গৌতম আদানি। —ফাইল চিত্র।
মুম্বইয়ের ধারাভি বস্তির পুনর্গঠন প্রকল্পের বরাত পেয়েছে আদানি গোষ্ঠীর সংস্থা আদানি প্রপার্টিজ়। এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মহারাষ্ট্র সরকারকে আক্রমণ করল কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ, আদানি গোষ্ঠীকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য প্রকল্পের যোগ্যতার মাপকাঠি বদলানো হয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির সরকারকে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ‘বন্ধু পুঁজিপতিদের’ এটিএম হিসেবে। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, গত জানুয়ারি থেকে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট নিয়ে মোদী সরকার এবং শিল্পপতি গৌতম আদানির উদ্দেশে আক্রমণ শানিয়ে চলেছে বিরোধীরা। এ বার ধারাভিকেও নতুন অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগাতে চাইবে তারা।
ধারাভির প্রস্তাবিত প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরেই আটকে ছিল। অবশেষে গত নভেম্বরে আর্থিক দরপত্রের কাজ শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে আটটি সংস্থা থাকলেও চূড়ান্ত দৌড়ে ছিল তিনটি। ডিসেম্বরে দরপত্রের প্রক্রিয়ার পরে জানা যায় আদানি গোষ্ঠীর হাতে যেতে চলেছে বরাত। গত বৃহস্পতিবার মহারাষ্ট্রের আবাসন দফতর জানায়, সেই ফলাফলে সম্মতি দিয়েছে রাজ্যের মন্ত্রিসভা। প্রকল্পের জন্য একটি বিশেষ সংস্থা (স্পেশাল পারপাস ভেহিকল) গঠন করা হবে। তার প্রধান অংশীদার হবে আদানি প্রপার্টিজ়।
এই ঘটনার পরেই প্রকল্পের বরাত দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি তুলেছে কংগ্রেস। দলের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশের অভিযোগ, আবাসন দফতর হাতবদলের আগে ৫০৬৯ কোটি টাকার ধারাভি পুনর্গঠন প্রকল্পের বরাত মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীস দিয়েছেন আদানি গোষ্ঠীকে। প্রায় ৬০০ একর জমিতে গড়ে উঠতে চলা প্রকল্পের বরাতও দেওয়া হয়েছে ‘অস্বচ্ছ’ উপায়ে। প্রথমে প্রকল্পের বরাত অন্য একটি সংস্থার পাওয়ার কথা ছিল এবং তাদের সরিয়ে তা আদানিদের দেওয়ার জন্য যোগ্যতার মাপকাঠিতে বদল আনা হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘‘অনিয়মের জন্য প্রথম দরপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ার পরে শিন্দে-ফড়ণবীস সরকার অদ্ভুত ভাবে দরপত্রের শর্তই বদলে ফেলে, যাতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ঘনিষ্ঠতম বন্ধুর জয় নিশ্চিত করা যায়।’’ রমেশের ব্যাখ্যা, আগে দরপত্রের শর্ত ছিল সংশ্লিষ্ট সংস্থার হাতে ন্যূনতম ১০,০০০ কোটি টাকার সম্পদ থাকতে হবে। আগের জয়ীকে বাদ দেওয়ার জন্য সেই মাপকাঠি বাড়িয়ে ২০,০০০ কোটি টাকা করা হয়। নগদের সমস্যায় জর্জরিত আদানি গোষ্ঠীর সুবিধার জন্য দরপত্রের টাকা কিস্তিতে দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়। কংগ্রেস নেতার আরও অভিযোগ, জমির দামের মূল্যায়ন ছাড়াই প্রকল্পের স্বত্ব বিক্রি করা হচ্ছে আদানি গোষ্ঠীকে। আবার পুনর্গঠিত ধারাভির অন্তত ৫০% তাদের থেকে কিনেও নেবে সরকার। ফলে কার্যত পড়ে পাওয়া নগদ আসবে আদানিদের হাতে।
ধারাভি প্রকল্প থেকে সংশ্লিষ্ট সংস্থার ২০,০০০ কোটি টাকা পর্যন্ত আয় হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা। কারণ, পুনর্গঠন এবং বণ্টনের পাশাপাশি, আবাসিক এবং বাণিজ্যিক জমির একটি বড় অংশ বিক্রিরও সুযোগ থাকবে তাদের হাতে। প্রাথমিক ভাবে আটটি সংস্থা আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। দরপত্রের চূড়ান্ত দৌড়ে আদানি প্রপার্টিজ় ছাড়াও ছিল ডিএলএফ এবং নমন ডেভেলপারস।