প্রতীকী ছবি।
কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড (ইপিএফ) আইন সংশোধন করতে কোমর বেঁধেছে কেন্দ্র। তবে সূত্রের খবর, সেই সংশোধনী প্রস্তাবে আদতে রয়েছে কর্মীদের বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা কাটছাঁট করার কথা। যা নিয়ে কথা বলতে আজ, মঙ্গলবার মালিক পক্ষ ও ১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নকে বৈঠকে ডেকেছেন কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ার। যদিও ১০টির মধ্যে ৯টি ইউনিয়নই ওই সব প্রস্তাব সম্পর্কে নিজেদের ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বৈঠক বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের অভিযোগ, এগুলি কার্যকর হলে চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কর্মীরা।
এখন গুটিকয়েক শিল্প ছাড়া বাকি সব জায়গাতেই কর্মীদের বেতন থেকে ১২% কেটে ইপিএফ খাতে জমা দেওয়া হয়। একই পরিমাণ টাকা জমা দেন সংস্থা কর্তৃপক্ষও। কেন্দ্র পিএফ আইন বদলের যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে ওই ১২ শতাংশই কমিয়ে ১০% করার কথা বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সংশোধনী কার্যকর হলে ভবিষ্যতে সরকার স্রেফ বিজ্ঞপ্তি জারি করেই প্রভিডেন্ট ফান্ড খাতে দেয় টাকার অঙ্ক পরিবর্তন করতে পারবে। যে কোনও সময়। সে জন্য এখনকার মতো পিএফ আইন সংশোধন করতে হবে না।
এআইইউটিইউসির সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর সাহা বলেন, ‘‘পিএফ কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা দেয়। সেটিকে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে। এতে কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সুবিধা হবে মালিক পক্ষের। এর তীব্র বিরোধীতা করে বৈঠক বয়কট করেছি।’’ সিটুর সাধারণ সম্পাদক তপন সেনেরও অভিমত, ‘‘সংশোধনীর মাধ্যমে কেন্দ্র নিজের হাতে পিএফ আইন বদলের ক্ষমতা চাইছে। এটা মানা যায় না।’’
সংশোধনের প্রস্তাব
• ইপিএফ বাবদ দেয় টাকা বেতনের ১২% থেকে কমে হোক ১০%।
• বেতন হিসেব হোক বেসিক (মূল বেতন), ডিএ (মহার্ঘভাতা) ও রিটেইনিং অ্যালাওয়েন্স (যদি থাকে) নিয়ে।
• পিএফ হিসেবের জন্য মোট মূল বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে কর্মীর ছুটিতে থাকা দিনগুলি বাদ যাক। এখন সাধারণ ছুটি ও বিধিবদ্ধ ছুটিতে (ক্যাজুয়াল লিভ, বার্ষিক ছুটি, অসুস্থতাজনিত ছুটি) মেলা বেতন ধরা হয়।
• কেন্দ্র চাইলেই যেন বিজ্ঞপ্তি জারি করে যে কোনও সময়ে পিএফ খাতে কর্মী ও সংস্থার দেয় টাকার পরিমাণ বদলাতে পারে। এখন এটা করার জন্য পিএফ আইন সংশোধন করতে হয়।
• সংস্থা কর্তৃপক্ষ পিএফের টাকা জমা, হিসেব বা অন্য ভুল করলে অভিযোগ জানানোর সময়সীমা হোক সর্বোচ্চ পাঁচ বছর।
• কর্মীদের সামনে পিএফের বদলে এনপিএস বাছার সুযোগ খোলা হোক।
আশঙ্কা
• সংশোধন কার্যকর হলে পিএফে জমা পড়বে আগের থেকে কম টাকা।
• ফলে অবসরের পরে কমতে পারে কর্মীদের আয়।
• ভবিষ্যতে চাইলে সহজেই পিএফ খাতে দেয় টাকার পরিমাণ কমাতে পারবে সরকার। যা আঘাত করতে পারে কর্মীদের স্বার্থে।
• সার্বিক ভাবে সঙ্কটে পড়তে পারে ইপিএফ প্রকল্পই।
এখন পিএফ হিসেবের সময় মূল বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে কর্মীরা সারা বছর যে ছুটি পান, সেই সময়ের বেতনও ধরা হয়। সংশোধনীতে সেই সুবিধা তোলার কথা বলা হয়েছে। অনেকেরই অভিযোগ, ছুটির দিনের বেতন না ধরলে তার মোট পরিমাণ কমবে। ফলে তখন পিএফ-ও কমবে। এ ছাড়া, এই টাকা জমা বা হিসেবের ক্ষেত্রে এখন সংস্থা কর্তৃপক্ষের কোনও ভুল হলে, তা কর্মীর চাকরি জীবনের যে সময়েই ধরা পড়ুক না কেন অভিযোগ জানানো যায়। সংশোধনী অনুযায়ী, অভিযোগ জানাতে হবে ৫ বছরের মধ্যেই। ইউটিইউসির সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষের অভিযোগ, ‘‘কর্মীদের দীর্ঘ দিনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চক্রান্ত করেছে কেন্দ্র।’’