ফাইল চিত্র।
আর্থিক ঝিমুনি ছিলই। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের অতিরিক্ত চাপ। করোনাভাইরাসের আতঙ্কেও মন্দা ঘনিয়েছে কারবারে। রাজ্যের নিজস্ব আদায় তলানিতে। চলতি অর্থবর্ষে কেন্দ্রের থেকে প্রাপ্য মেলার আশাও কম। অগত্যা বাজেট নিয়ন্ত্রণ আইনে সংশোধনী এনেই সীমার অতিরিক্ত ৪৩১১ কোটি টাকা বাজার থেকে ধার নেওয়ার ব্যবস্থা করে রাখল রাজ্য। এর ফলে আগামী দু’মাসে তা খোলা বাজার থেকে ধার নিতে পারবে অর্থ দফতর। রাজ্যের আবেদনের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক অবশ্য শুধু চলতি অর্থবর্ষের জন্য এই বাড়তি ঋণ নেওয়ায় ‘বিশেষ’ অনুমোদন দিয়েছে।
মঙ্গলবার রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, ‘‘বাজেট নিয়ন্ত্রণ আইন মেনে আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখায় রাজ্যের রেকর্ড তুলনাহীন। ১০ বছর ধরে রাজ্য তার মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজকোষ ঘাটতি ৩ শতাংশে ধরে রেখেছে। কেন্দ্র যা পারেনি।’’ তাঁর দাবি, ২০১০-১১ সালে ওই ঘাটতি ছিল ৪.২৪%। ২০১৮-১৯ সালে ২.৯৬%। ২০১০-১১ সালে রাজস্ব ঘাটতি ছিল জিডিপি-র ৩.৭৫%। ২০১৮-১৯ সালে ০.৯২%। বাজার থেকে নেওয়া ঋণের অনুপাতও কমেছে।
তবে আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রেখেও এ বার অবস্থা সামলানো কঠিন, মত অমিতবাবুর। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এর কারণ, কেন্দ্রের থেকে প্রাপ্য করের ১১,২১২ কোটি টাকা এখনও না-পাওয়া। জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদও রাজ্যের পাওনা ১৭৭৫ কোটি বাকি পড়া। আর্থিক ঝিমুনিতে মার খেয়েছে রাজ্যের নিজস্ব কর সংগ্রহও। বাধ্য হয়েই সরকারকে এক বছরের জন্য ধারের ঊর্ধ্বসীমা বাড়াতে
বলতে হয়েছিল।’’
সংশোধনীতে অবশ্য রাজ্য এই অর্থবর্ষে রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্য জিডিপি-র ৩.৩৪ শতাংশের বেঁধেছে। এত দিন যা ছিল ৩%। বাজেট নিয়ন্ত্রণ আইনে রাজস্ব ঘাটতির যে বছর ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তা-ও বাদ দেওয়া হয়েছে।
কংগ্রেসের অভিযোগ, এটা রাজ্যের ঘাটতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য থেকে ‘মুক্তি’ পাওয়ার চেষ্টা। আর অমিতবাবুর যুক্তি, ‘‘ঘাটতি প্রতি বছরই কমেছে। আমরা শূন্য ঘাটতির দিকে যাচ্ছি। তাই অংশটি বাদ দেওয়া হল। বেহিসাবি হতে নয়।’’
সংশোধনীতে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষ পর্যন্ত রাজ্যের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ জিডিপি-র ৩৪.৩% ধার্য হয়েছে। চলতি অর্থবর্ষে ছিল ৩২.৮৬%। এতে রাজ্যের অর্থনীতির যে বাজারি ধারের উপর নির্ভরশীলতা বাড়বে, তা মানছেন অর্থ দফতরের কর্তাদের একাংশ।