বম্বে হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
এক নির্দেশ জারি করে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যাঙ্কগুলিকে লুক আউট নোটিস জারি করতে উদ্যোগী হওয়ার অধিকার দিয়েছিল মোদী সরকার। সম্প্রতি তা নিয়েই কার্যত খড়্গহস্ত হল বম্বে হাই কোর্ট। খারিজ করে দিল নির্দেশটি। আদালত বলেছে, ব্যাঙ্কের শীর্ষ কর্তাদের পরামর্শক্রমে ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে ‘লুক আউট নোটিস’ (এলওসি) জারি করার জন্য কোনও আইন নেই। তবু সেটা করা হলে, তা হবে ব্যক্তি স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের বিরোধী। উল্লেখ্য, কোনও ঘটনায় অভিযুক্ত যাতে দেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়ে গা ঢাকা দিতে না পারে, সে জন্য আইন রক্ষক সংস্থাগুলি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি করে। সাধারণত বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দরের মতো জায়গায় অভিবাসন দফতরে তা কার্যকর হয়। হাই কোর্টের এই রায় নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে।
কেন্দ্র ‘ভারতের আর্থিক স্বার্থ’ রক্ষার কারণ দেখিয়ে ২০১৮-এ এক সরকারি নির্দেশ মারফত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির চেয়ারম্যান, এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর এবং সিইওদের ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে এলওসি জারি করতে উদ্যোগী হওয়ার অধিকার দেয়। তাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সময় জারিও হয়েছে কিছু এলওসি। সেই প্রেক্ষিতেই কেন্দ্রের ওই নির্দেশ এবং এলওসিগুলি বাতিল করার আর্জি নিয়ে একগুচ্ছ মামলা দায়ের হয় আদালতে। গত ২৩ এপ্রিল সবক’টি মামলার একসঙ্গে শুনানি হয়েছে বম্বে হাই কোর্টে। সেখানে কেন্দ্রের ওই নির্দেশকে অসাংবিধানিক আখ্যা দেয় বিচারপতি গৌতম পটেল এবং মাধব জামদারের ডিভিশন বেঞ্চ। নির্দেশটির পাশাপাশি ঋণখেলাপি ও তাঁদের জামিনদারদের (গ্যারান্টর) বিরুদ্ধে জারি করা এলওসিগুলিকেও খারিজ করা হয়।
তাঁদের ২৮৯ পাতার রায়ে বিচারপতিরা বলেন, প্রশাসনিক নির্দেশ কোনও আইনের বিকল্প হতে পারে না। প্রশাসন সংবিধানে হস্তক্ষেপও করতে পারে না। কোনও নির্দিষ্ট আইন না থাকলে, নাগরিকের ব্যক্তি স্বাধীনতা ভঙ্গ করতে পারেন না প্রশাসনিক কার্যনির্বাহীরা। শুধু তা-ই নয়, কোনও প্রশাসনিক নির্দেশের আইনি বৈধতা থাকলেও তা যদি ব্যক্তি স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করে, তবে তা খারিজযোগ্য। শুধু এমন এক নির্দেশ কোনও ব্যক্তির বিদেশ ভ্রমণের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে পারে, এটা ভাবা যায় না বলেও মন্তব্য করেছেন বিচারপতিরা।
সংবাদ সংস্থা