প্রতীকী ছবি।
গৌতম আদানি যে ভাবে এনডিটিভি-কে কিনতে ঝাঁপিয়েছেন, তাকে আগ্রাসী অধিগ্রহণের চেষ্টা বলেই দাবি করছে সংশ্লিষ্ট মহল। বুধবার বিষয়টি নিয়ে তোপ দাগল কংগ্রেস। আদানি প্রসঙ্গে নিশানা করল নরেন্দ্র মোদীকেও। তাদের কটাক্ষ, প্রধানমন্ত্রীর ‘বিশেষ বন্ধুর’ সংস্থা জোর-জবরদস্তি করে সংবাদ চ্যানেলটিকে কিনে নিতে চাইছে। যা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা এবং তাদের কণ্ঠরোধের নির্লজ্জ চেষ্টা। স্বাধীনতায় কোপ পড়া এবং ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংস্থার কর্মীরাও।
একাংশের দাবি, বিভিন্ন সময় সরকারের নীতিকে সমালোচনা করতে দেখা যায় নিউ দিল্লি টেলিভিশনকে (এনডিটিভি)। অন্য দিকে বিরোধীরা বলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া ইস্তক নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানি। গত কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বের সব থেকে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় যাঁর নাম উঠেছে। সেই আদানিরই এনডিটিভি-কে জোর করে কেনার চেষ্টা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে তারা। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, অধিগ্রহণে সফল হলে সংবাদ চ্যানেলটির কর্মকাণ্ডে নীতিগত কোনও পরিবর্তন হয় কি না, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
ঘটনাটি কী
• ইন্ডিয়াবুল্সের ঋণ মেটাতে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক থেকে ১৯% সুদে ধার নিয়েছিল আরআরপিআর হোল্ডিং। যাদের হাতে এনডিটিভি-র ২৯.১৮%।
• আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের ঋণ শোধের জন্য ২০০৯ সালে বিনা সুদে ৩৫০ কোটি টাকা ধার নেওয়া হয় বিশ্বপ্রধান কমার্শিয়ালের (ভিসিপিএল) থেকে।
• পরে ভিসিপিএল-এর থেকে তোলা হয় আরও ৫৩.৮৫ কোটি।
• এই ধারের বদলে ভিসিপিএল-কে ওয়ার্যান্ট ইসু করে আরআরপিআর।
• বলা হয়, ঋণের মেয়াদের মধ্যে বা তার পরে ওয়ার্যান্টকে ইকুইটি শেয়ারে বদলাতে পারবে বিশ্বপ্রধান। নিতে পারবে আরআরপিআর-এর ৯৯.৯৯% অংশীদারি।
• মঙ্গলবার আদানি গোষ্ঠী এই বিশ্বপ্রধানকেই কিনে নেয়।
• এর পরে এনডিটিভি-কে না-জানিয়ে ওয়ার্যান্টকে শেয়ারে বদলে নেয় আদানিরা। হাতে আসে চ্যানেলটির ২৯.১৮%।
• খোলা বাজার থেকে আরও ২৬% কিনতে শেয়ার পিছু ২৯৪ টাকা দরও ঘোষণা করে তারা।
কংগ্রেসের জেনারাল সেক্রেটারি জয়রাম রমেশ এ দিন টুইটে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর ‘খাস বন্ধুর’ ঋণে ডুবে থাকা সংস্থার একটি পরিচিত সংবাদের চ্যানেলকে কিনে নেওয়ার খবর অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হওয়া ছাড়া কিচ্ছু নয় এবং এই ধরনের স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ ও তাদের কণ্ঠরোধের নির্লজ্জ চেষ্টা।’’ যে ভাবে এনডিটিভিকে দেওয়া ঋণকেই হাতিয়ার করে অধিগ্রহণের ঘুঁটি সাজিয়েছে আদানিরা, তা যথেষ্ট ‘রহস্যময়’ বলেও দাবি করেন রমেশ।
মঙ্গলবার আচমকাই এনডিটিভি-র ২৯.১৮% অংশীদারি পরোক্ষ ভাবে হাতে এসেছে বলে জানায় আদানি গোষ্ঠীর সংস্থা। তার পরে সে দিনই বাজার থেকে আরও ২৬% শেয়ার কিনতে ৪৯৩ কোটি টাকার খোলা প্রস্তাব দেয়। ফলে এনডিটিভি-র ৫৫% অংশীদারি দখল করে যে তারা সংবাদ সংস্থাটির রাশ হাতে নিতে মরিয়া সেটা স্পষ্ট হয়। এনডিটিভি-র অভিযোগ, সংস্থা কিংবা তার প্রতিষ্ঠাতা-প্রোমোটার রাধিকা এবং প্রণয় রায়ের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই এগিয়েছে আদানি গোষ্ঠী।
আগামী দিনে এনডিটিভি-র স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারা নিয়ে এ দিন দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেন রাজ্যসভার সাংসদ কপিল সিবলও। তবে একাংশের মতে, এটাও আসলে মুকেশ অম্বানী আর গৌতম আদানির দ্বৈরথ। তেল, বিকল্প বিদ্যুতের পরে তাঁদের লড়াইয়ের ময়দান এ বার সংবাদমাধ্যম। মুকেশ হাজির নেটওয়ার্ক ১৮ নিয়ে। সিএনএন-নিউজ় ১৮, সিএনবিসি-টিভি ১৮-সহ একগুচ্ছ চ্যানেল তাঁর হাতে। এ বার এনডিটিভি ২৪x৭, এনডিটিভি ইন্ডিয়া, এনডিটিভি প্রফিটের মতো সংস্থা নিয়ে তাঁকে টক্কর দিতে চান আদানি।