—ফাইল চিত্র।
কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডে (ইপিএফ) গত অর্থবর্ষের (২০১৯-২০) জন্য ৮.৫% সুদ দিতেই নাভিশ্বাস উঠেছে। এ বার খোদ কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড কর্তৃপক্ষের (ইপিএফও) অন্দরে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে চলতি অর্থবর্ষে (২০২০-২১) ৮% সুদও দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে। ইপিএফও-র কর্তারা ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, শেয়ার বাজারে যে ভাবে ওঠানামা চলছে, তাতে এ বছরের জন্য ৮ শতাংশের বেশি সুদ দেওয়া কঠিন হতে পারে।
প্রশ্ন উঠেছে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিলগ্নিকরণে সাহায্য করতে গিয়েই কি দেশের ৬ কোটি চাকুরিজীবীর প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুদে টান পড়েছে?
পিএফ তহবিলের ৮৫% অর্থ ঋণপত্রে লগ্নি করা হয়। ১৫% লাগানো হয় ইকুইটি বা শেয়ারে। ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে তহবিলের মাত্র ৫% অর্থ শেয়ারে লগ্নি করা হয়েছিল। ২০১৬-১৭ সালে ১০%। ২০১৭-১৮ সালে ১৫%। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণের জন্য ২০১৪ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার ইটিএফ (এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) বাজারে ছাড়া হয়েছে। ইটিএফ অনেকটা মিউচুয়াল ফান্ডের মতো। যা শেয়ারের মতোই কেনা-বেচা হয় স্টক এক্সচেঞ্জে। ২০১৭ থেকে চালু হয়েছে ভারত-২২ ইটিএফ। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে এই ইটিএফ-এর মাধ্যমে মোদী সরকার ৩০,৮৬৯ কোটি টাকা বিলগ্নিকরণ থেকে ঘরে তুলেছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিউচুয়াল ফান্ড বা শেয়ার বাজারে অন্য লগ্নিকারীরা বিশেষ আগ্রহ দেখায়নি। তখন সরকারের তরফে ইপিএফও এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থাকে দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার কেনানো হয়েছে।
উদ্বেগ যেখানে
• হিসেব কষতে গিয়ে
দেখা যাচ্ছে, ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে শেয়ার বাজারে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার ইটিএফ-এ (মূলত যেখানে পিএফের তহবিল লগ্নি করা হয়) লগ্নি থেকে আয় হওয়া দূরের কথা, ২৪ শতাংশের বেশি মার খেয়েছে লগ্নির টাকা।
• ভারত-২২ ইটিএফ-এও প্রভিডেন্ট ফান্ডের তহবিলের লগ্নি প্রায় ২০% মার খেয়েছে।
• এসবিআই ও ইউটিআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট পরিচালিত ইটিএফ-এ লগ্নি চোট খাওয়ার পরিমাণ তুলনায় কম।
• ২০১৫ থেকে এখনও পর্যন্ত ইকুইটিতে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার লগ্নির ৮.৩% মার খেয়েছে।
আরও পড়ুন: বেজিংকে বার্তা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর, বায়ুসেনায় রাফালের যোগ, চুপ প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন: প্রদেশ কংগ্রেসের ভাগ্যে ফের ‘পরিযায়ী’ সভাপতি
এখন ইপিএফও কর্তারা হিসেব কষতে গিয়ে দেখছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ারে লগ্নি করতে গিয়েই লাভের বদলে লোকসান হয়েছে। গত অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার ইটিএফ-এ ২৪ শতাংশের বেশি মার খেয়েছে লগ্নির টাকা। ভারত-২২ ইটিএফ-এও পিএফ তহবিলের লগ্নি প্রায় ২০% মার খেয়েছে। ফলে একটু বেশি সুদ দেওয়া কঠিন হয়েছে। এই পরিস্থিতিতেই বুধবার পিএফের অছি পরিষদের বৈঠকের পরে জানানো হয়েছে, ২০১৯-২০ সালে নির্ধারিত ৮.৫% সুদের ০.৩৫% ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ইটিএফ বেচে পাওয়া টাকার উপরে নির্ভর করবে।
বুধবার ইপিএফও-র অছি পরিষদের বৈঠকেও পিএফের লগ্নি থেকে আয়ের এই দুরবস্থা নিয়ে কথা হয়। তার পরেই ৮.৫% সুদের দু’টি ভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়। প্রথমটি ঋণপত্রে লগ্নির আয় থেকে সংস্থানের জন্য ৮.১৫% সুদের অংশ। দ্বিতীয়টি শেয়ার বাজারে ইটিএফে লগ্নির আয় থেকে ০.৩৫%। আজ শ্রম মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যা, দুই কিস্তিতে সুদ মেটানো হবে বলা হয়নি। ফলে তার পরেই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি ৮.১৫% সুদ এখন মিলবে না? সুদ বাবদ আয়ের জন্য ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে!
অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘একসঙ্গে ৮.৫% সুদ দিতে হলে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকার ঘাটতি দেখা দেবে। এই কারণেই আমরা প্রথম থেকে সুদের হার
কমাতে বলেছিলাম।’’