গৃহস্থের জ্বালানি ১৪.২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার আরও ৫০ টাকা বেড়েছে। কলকাতায় তা এখন ১১২৯ টাকা। ফাইল ছবি।
উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যে ভোটদানপর্ব মেটায় রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানো হল— বুধবার মোদী সরকারকে তাক করে প্রত্যাশা মাফিকই এই আক্রমণ শানাল বিরোধীরা। এ দিন থেকে গৃহস্থের জ্বালানি ১৪.২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার আরও ৫০ টাকা বেড়েছে। কলকাতায় তা এখন ১১২৯ টাকা। হোটেল-রেস্তরাঁয় ব্যবহৃত ১৯ কেজির বাণিজ্যিক সিলিন্ডার ৩৫২ টাকা বেড়ে হয়েছে ২২২১.৫০ টাকা। কংগ্রেসের কটাক্ষ, দেশবাসীর জন্য এটা বিজেপি সরকারের ‘হোলির উপহার।’ কেন্দ্রে ক্ষমতায় ফিরলে গৃহস্থকে ৫০০ টাকায় গ্যাস দেবে বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে তারা।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, পরের বছর লোকসভা ভোট। তার প্রচারে আদানি কাণ্ডের পাশাপাশি গ্যাসের দামকেও যে হাতিয়ার করবে বিরোধীরা, সেটা স্পষ্ট। ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ডে ভোটদান শেষ হতেই গ্যাসের দাম বাড়ায়, ভোটের সমীকরণ অনুযায়ী দাম কমানো-বাড়ানোর প্রসঙ্গও তুলবে। শেষ বার গৃহস্থের সিলিন্ডার দামি হয়েছিল গত ৬ জুলাই। কোচবিহারের তুফানগঞ্জে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অবশ্য বলেন, ‘‘১৯২টি দেশে গ্যাসের দাম বেড়েছে। কোথাও দ্বিগুণ হয়েছে। ভারতে দাম বেড়েছে প্রায় এক বছর পরে।’’
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, উজ্জ্বলা যোজনার গ্যাস বাদে বাকি সমস্ত এলপিজি সিলিন্ডারে মানুষ কোথাও ভর্তুকি পান না, কোথাও তা নামমাত্র। এসইউসি-র সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষের দাবি, ‘‘কেন্দ্র বাজেটে রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি ৭৫% তুলে দেওয়ার কথা বলেছে। সেই প্রেক্ষিতে এই মূল্যবৃদ্ধি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং মানুষকে সরকারের এমন জন-বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলনে শামিল হওয়ার আবেদন করছি।’’
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের টুইট, ‘‘এখন হোলির খাবার তৈরি হবে কী ভাবে? আর কত দিন এই লুট চলবে? মোদী জমানায় মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কায় মানুষের কোমর ভেঙে যাচ্ছে।’’ দলের মুখপাত্র গৌরব বল্লভ বলেন, ‘‘কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি, ২০২৪ সালে দল ক্ষমতায় আসলে গৃহস্থের রান্নার গ্যাসের দাম ৫০০ টাকার বেশি হবে না।’’ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও মনে করিয়েছেন, ২০১৪-এ ৮২৭ টাকা ভর্তুকি থাকায় ১৪.২ কেজির সিলিন্ডারে ৪১০ টাকা গুনতে হত। এখন ভর্তুকি শূন্যে ঠেকেছে। তাঁর টুইট, ‘‘কংগ্রেস আমলে ভর্তুকির সাহায্যে সুরাহা দেওয়া হত, ‘মিত্র কালে’ পকেট কাটা হচ্ছে। দেশের সম্পত্তি সস্তায় বিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে ‘মিত্র’কে।’’
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, বিজেপি সরকারে আসার আগের আর এখনকার দামের ফারাক বিপুল। জ্বালানির দর জন-জীবনকে দুর্বিষহ করেছে। চড়া মূল্যবৃদ্ধির আবহে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে সিপিএমের পলিটব্যুরো। তথ্য পেশ করে সিপিএম বলেছে, গত বছর উজ্বলা যোজনায় ১০ শতাংশের বেশি গ্রাহক দ্বিতীয় বার ভরা সিলিন্ডার নেননি। একটি নিয়েছেন ১২%। দামে পোষাতে না পেরে আরও বেশি মানুষ ভর্তুকি ব্যবস্থার বাইরে চলে যাবেন।
বিরোধী দলের নেতা অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘তিন রাজ্যে ভোট মিটতেই আবার দাম বাড়াল। এই সরকার আগেও এমন করেছে। তেল, গ্যাস, সার, সমস্ত কিছুর দাম বাড়ছে। মানুষের খরচ বাড়ছে, পকেটে টাকা নেই। দেশ জুড়ে মূল্যবৃদ্ধি।’’