চাহিদায় ভাটা। তাই জোয়ার নয় জোগানেও। কম বিক্রিবাটার এই বাজারে সাবধানে পা ফেলছে নির্মাণ শিল্প। বিক্রির হার ১১ শতাংশ কমেছে। তা সত্ত্বেও নতুন প্রকল্প ঘোষণার হার তলানিতে ঠেকেছে।
চলতি বছরের প্রথম ছ’মাসে নতুন প্রকল্প ঘোষণার হার ৪১ শতাংশ কমেছে। গত সাত বছরে শিল্পের সবচেয়ে বেহাল অবস্থাই ধরা পড়েছে এই পরিসংখ্যানে। আবাসন সংস্থাগুলির দাবি, যা পড়ে রয়েছে তা বিক্রি না-হলে, নতুন প্রকল্পে টাকা আটকে রেখে লাভ নেই।
তবে এরই মধ্যে হাল ধরেছে কম দামি আবাসন। মোট নতুন প্রকল্পের ৭১ শতাংশই কম দামি আবাসনের দখলে। এক বছর আগেও যা ছিল ৫২ শতাংশ। বিশেষজ্ঞ সংস্থা নাইট ফ্র্যাঙ্কের সমীক্ষায় উঠে এসেছে এই তথ্য। দেশ জুড়েই যেটুকু বিক্রি হচ্ছে, তা মূলত কম দামি আবাসন প্রকল্প। কলকাতা, দিল্লি, পুণে, আমদাবাদে সর্বত্রই ছবিটা একই। এই চার শহরে নতুন প্রকল্পের ৮০ শতাংশই কম দামি। সংস্থার অর্থনীতিবিদ স্যমন্তক দাস বলেন, ‘‘দামি বাড়ির বাজারে মন্দা এখনও কাটেনি। টিকে থাকতে কম দামি বাড়ির বাজারের উপরই ভরসা রাখছে নির্মাণ শিল্পমহল।’’
বাজারের চাহিদা বুঝে ছোট-বড় সব সংস্থাই কম দামি আবাসন তৈরি করতে ঝাঁপাচ্ছে বলে দাবি নির্মাণ শিল্পমহলের। ক্রেডাই বেঙ্গলের কর্তা নন্দু বেলানিও জানান, চলতি বছরে এ ধরনের প্রকল্প ঘোষণার সংখ্যা বাড়তে বাধ্য। কম দামি বাড়ি তৈরির দিকে নজর দিচ্ছে জাতীয় স্তরের নির্মাণ সংস্থাগুলিও। কারণ পুঁজি দ্রুত ফেরত পেতে এ ধরনের আবাসনই ভরসা বলে জানান স্থানীয় নির্মাণ সংস্থা ইডেন রিয়্যাল্টির কর্তা সচ্চিদানন্দ রাই। সেই আশাতেই উত্তর শহরতলিতে নতুন প্রকল্প ঘোষণা করেছেন জিএসটি চালুর পরেও।
গত ছ’মাসে দেশের আটটি শহরেই ফ্ল্যাট বিক্রি ধাক্কা খেয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি মার খেয়েছে দিল্লি ও কলকাতা। দিল্লিতে বিক্রি কমেছে ২৬ শতাংশ। কলকাতায় ২২ শতাংশ। শুধু বিক্রিই নয়। অবিক্রীত ফ্ল্যাটের সংখ্যাও লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে কলকাতা ও দিল্লিতে। কলকাতায় এখন পড়ে থাকা ফ্ল্যাটের সংখ্যা ৩৯,১১৪। চাহিদার যা বহর, তাতে তাতে তা বিক্রি হতেই লাগার কথা আড়াই বছরের মতো। দিল্লির অবস্থা আরও খারাপ। যা ফ্ল্যাট পড়ে রয়েছে, তা বিক্রি করতে লাগবে সম্ভবত সাড়ে চার বছর।
আর এই তলানিতে ঠেকা বাজার চাঙ্গা করতেই ছাড়ের টোপ দিচ্ছে নির্মাণ শিল্প। কোথাও একটা কিনলে একটা ফ্রি, তো কোথাও লক্ষাধিক টাকার ক্যাশ ব্যাক। মোটা অঙ্কের ছাড়। নোট সঙ্কটের জের কাটিয়ে ছন্দে ফিরতে এই মুহূর্তে ছাড়ই হাতিয়ার তাদের।