল্প খতিয়ে দেখে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, এতে এমন কিছু নেই, যা লকডাউনের জেরে সমস্যায় পড়া অর্থনীতির চাকা চটজলদি ঘোরাতে পারবে। কিছু প্রস্তাব দীর্ঘ মেয়াদে ফল দিতে পারে ঠিকই। তবে তার জন্য দ্রুত মাঠে নামতে হবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে। কমাতে হবে রেপো রেট। কারণ, প্রকল্পের সিংহভাগের সাফল্যই নির্ভর করছে ব্যাঙ্ক ঋণের উপর। শুক্রবার সেই কাজটাই করলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। এক ধাক্কায় সুদ ছাঁটলেন ৪০ বেসিস পয়েন্ট। আরও বাড়ালেন মেয়াদি ঋণে মোরাটোরিয়ামের সময়সীমাও।
পদক্ষেপ করতে সময় নষ্ট না-করে নির্দিষ্ট দিনের থেকে ঋণনীতির পর্যলোচনা এগিয়ে এনেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। এর আগে মার্চেও একই ভাবে তা এগিয়েছিল তারা। সে বার সুদ ছাঁটাই করা হয়েছিল ৭৫ বেসিস পয়েন্ট। ফলে দু’মাসের মধ্যেই রেপো কমল মোট ১১৫ বেসিস পয়েন্ট। আজকের পরে তা দাঁড়াল ৪ শতাংশে। ২০০০ সালে রেপো রেট ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরে তার হার সর্বনিম্ন। আর রিভার্স রেপো (ব্যাঙ্কগুলির থেকে যে সুদে ধার নেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক) দাঁড়িয়েছে ৩.৩৫%।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্র যে ত্রাণ ঘোষণা করেছে, তাতে আমজনতা বা সংস্থাকে সরাসরি আর্থিক সাহায়তা দেওয়ার প্রস্তাবই নেই। প্রায় সব প্রস্তাব কার্যকর করার বিষয়টি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ব্যাঙ্ক ঋণের উপরে। ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেন বলেন, ‘‘প্রস্তাবগুলি সফল করতে কম সুদে ও সহজ শর্তে ব্যাঙ্ক ঋণের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যেই সুদ কমানো হয়েছে বলে ধারণা।’’ আজ শক্তিকান্তও কার্যত কবুল করেছেন সেই কথা। আর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের দাবি, এই সিদ্ধান্ত ভেবেচিন্তে নেওয়া। এতে ঋণের চাহিদা বাড়বে।
তবে অনেকের মতে, শুধু সুদ কমালেই দেশের আর্থিক হাল ফিরবে, তা ভাবা ঠিক নয়। ব্যাঙ্কে সুদ কমলেও ঋণের চাহিদা কতটা বাড়বে, তা নিয়ে সংশয়ী ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি দেবব্রত সরকার। তিনি বলেন, ‘‘এখন দরকার বাজারে চাহিদা বাড়ানোর ব্যবস্থা করা। না-হলে কোনও সংস্থা ঋণ নিয়ে উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহী হবে বলে মনে হয় না।’’
ঘোষণা
• রেপো রেট ৪০ বেসিস পয়েন্ট কমে ৪%।
• রিভার্স রেপো রেট একই হারে কমে ৩.৩৫%।
• মেয়াদি ঋণের মোরাটোরিয়ামের সময়সীমা আরও তিন মাস বেড়ে ৩১ অগস্ট পর্যন্ত।
• কার্যকরী মূলধন বাবদ নেওয়া ঋণে সুদ দেওয়ার জন্য সংস্থাগুলিকে ৩১ অগস্ট পর্যন্ত সময় দিতে ব্যাঙ্ককে সায়।
• ৩১ জুলাইয়ের আগে করা আমদানির ক্ষেত্রে টাকা মেটানোর সময় ৬ মাস থেকে বাড়িয়ে ১২ মাস।
• রফতানির জন্য নেওয়া ঋণের সর্বোচ্চ মেয়াদ
১২ থেকে বেড়ে ১৫ মাস।
• এগ্জিম ব্যাঙ্ককে ১৫,০০০ কোটি টাকার ধারের সুবিধা।
• এ ছাড়া লেনদেন আরও সরল করতে নানা পদক্ষেপ।
বৃদ্ধি শূন্যের নীচে
• অর্থবর্ষের শেষ দিকে কিছুটা মাথা তুললেও, করোনার ধাক্কায় সব মিলিয়ে চলতি অর্থবর্ষে জিডিপি থাকার আশঙ্কা শূন্যের নীচে।
• দেশের কল-কারখানায় উৎপাদনের প্রায় ৬০% যে ছ’টি রাজ্যে হয়, তাদের প্রত্যেকটিই হয় রেড বা অরেঞ্জ জ়োনের অন্তর্গত।
• মার্চের শুরু থেকে স্পষ্ট চাহিদায় ধাক্কার ছবি।
• প্রথমে যা ভাবা হয়েছিল, করোনার জেরে তার থেকেও আরও বেশি ক্ষতি হয়েছে অর্থনীতির।
• কৃষি বাদে আগামী ক’মাস অন্যান্য ক্ষেত্রে ধাক্কা বহাল।
• অনিশ্চয়তা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে।
ঋণে মোরাটোরিয়াম প্রসঙ্গে স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান রজনীশ কুমার বলেন, ‘‘অনেকেই অর্থের অভাবের জন্য মোরাটোরিয়াম নিয়েছেন, তা নয়। পরিস্থিতির সুবিধা নিতে এই পথে হেঁটেছেন।’’ অবশ্য সুদের হার কমলে বাড়ি, ফ্ল্যাট, গাড়ি বা ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়বে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। তবে সে জন্য ব্যাঙ্কগুলিকে সুদ কমার সুবিধা দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দাবি করেছে গাড়ি ও আবাসন সংস্থাগুলি। সুদ কমানোর প্রস্তাবে খুশি হলেও বণিকসভাগুলির মতে, অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে আরও ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।