—প্রতীকী চিত্র।
প্রত্যাশা মতোই তিন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির বিপুল জয় জোয়ার আনল শেয়ার বাজারে। আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনে স্থায়ী সরকার গড়ার ইঙ্গিতে তৈরি হল নতুন নতুন নজির। তবে সেই সঙ্গে বাড়ল সূচকের পতনের আশঙ্কাও। যে কারণে বিশেষজ্ঞদের তরফে এল লগ্নিকারীদের সতর্ক হয়ে পা ফেলার পরামর্শ।
সোমবার সেনসেক্স লাফিয়েছে ১৩৮৩.৯৩ পয়েন্ট। গত বছর মে মাসের পরে এক দিনে এতটা বাড়েনি বিএসই-র ওই সূচক। নতুন নজির গড়ে তা এ দিন পৌঁছেছে ৬৯ হাজারের দোরগোড়ায় (৬৮,৮৬৫.১২)। একই ভাবে ৪১৮.৯০ পয়েন্ট উঠে নিফ্টি শেষ হয় ২০,৬৮৬.৮০ অঙ্কে। সেটাও সর্বকালীন রেকর্ড। এ দিনের উত্থানে লগ্নিকারীদের শেয়ার সম্পদ এক লাফে বেড়ে গিয়েছে ৫.৮১ লক্ষ কোটি টাকা। যদিও এ দিন ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম ৫ পয়সা কমেছে। বিদেশি মুদ্রার বাজার বন্ধের সময় প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৩.৩৮ টাকা।
বাজার বিশেষজ্ঞ আশিস নন্দী বলেন, ‘‘দেশের আর্থিক বৃদ্ধিতে গতি এসেছে। তার পাশাপাশি কেন্দ্রে বিজেপি স্থায়ী সরকার গড়তে পারলে আর্থিক সংস্কারগুলির দ্রুতগতিতে এগোবে। সে ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নিকারীরা ভারতের শেয়ার বাজারে ঢেলে বিনিয়োগ করতে শুরু করবে বলে মনে হয়। সেই ভরসাতেই বাড়ছে বাজার।’’ প্রসঙ্গত, সোমবারই বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ভারতের শেয়ার বাজারে ঢেলেছে ২০৭৩.২১ কোটি টাকা। গত সপ্তাহেও বিপুল লগ্নি করেছিল তারা।
তবে সেই সঙ্গে ঝুঁকির কথাও জানাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মহল। আশিসবাবুই বলছেন, সূচক এগিয়েছে ঠিকই। কিন্তু বাজারের মৌলিক সমস্যাগুলি আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে। যেমন, বিশ্বে বর্তমানে দু’টি (রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইজ়রায়েল-হামাস) যুদ্ধ চলার কারণে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা বহাল। তেল রফতানিকারী দেশগুলির সংগঠন ওপেকের উৎপাদন ছাঁটার সিদ্ধান্ত নতুন করে চিন্তা বাড়াচ্ছে অশোধিত তেলের দাম নিয়ে। যা বাড়লে দেশে মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ দিকে আবার বড়দিন ও নববর্ষের মতো উৎসবের আগে কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে আমেরিকা ও চিনের মতো বড় অর্থনীতি। ফলে এগুলি যে কোনও সময়েই বড় সমস্যা ডেকে আনতে পারে। তখন পড়তে পারে বাজার। তাই এই উচ্ছ্বাসে গা ভাসানোর পরিবর্তে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে লগ্নির সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই উচিত হবে বলে জানাচ্ছেন তিনি।
একই সাবধানবাণী শুনিয়েছেন ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি কমল পারেখও। তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে বহু সংস্থার শেয়ারের দাম যেখানে উঠে গিয়েছে, তার সঙ্গে তাদের উৎপাদন, বিক্রি এবং মুনাফার সামঞ্জস্য নেই। ফলে দরে কৃত্রিমতা রয়েছে। সার্বিক ভাবেই বাজার যেখানে রয়েছে, তাতে যে কোনও সময়েই বড় সংশোধন হতে পারে। ফলে বড় ঝুঁকি যে রয়েছে, সেটা অস্বীকার করা যায় না। তাই বিশেষত সাধারণ লগ্নিকারীদের খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে। তাঁদের উচিত, আপাতত হাত গুটিয়ে রেখে বাজারের প্রতিটি পতনের সুযোগ নিয়ে লগ্নি করা।’’