তেলের চড়া দাম থেকে কিছুটা সুরাহা পাওয়ার জন্য বারবার কেন্দ্রের কাছে উৎপাদন শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়েও লাভ হয়নি। অথচ পণ্য উৎপাদন, পরিবহণ এবং যাতায়াতের খরচ বাড়িয়ে তেল যখন আমজনতা থেকে শিল্প, সকলের স্বস্তি কেড়েছে, তখন সরকার ঘর ভরেছে তেল থেকে আদায় করা সেই বিপুল শুল্কের আয়ে। সোমবার লোকসভায় খোদ মন্ত্রী জানিয়েছেন, পেট্রল-ডিজেল থেকে গত ছ’বছরে মোদী সরকারের কর আদায় এক লাফে বেড়েছে ৩০০ শতাংশেরও বেশি। কারণ, এই সময় দুই জ্বালানিতে নাগাড়ে উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়েছে তাঁরা।
এ দিন এক প্রশ্নের উত্তরে শুল্ক আদায় বৃদ্ধির বিস্তারিত তথ্য লিখিত ভাবে জানান অর্থ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। আর তাতেই পরিষ্কার, ক্ষমতায় আসার পরে সেই ২০১৪-১৫ সাল থেকে কী ভাবে কর চড়েছে পেট্রল-ডিজেলে। আর তার হাত ধরে কী ভাবে বিপুল রাজস্ব ঢুকেছে রাজকোষে। এমনকি করোনাকালেও। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, এটা ঠিকই অতিমারির কারণে একটা বড় সময় জুড়ে বাজারে তেলের চাহিদা না-থাকায় বিক্রেতা সংস্থাগুলি ভুগেছে, কর কমেছে সরকারেরও। বেড়েছে খরচ। কিন্তু সে সময় সাধারণ মানুষের রুজিও তো ধাক্কা খেয়েছে। বিপর্যস্ত হয়েছে শিল্প। অথচ এ দিন অনুরাগই দেখিয়েছেন, পেট্রল-ডিজেল থেকে ছ’বছর আগে কর আদায় যেখানে ছিল ৭২,১৬০ কোটি টাকা, সেখানে চলতি অর্থবর্ষের (২০২০-২১) প্রথম ১০ মাসে তা বেড়ে হয়েছে ২.৯৪ লক্ষ কোটি।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন থেকে তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান অবশ্য তেলের রেকর্ড দামের জন্য দুষেছেন বিশ্ব বাজারের চড়া অশোধিত তেলকে। কিন্তু শুল্ক কমিয়ে দাম কমানোর আর্জিতে কান দেননি। বরং সুরাহার প্রশ্নে কখনও ‘বল’ ঠেলেছেন রাজ্যের কর কমানোর দিকে, কখনও কেন্দ্র-রাজ্যের একসঙ্গে এগোনোর কথা বলে দায় সেরেছেন। এমনকি কার্যত দিশাহীন ভাবেই সম্প্রতি তেলমন্ত্রী যখন পেট্রল-ডিজেলকে জিএসটিতে শামিলের সওয়াল করেছেন, তখন অর্থমন্ত্রী খারিজ করেছেন তেমন পরিকল্পনার কথা। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, জ্বালানির কর থেকে রাজকোষে এত বেশি অর্থ রাজকোষে ঢোকে বলেই কি অহেতুক কথা বলে সময় খরচ করা হচ্ছে? সরকারি সূত্রের একাংশের অবশ্য ইঙ্গিত ছিল, পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ঠিক মুখে কমতে পারে দাম।
তবে চড়া তেলের ধাক্কায় ইতিমধ্যেই বেড়েছে যাতায়াতের খরচ। পরিবহণ খরচ বাড়ায় চড়তে শুরু করেছে খাদ্যপণ্যের দর। শিল্পমহলেরও অভিযোগ, পরিবহণের পাশাপাশি তেল উৎপাদনের খরচও বাড়াচ্ছে। যার জেরে দাম বাড়ছে অন্যান্য পণ্যের। খুচরো এবং পাইকারি, দুই বাজারেই।
পেট্রল-ডিজেলে মোট কেন্দ্রীয় উৎপাদন শুল্ক (মূল উৎপাদন শুল্ক, সেস, সারচার্জ মিলিয়ে) আগের বছরের ১৪ মার্চ বেড়েছে ৩ টাকা করে। ৬ মে পেট্রলে শুল্ক বাড়ে আরও ১০ টাকা, ডিজেলে ১৩। বিশ্ব বাজারে তেলের দাম যে সময় তলানিতে ঠেকেছিল। অর্থাৎ সরকারের সস্তায় আমদানির সুবিধা পরবর্তীকালে ভারতবাসী আর পাননি শুধু করের কারণে।
সংবাদ সংস্থা