—প্রতীকী চিত্র।
ভোট বড় বালাই। আমজনতার মন পাওয়ার আশায় তাই খাদ্যপণ্য-সহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের চড়া দাম কমাতে মরিয়া বিজেপি। সরকারি সূত্রের খবর, শীঘ্রই সেই লক্ষ্যে বড় পদক্ষেপ করা হতে পারে। এর আওতায় উৎপাদন শুল্ক ছাঁটা হতে পারে তেলে। আমদানি শুল্ক কমানো হতে পারে গম ও ভোজ্যতেলের মতো পণ্যে। ভোটের বাজারে ফায়দা তুলতে এগুলি ঘোষণা করতে পারেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাশাপাশি রাশিয়া থেকে অশোধিত তেলের মতো সস্তার গম আমদানি করেও সুরাহা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে নয়াদিল্লি।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় মোদী বলেছিলেন, মানুষের ঘাড় থেকে দামের বোঝা কমিয়ে আনার জন্য মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে তাঁর সরকার আরও অনেক পদক্ষেপ করবে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, প্রধানত তেলের দাম নিয়ে ভোটের রাজনীতি আগেও হয়েছে। বিশ্ব বাজারেঅশোধিত তেল বাড়লে দেশে যেমন জ্বালানির দাম বাড়ে চট করে, কমলে অনেক সময়ই সেই সুবিধা মেলেনি। আবার যখন ভোটের মরসুম, তখন বিশ্ব বাজারের চড়া দামের আঁচ পাননি দেশবাসী। তাই সকলেই মনে করছে কারণ যা-ই হোক, আপাতত সুরাহা খুব জরুরি। বর্ধিত খরচ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত বহু মানুষের জীবনযাপন কঠিন করেছে।
বছরখানেকের বেশি তেলের দাম স্থির। কলকাতায় পেট্রল লিটারে ১০৬.০৩ টাকা। ডিজ়েল ৯২.৭৬ টাকা। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল সস্তা হলেও দর নামেনি। তার মধ্যে তেল সংস্থাগুলি লোকসান থেকে লাভে ফিরেছে। সরকারের রাজকোষ ভরে উঠেছে জ্বালানির থেকে আয় হওয়া শুল্কে। চাপ বেড়েছে শুধু আমজনতার। যাঁদের রান্নার গ্যাস কিনতে হাজার টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। অপরিহার্য ওষুধের দাম বাড়লেও এড়ানোর উপায় নেই। যাতায়াতের খরচ বেড়েছে। বাজারে আগুন হয়েছে আনাজ-সহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব জিনিসের দাম। ঘাড়ে ঋণের বোঝা থাকলে দুর্ভোগ বেড়েছে সুদের হার চড়ায়। সরকারি সূত্র বলছে, মানুষ যে ক্ষোভে ফুটছেন তা বিলক্ষণ বুঝছে শাসকপক্ষ। কিছু রাজ্যে বিধানসভা এবং সামনের বছর লোকসভা ভোটের আগে তাই তারাও স্বস্তিতে নেই। বরং প্রমাদ গুনছে ব্যালট বাক্সে তার প্রভাব পড়ার আশঙ্কায়। বিরোধীরাও তেল-গ্যাসের দাম এবং মূল্যবৃদ্ধিকে হাতিয়ার করেই প্রচারের গতি বাড়াচ্ছে। ওই সূত্রের খবর, তাই জল মাপছে কেন্দ্র। দ্রুত জ্বালানি এবং ভোজ্যতেলের দর কমাতে শুল্ক ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটা হতে পারে। জোগান বাড়িয়ে দাম কমাতে রাশিয়া থেকে সস্তায় গম আমদানি জন্য কথাবার্তা চালানো হচ্ছে বলেও ইঙ্গিত মিলেছে। ইতিমধ্যেই চালের দাম কমাতে বাসমতি বাদে বাকিগুলির রফতানি নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্র। কেজি প্রতি ৫০ টাকায় টোম্যাটো বিক্রির ব্যবস্থা হয়েছে। নেপাল থেকে আমদানি করে জোগান বৃদ্ধিরও চেষ্টা চলছে।
পরিসংখ্যান বলছে, সরকারের আগাম হিসাবের চেয়ে গম উৎপাদনে ১০% ঘাটতির আশঙ্কা। দু’মাস ধরে পাইকারি বাজারে তার দাম ১০% বেড়ে সাত মাসে সর্বোচ্চ হয়েছে। তার উপর খাদ্যপণ্যের দাম ও সার্বিক ভাবে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। ইতিমধ্যেই যার হার জুলাইয়ে ৭.৪৪% ছুঁয়েছে, ১৫ মাসে সর্বোচ্চ। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ১১.৫%। আনাজ বেড়েছে ৩৭.৪৪%, চাল-গম ১৩%। সরকারি সূত্রের খবর, এই অবস্থায় রাশিয়ার গম পরিস্থিতি বদলাতে পারে বলে আশা নয়াদিল্লির। কেন্দ্রের অন্দরে অনেকের দাবি, দেশের মানুষের স্বার্থরক্ষার খাতিরেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরে কোনও পক্ষ নেয়নি ভারত। এখন জোগানের ঘাটতি দূর করতে ৩০-৪০ লক্ষ টন গম দরকার। তবে দাম রাশ টানতে বেশি আমদানির কথা ভাবা হতে পারে।