গত মাসে শুধু আনাজের দামই বেড়েছে ৪২ শতাংশের বেশি হারে। —ফাইল চিত্র।
গোটা দেশ যখন খুচরো বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমার অপেক্ষায় দিন গুনছে, তখন অক্টোবরে মূল্যবৃদ্ধির হার ফের ৬% পেরিয়ে গেল। অর্থাৎ শীর্ষ ব্যাঙ্কের বাঁধা ৬ শতাংশের সর্বোচ্চ সহনসীমা পার করে আবার ঢুকে পড়ল বিপদসীমার মধ্যে। ৬.২১% ছুঁয়ে হল ১৪ মাসে সব থেকে বেশি। ১১ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছল শুধু খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। দেখা গেল, গত মাসে শুধু আনাজের দামই বেড়েছে ৪২ শতাংশের বেশি হারে। সেপ্টেম্বরে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৫.৪৯% আর আগের বছরের অক্টোবরে ৪.৮৭%।
তবে মঙ্গলবার শুধু মূল্যবৃদ্ধি নয়, অর্থনীতি নিয়ে চিন্তা বাড়িয়েছে দেশের শিল্পোৎপাদনও। অগস্টের (-০.১%) মতো সেপ্টেম্বরে তা সরাসরি কমে যায়নি বটে। কিন্তু শিল্পবৃদ্ধির হার থমকে গিয়েছে মাত্র ৩.১ শতাংশে। যেখানে গত বছর ওই সময় তা ছিল ৬.৪%। একাংশের দাবি, দেশ জুড়ে আর্থিক কর্মকাণ্ড পুরোপুরি চালু হওয়ার পরেও শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির হার এতটা শ্লথ হওয়া অর্থনীতির সাময়িক ঝিমুনির ইঙ্গিত হতে পারে।
পটনা আইআইটির অর্থনীতির অধ্যাপক রাজেন্দ্র পরামানিক বলেন, ‘‘শিল্পোৎপাদন অগস্টের সঙ্কোচন কাটিয়ে সেপ্টেম্বরে বৃদ্ধিতে ফিরেছে ঠিকই। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি ফের মাথাচাড়া দেওয়ায় উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধির আশঙ্কাও থাকছে। ভাটা পড়তে পারে বিক্রিবাটায়। তাই শিল্পের ঝিমুনি নিয়ে আশঙ্কা আপাতত কাটছে না।’’
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, চড়া সুদে কাহিল বহু সাধারণ ঋণগ্রহীতা। শিল্পও লগ্নির ঝুলি উপুড় করার জন্য সুদ কমার অপেক্ষায়। কারণ, তাতে ধার করে তহবিল জোগাড়ের খরচ কমবে। কিন্তু মঙ্গলবার মূল্যবৃদ্ধিকে চড়তে দেখে বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, এখন আর সুদ কমানোর ঝুঁকি নেবে না রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক।
এ দিন অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার বলেন, ‘‘খাদ্যপণ্যের দাম বেশ কিছু দিন ধরে চড়া। তাই খুচরো মূল্যবৃদ্ধি যে মাথা তুলবে বোঝা যাচ্ছিল। ফলে এই মুহূর্তে সুদ কমার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। শীতের ফসল উঠলে খাদ্যপণ্যের সূচকের নীচে নামার সম্ভাবনা। তার হাত ধরে মাথা নামাতে পারে মূল্যবৃদ্ধি। তখন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ ছাঁটার কথা ভাবতে পারে।’’
অভিরূপবাবুর সঙ্গে একমত অর্থনীতিবিদ অজিতাভ রায়চৌধুরী। তাঁর মতে, ‘‘খুচরো মূল্যবৃদ্ধির চালিকা শক্তি এখন খাদ্যপণ্যের দাম। তাই সেগুলির দাম কমাতে শুধু প্রকৃতির উপর নির্ভর করে থাকলে চলবে না। সরকারকে খাদ্যশস্যের মজুত বাড়াতে তার পরিকাঠামো উন্নত করতে হবে। সেই সঙ্গে এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে চাষির উৎপাদিত শস্য সরাসরি মজুত ভান্ডারে পৌঁছে যায়।’’ তবে টাকার দাম কমায় আমদানি করা ভোজ্য তেল, ডালের মতো জরুরি খাদ্যপণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাঁর। সতর্কবার্তা, ‘‘এতে মূল্যবৃদ্ধি আরও চড়তে পারে। সব মিলিয়ে দেশে সুদের হার কমার সম্ভাবনা আপাতত অনেকটাই ফিকে।’’
দামে দুশ্চিন্তা
অক্টোবরের মূল্যবৃদ্ধির হার ১৪ মাসে সর্বোচ্চ।
ফের তা পেরিয়েছে আরবিআইয়ের বাঁধা সর্বোচ্চ ৬% সহনসীমা।
খাদ্যপণ্যের ১০.৮৭% মূল্যবৃদ্ধিই এর প্রধান কারণ। তা সেপ্টেম্বরে ছিল ৯.২৪%, আগের বছরের অক্টোবরে ৬.৬১%।
গ্রামাঞ্চল এবং শহরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার যথাক্রমে ৬.৬৮% এবং ৫.৬২%।
কেন্দ্রের দাবি, ডাল, ডিম, চিনি, বিস্কুট, মশলা ইত্যাদির মূল্যবৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো কমেছে। তবে আনাজ, ফল, ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে বিপুল।