প্রতীকী ছবি।
বৃদ্ধি তো দূর, বাজেট নথি বলছে বরাদ্দ কমে গিয়েছে স্বাস্থ্য খাতে।
অথচ, সরকারের দাবি স্বাস্থ্য খাতে এ বার ১৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে বাজেটে, যা একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। নির্মলা সীতারামনের দাবি, চলতি আর্থিক বছর (২০২০-২১)-এ যেখানে ৯৪,৪৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, আগামী অর্থ বছর (২০২১-২২)-এর জন্য ২,২৩,৮৪৬ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে। যার মধ্যে কেবল টিকাকরণের কাজে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার। সরকারের দাবি অনুযায়ী ‘বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ বাড়ানোর’ ঘোষণায় প্রাথমিক ভাবে উচ্ছ্বসিত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের জন্য সেরা বাজেট বলে মন্তব্য করেন প্রতিষেধক নির্মাতা সিরাম ইনস্টিটিউটের কর্ণধার আদার পুণেওয়ালা।
কিন্তু বিভিন্ন খাতে বাজেট বরাদ্দের নথি হাতে পাওয়ার পরে দেখা যায়, বরাদ্দ বৃদ্ধি তো দূর— আখেরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমে গিয়েছে। বাজেট নথিতে বিভিন্ন মন্ত্রকের চলতি আর্থিক বছর ও আগামী আর্থিক বছরের যে তুলনা করা হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে চলতি বছরে যেখানে স্বাস্থ্য খাতে ৮২,৪৪৫ কোটি টাকা খরচ হতে চলেছে, সেখানে আগামী অর্থ বছরে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৭৪,৬০২ কোটি ঠাকা। অর্থাৎ প্রায় আট হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ কম।
তা হলে ১৩৭ শতাংশ বৃদ্ধির দাবি কেন করছে সরকার? প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের দাবি, গোটাটাই সংখ্যার কারিকুরি করে বাড়ানো হয়েছে। প্রথমত, ৩৫ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে গণ-টিকাকরণ খাতে। ওই টাকায় কোনও স্থায়ী সম্পদ তৈরি হবে না। দ্বিতীয়ত, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের হিসাব অনুযায়ী কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে স্বাস্থ্য খাতে ১৩,১৯২ কোটি এবং পানীয় জল ও নিকাশি খাতে যথাক্রমে ৩৬,০২২ কোটি টাকা দিতে চলেছে। ওই টাকায় রাজ্যের অধিকার। কিন্তু তা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানোর জন্য কেন্দ্রীয় বাজেটে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তৃতীয়ত, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বাজেট বরাদ্দের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে পানীয় জল ও নিকাশি মন্ত্রকের ৬০,০৩০ কোটি টাকা বরাদ্দকেও। এখানেই না-থেমে দেশ জুড়ে পুষ্টি অভিযানে বরাদ্দ ২,৭০০ কোটি টাকাও স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বরাদ্দে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। চিদম্বরমের দাবি, “ফলে আসল ৭৪,৬০২ কোটি টাকার সঙ্গে অন্য মন্ত্রক ও দফতরের খরচ জুড়ে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে ২,২৩,৮৪৬ কোটি টাকা।”
অর্থমন্ত্রী সীতারামন সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেছেন, “স্বাস্থ্যখাতে নজিরবিহীন বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এত বৃদ্ধি অতীতে হয়নি।” শাসক শিবিরের যুক্তি— পুষ্টি কিংবা পরিস্রুত জল ও নিকাশি ব্যবস্থার সঙ্গে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত। তাই ওই বিষয়ের বরাদ্দকে স্বাস্থ্য বাজেটের সঙ্গে জোড়া হয়েছে। আর প্রতিষেধক পাওয়া তো দেশবাসীর অধিকার।
এ ছাড়া স্বাস্থ্য খাতে আজ ‘প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভর স্বাস্থ্যভারত যোজনা’ নামে একটি নতুন প্রকল্পের ঘোষণা করেন নির্মলা। ওই প্রকল্পে আগামী ছয় বছরে ৬৪,১৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। যার অর্থ বছরে ১০,৭০০ কোটি টাকা মতো সরকার ওই প্রকল্পে দিতে চলেছে। যে টাকায় বর্তমান স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি ১৭,৭৮৮টি গ্রামীণ ও ১১,০২৪টি শহুরে স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে সাহায্য করা হবে। ৩৩৮২টি ব্লকে সুসংহত স্বাস্থ্য ল্যাবরেটরি গড়া হবে। ১১টি রাজ্যে গড়া হবে স্বাস্থ্য ইউনিট। দেশের ৬০২টি জেলা ও ১২টি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ক্রিটিক্যাল কেয়ার হাসপাতাল ব্লক তৈরি করা হবে। করোনা সংক্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের পাঁচটি আঞ্চলিক শাখার মানোন্নয়ন করা হবে। বিভিন্ন শহরে থাকা ২০টি নজরদারি শাখাকেও শক্তিশালী করা হবে। সংক্রমিত রোগকে রোখার প্রশ্নে দেশের ৩২টি বিমানবন্দর, ১১টি সমুদ্র বন্দর ও স্থলভূমিতে থাকা ৭টি আন্তর্জাতিক সীমান্তে থাকা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির আধুনিকীকরণ করা হবে। চিদম্বরমের প্রশ্ন, “বছরে মাত্র দশ হাজার কোটি টাকায় এত কিছু? করোনা সংক্রমণ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো কতটা দুর্বল। তাই পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে যেখানে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা ছিল, সেখানে নামমাত্র টাকা বাড়ানো হয়েছে।”