প্রতীকী ছবি।
কথা ছিল ভোটের বছরে পেশ হবে অন্তর্বর্তী বাজেট। হয়েছে উল্টো। ভোটারদের মন পেতে ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী পীযূষ গয়াল পূর্ণাঙ্গ বাজেটের মতো মোক্ষম অস্ত্রকে হাতছাড়া করতে চাননি। ছোট চাষিদের জন্য সাহায্য, অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের জন্য পেনশন বা মধ্যবিত্তদের আয়করে রিবেট— ঢেলে দিয়েছেন ‘উপহার’। সঙ্গে রয়েছে তুলনায় একটু উচ্চবিত্তদের কথা ভেবে একটির জায়গায় দু’টি বাড়িতে করের সুবিধাও।
বাজেটে ভাল কিছু থাকতে পারে, এই আশায় শুক্রবার শুরু থেকেই চাঙ্গা ছিল শেয়ার বাজার। ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর দিতে হবে না, গয়ালের এই ঘোষণায় প্রথমে উল্লসিত হয়েছিলেন লগ্নিকারীরা। মনে করেছিলেন, হয়তো করমুক্ত আয়ের মাত্রাই ২.৫ লক্ষ টাকা থেকে বেড়ে ৫ লক্ষ হল। ফলে তেতে ওঠে সেনসেক্স, নিফ্টি। পরে ভুল ভাঙলে কিছুটা চুপসে যায় সূচক। যদিও দিনের শেষে সেনসেক্স ২১৩ পয়েন্ট ওঠে। থামে ৩৬,৪৬৯ অঙ্কে।
বস্তুত, ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত যাঁদের করযোগ্য আয়, তাঁরা এ বার কর রিবেট বাবদ ছাড় পাবেন অনধিক ১২,৫০০ টাকা। ফলে মোট আয় ৭-৮ লক্ষ টাকা হলেও অনেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে লগ্নির মাধ্যমে করযোগ্য আয় ৫ লক্ষের মধ্যে নামাতে চেষ্টা করবেন। আশা, এতে শেয়ার নির্ভর (ইকুইটি) ফান্ডের হাত ধরে আরও বেশি টাকা ঢুকবে বাজারে।
বাজেটে সূচকের আশা
• আগামী দিনে বাড়তে পারে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা।
• বিক্রি বাড়তে পারে ফ্ল্যাট-বাড়ির।
• আরও বেশি লগ্নি হতে পারে শেয়ার নির্ভর ফান্ডে।
• শেয়ার বাজারে পুঁজি ঢুকতে পারে বেশি।
• বাজেট ঘোষণার পরেই শেয়ার দর বেড়েছে গাড়ি, মোটরবাইক, ভোগ্যপণ্য ও নির্মাণ শিল্প সংস্থার।
কিন্তু প্রশ্ন
• বাজেটে যে সব আর্থিক সুবিধার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হল, তার টাকা আসবে কোথা থেকে?
• এতে রাজকোষ ঘাটতি আরও বাড়বে না তো?
যেখানে নজর
• শুক্রবার ছিল বাজেটে।
• অপেক্ষা এখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতির।
• চোখ সংস্থার আর্থিক ফলাফলেও।
লক্ষ্যের খতিয়ান
• চলতি অর্থবর্ষে জিএসটি খাতে আদায়ের লক্ষ্য ১৩.৪৮ লক্ষ কোটি টাকা।
• এর মধ্যে শুধু কেন্দ্রের অংশ ৭.৪৩ লক্ষ কোটি।
• অথচ ১০ মাসে কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে মোট সংগ্রহ ৯.৭১ লক্ষ কোটি।
• পরের অর্থবর্ষের লক্ষ্য, কেন্দ্রের ভাঁড়ারে আসবে ৭.৬১ লক্ষ কোটি।
প্রাথমিক বিশ্লেষণে বাজারের ধারণা, বাজেট প্রস্তাব কিছু শিল্পকে শক্তি জোগাবে। চাষিদের ৬,০০০ টাকা সাহায্যের ব্যবস্থা করতে কেন্দ্রের খরচ হবে ৭৫,০০০ কোটি। মনে করা হচ্ছে, এই অর্থ গ্রামীণ অর্থনীতিকে এগোতে ও চাহিদা বাড়াতে সাহায্য করবে। বাজারের এটাও অনুমান, শ্রমিকদের একাংশের হাতে পেনশন পৌঁছলে, তা ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়াবে। সেই সঙ্গে বাড়িতে সম্ভাব্য ভাড়ায় ও মূলধনী লাভে করছাড়ের সুবিধা প্রস্তাব ফের চাহিদা বাড়াবে আবাসন শিল্পে।
তবে বাজার মহলের প্রশ্ন, গয়াল যে প্রতিশ্রুতি দিলেন তার জন্য টাকা আসবে কোথা থেকে? এতে রাজকোষ ঘাটতি আরও বাড়বে না তো?
বাজারের সামনে গুরুত্বপূর্ণ দিন পরের বৃহস্পতিবারও। সে দিন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নতুন গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের প্রথম ঋণনীতি। অনেকের আশা, এই দফায় সুদ ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমতে পারে। তা হলে, সেনসেক্স ফের পৌঁছতে পারে ৩৭ হাজারে।
মুনাফায় ফিরে কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক। কমেছে অনুৎপাদক সম্পদও। এইচডিএফসি লাভ করেছে ২,১১৩ কোটি টাকা। অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক ১,৬৮১ কোটি। তবে এয়ারটেলের নেমেছে ৮৬ কোটিতে। লাভ কমেছে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, ইন্ডিয়ান অয়েলেরও। নামমাত্র বেড়েছে এনটিপিসির।
আরও একটি সুখবর, জানুয়ারিতে জিএসটি আদায় ফের ১ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়ানো। এই খাতে সংগ্রহ ভাল হলে তা ঘাটতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে। তবে চলতি অর্থবর্ষে এই কর সংগ্রহের লক্ষ্য থেকে এখনও অনেকটাই দূরে মোদী সরকার।
(মতামত ব্যক্তিগত)