প্রতীকী ছবি।
রাজকোষকে শক্তিশালী করতে বিলগ্নিকরণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করলেও, লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বারবার ব্যর্থ হয়েছে মোদী সরকার। সেই কর্মসূচিকে পোক্ত করতে করোনাকালে তৈরি হয়েছে বিলগ্নিকরণ নীতি। এ বার সেই প্রক্রিয়ায় আরও গতি আনার পক্ষে সওয়াল করা হল সোমবার সংসদে পেশ হওয়া আর্থিক সমীক্ষায়। জানানো হল, এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রির সাফল্য এই কর্মসূচিকে উৎসাহিত করবে। গতি আসবে বেসরকারিকরণে। সমস্ত ক্ষেত্রে বেসরকারি লগ্নিকে স্বাগত জানাতে সরকারের কী ভূমিকা হওয়া উচিত তা নতুন ভাবে খতিয়ে দেখাতে বলা হয়েছে সমীক্ষায়। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন শ্রমিক এবং কর্মী ইউনিয়ন।
২০১৯-২০ অর্থবর্ষ হোক, বা করোনার দু’বছর, সাম্প্রতিক কালে কখনওই বিলগ্নিকরণের লক্ষ্যমাত্রার ধারেপাশে যেতে পারেনি কেন্দ্র। তবে বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে তার রাস্তা প্রশস্ত করার চেষ্টা করেছে। করোনার ধাক্কা থেকে অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণার সময়েই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছিলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্র থেকেই হাত তুলে নেবে সরকার। চারটি মাত্র কৌশলগত ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রাখা হবে।
২০১৬ সাল থেকে ধারাবাহিক চেষ্টার পরে এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রি করা গিয়েছে। প্রায় দু’দশক পরে কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ হল। সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘এর ফলে যে রাজকোষে টাকা এসেছে তা-ই নয়, গতি আসবে বেসরকারিকরণ পরিকল্পনাতেও।’’ এর পরে ভারত পেট্রলিয়াম, শিপিং কর্পোরেশন, পবন হংস, কন্টেনার কর্পোরেশন, রাষ্ট্রীয় ইস্পাত এবং আইডিবিআই ব্যাঙ্কে সরকারের অংশীদারি বিক্রির রাস্তাও মসৃণ হবে বলে আশা কেন্দ্রের।
এ ব্যাপারে সিটুর সাধারণ সম্পাদক তপন সেনের বক্তব্য, ‘‘বেসরকারি লগ্নি আর বেসরকারিকরণ এক ব্যাপার নয়। করদাতাদের টাকায় তৈরি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা জলের দরে বিক্রির চেষ্টা করছে কেন্দ্র। বেসরকারি পুঁজিপতিদের হাতে সরকারি সম্পদ তুলে দিয়ে দলীয় তহবিল ভরছে বিজেপি।’’ ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক বিনয় সিংহ বলেন, ‘‘রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রি হলে শুধু রাষ্ট্রেরই ক্ষতি নয়, সংস্থার কর্মীদেরও স্বার্থহানি হবে। বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামব আমরা।’’ অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৌম্য দত্তের মতে, ‘‘কেন্দ্র যে নীতি নিয়েছে, তাতে হয়তো দেখা যাবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার থেকে ঋণ নিয়েই অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কিনছেন বেসরকারি পুঁজিপতি।’’
তবে এ দিনই আর এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা নীলাচল ইস্পাত নিগম (এনআইএনএল) বিক্রির প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ঘটনাচক্রে এই সংস্থাটিও যেতে চলেছে টাটা গোষ্ঠীর হাতে। ১২,১০০ কোটি টাকায় সেটি হাতে নিচ্ছে টাটা স্টিল লং প্রোডাক্টস। দরপত্রে জিন্দল স্টিল এবং জেএসডব্লিউ স্টিলকে পিছনে ফেলেছে তারা। ওড়িশার কলিঙ্গনগরে নীলাচল ইস্পাতের বছরে ১১ লক্ষ টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কারখানাটি ২০২০ সালের মার্চ থেকে বন্ধ। ক্ষতির অঙ্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধিই মূল কারণ। এর পাশাপাশি, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অব্যবহৃত সম্পদ কাজে লাগিয়ে রাজস্ব আদায়ের জন্য ৩৪০০ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সমীক্ষা।