n চোখে জল। আরামবাগ হ্যাচারিজ লিমিটেডের রাজনগরের তাঁতিপাড়ায়। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত
কালীপুজোর মধ্যেই বন্ধের নোটিস পড়ল আরামবাগ হ্যাচারিজ় লিমিটেডের রাজনগরের তাঁতিপাড়া (বক্রেশ্বর) শাখায়। সোমবার ভোররাতে ‘নোটিস অফ ক্লোজ়ার’-এ এই ইউনিটটি বন্ধের কারণ হিসেবে নোটবন্দি এবং জিএসটি চালুর পরবর্তীতে পোলট্রি ব্যবসায় চরম মন্দার পাশাপাশি কর্মীদের একাংশের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও অধিকারিকদের প্রতি দুর্ব্যবহারকে দায়ী করা হয়েছে। রাতারাতি কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ওই ফার্মের শ’দুয়েক কর্মী।
কাজ হারিয়ে সোমবার সকালে মুরগি খামারের সামনে বিক্ষোভ দেখান শ্রমিকেরা। তাঁদের দাবি, পরিকাঠামো, ব্যবস্থাপনা সবই ভাল ছিল এই ফার্মের। অনিয়মিত বেতন এবং পুজোর বোনাস না-পাওয়ায় অসন্তোষ থাকলেও শ্রমিকদের তরফে অধিকারিকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়নি। বিশৃঙ্খলতাও নয়। শ্রমিকদের অভিযোগ, ‘‘কর্তৃপক্ষই নিজেদের খামখেয়ালিপনায় এই খামার বন্ধ করে আমাদের বিপাকে ফেলেছেন। আমাদের সংসার ভেসে যাবে।’’ ওই খামারের ম্যানেজার প্রতাপ সিংহ বলেন, ‘‘কেন বন্ধ করা হচ্ছে, সেটা নোটিসেই বলা আছে। আমি এ ব্যাপারে কিছু বলব না। এর পরে যা কিছু সিদ্ধান্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নেবেন।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চার দশক আগে রাজনগরের তাঁতিপাড়া গ্রামে বিশাল মাপের ওই পোলট্রি খামার গড়ে তোলে আরামবগ হ্যাচারিজ় লিমিটেড। কয়েকশো কোটি টাকা বিনিয়োগে এই ফার্মে ১ লক্ষ ডিম পাড়া মুরগি (মাদার বার্ড) রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া সপ্তাহে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার ডিম থেকে মুরগির বাচ্চা ফোটানোর জন্য যন্ত্রপাতি রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে মুরগির খাবার তৈরির একটি মিনি ইউনিট। শ্রমিক ও স্থানীয়েরা জানান, রমরম করে চলছিল ফার্ম। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষে ওই খামাপকে ঘিরে গোটা এলাকার বহু পরিবারে অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছিল। এলাকার মানুষ জানিয়েছেন, ডিম পাড়া মুরগি, ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর ব্যবস্থা তো ছিলই। এ ছাড়া ডিমপাড়া মুরগি বুড়ো হয়ে গেলে তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করত কোম্পানি। নিষিক্ত নয়, এমন ডিমও বিক্রি করত। পরোক্ষ ভাবে বেশ কিছু পরিবার এর উপরে নির্ভর করত।
মাস কয়েক আগে থেকেই ছন্দ পতন হতে শুরু করে। শ্রমিকদের অভিযোগ, কয়েক মাস আগে থেকেই ফার্মটিকে বন্ধ করার পরিকল্পনা ছিল কর্তৃপক্ষের। প্রথম প্রথম ডিম পাড়া হাজার বিশেক মুরগি সরানো শুরু হয়েছিল। ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরিও বন্ধ হয়। স্থায়ী শ্রমিকদের মাইনে বাকি এক থেকে তিন মাস। অস্থায়ী শ্রমিকদের বেতন দিতেও টালবাহানা করছিলেন ফার্ম কর্তৃপক্ষ। মেলেনি পুজো বোনাসও। পাতাল বাউড়ি, তপন নন্দী, নব বাউড়ি, গোঁসাই দলুই, ভৃগুরাম দাসবৈষ্ণবেরা বলেন, ‘‘অন্য দিনের মতোই এ দিন সকালে কাজে এসেছিলাম। ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি এমন কিছু হবে বলে! সোমবার সকালে এসে দেখি ফার্ম বন্ধের বিজ্ঞপ্তি ঝুলছে মূল গেটে। এটা চরম অন্যায়। আমরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হব।’’
এর পরেই ডান-বাম দু’টি শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের উপস্থিতিতে ফার্মের বাইরে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকেরা। তাঁদের দাবি, তাঁদের কাজে বহাল রেখে মুরগি খামার ফের চালু হোক। ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের বক্তব্য, ‘‘অনিয়মিত বেতন ও বোনাস না মেলায় পুজোর আগেই এক দিন ফার্মের গেটে তালা ঝুলানো হয়েছিল। কিন্তু, আশ্বাস দিয়েও বকেয়া মেটায়নি কোম্পানি। তার পরও এমন কিছু করিনি যে খামার বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আমাদের অন্ধকারে রেখে রাতারাতি কী ভাবে ইউনিট বন্ধ করতে পারেন কর্তৃপক্ষ?’’ নব বাউড়ি কেঁদে ফেলে বললেন, ‘‘বাড়িতে প্রতিবন্ধী মেয়ে। আমি একমাত্র রোজগেরে। কাল থেকে কী করে হাঁড়ি চড়বে জানি না।’’
বাম শ্রমিক সংগঠনের নেতা শুকদেব বাগদি, কালো কোঁড়া এবং তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা ভৃগুরাম দাস বৈষ্ণব বলেন, ‘‘কাউকে কাজ থেকে না ছাড়িয়ে খামার যে ভাবে চলছিল, সে ভাবেই চলুক। সেজন্য আমরা রাজনগরের বিডিও, সিউড়ির মহকুমাশাসক, সহকারী শ্রম কমিশনার ও জেলাশাককে লিখিত ভাবে জানাচ্ছি। যাতে দু’পক্ষের মধ্যে বসার ব্যবস্থা হয়। সঙ্কট কাটে।’’ তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্থার এক কর্তার ইঙ্গিত, বিষয়টি এত সহজ নয়।