কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডের (ইপিএফ) পেনশন তহবিলে নির্ধারিত সীমার থেকে বেশি টাকা কাটিয়ে পেনশনের অঙ্ক বাড়ানোর বিষয়ে সম্প্রতি সার্কুলার জারি করেছেন পিএফ কতৃপক্ষ। জানিয়েছেন, কোন কোন শর্ত মানলে (সঙ্গের সারণিতে দেখুন) ওই বর্ধিত পেনশনের হকদার হবেন সহস্যরা। তাঁদের দাবি, ওই সার্কুলার জারি করা হয়েছে আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতেই। কিন্তু তারপরেও প্রশ্ন দানা বাঁধছে নতুন নিয়মকে ঘিরে। প্রশ্ন উঠছে ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে এক বছরের মধ্যে আবেদন জানিয়ে থাকলে, শুধু তবেই কেন এই সুবিধা মিলবে? কেন তা থেকে বঞ্চিত হবেন বাকিরা?
সংবাদপত্রের মতো যে সব নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে পিএফ কাটার জন্য মূল বেতনের ঊর্ধ্বসীমা বাঁধা নেই, তাদের ক্ষেত্রে এই পেনশনের নিয়ম কী দাঁড়াবে, সেই বিষয়টিও স্পষ্ট নয়।
বর্ধিত হারে পেনশন পাওয়ার জন্য সার্কুলারে একাধিক শর্তের কথা উল্লেখ করেছেন পিএফ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেখানে বলা হয়েছে, যে-সব সদস্য ইতিমধ্যেই ২৬(৬) ধারায় বর্ধিত হারে পিএফের টাকা কাটার ইচ্ছা প্রকাশ (অপশন) করে রেখেছেন, তাঁরা যদি বাড়তি পেনশন চান, তাহলে তা ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে এক বছরের মধ্যে পিএফ কর্তৃপক্ষের কাছে জানাতে হবে। অর্থাৎ, এখন চাইলেও আর কেউ ওই সুবিধা পেতে পারবেন না। গোল বেঁধেছে এই অংশ ঘিরেই।
প্রাপ্তির শর্ত
স্বেচ্ছায় বাড়তি টাকা কাটিয়ে বর্ধিত পেনশন পেতে হলে—
• চাকরিতে থাকাকালীনই ইপিএফ প্রকল্পের ২৬(৬) ধারা মেনে নির্দিষ্ট সীমার বেশি বেতনের উপরে পিএফের টাকা কাটানোর ইচ্ছার কথা পিএফ কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
• কর্মীর ইচ্ছে মাফিক বেতন থেকে বর্ধিত হারে পিএফের টাকা কেটে আঞ্চলিক পিএফ দফতরে জমা দেওয়ার দায়িত্ব নেওয়ার অঙ্গিকার করতে হবে নিয়োগকারীকেও। অর্থাৎ, সদস্য এবং নিয়োগকারীর যৌথ সম্মতিপত্র জমা পড়া জরুরি।
• ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের আগে বর্ধিত হারে পিএফের টাকা তো কাটিয়ে থাকতেই হবে। সেই সঙ্গে পেনশনে বাড়তি টাকা কাটানোর ইচ্ছের কথা জানাতে হবে ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে তার এক বছরের মধ্যে।
আগে অবসরেও
যাঁরা ২০১৪ সালের ৩১ অগস্টের মধ্যে অবসর নিয়েছেন, বাড়তি পেনশনের সুবিধা পেতে তাঁদের—
• আগেই পিএফ প্রকল্পের ২৬(৬) ধারা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সীমার বেশি বেতনের উপর থেকে পিএফের টাকা কাটানোর ইচ্ছে প্রকাশ করে থাকতে হবে।
• পেনশন প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে অবসরের দিন পর্যন্ত পিএফ খাতে যে টাকা জমা পড়েছে, তা থেকে বর্ধিত পেনশন খাতে প্রয়োজনীয় টাকা স্থানান্তরিত করতে হবে। অর্থাৎ, পিএফ হিসেবে কাটিয়ে রাখা বাড়তি টাকা থেকে বর্ধিত পেনশন খাতের অঙ্ক নিয়ে যেতে হবে তার খাতায়।
• এই হিসেব পিএফ দফতর করলেও, তার জন্য তথ্য ও নথি সরবরাহ করতে হবে নিয়েগকারীকেই।
নিয়ম ও প্রশ্ন
• কিছু নির্দিষ্ট ব্যতিক্রম
বাদে নিয়োগকারী পিএফ খাতে টাকা দেবেন মূল বেতনের বাঁধা ঊর্ধ্বসীমা (মাসে ১৫,০০০ টাকা) পর্যন্তই। বাড়তি টাকা দেবেন সদস্যই।
• বর্ধিত পেনশনের জন্য আলাদা করে টাকা কাটাতে হচ্ছে না। তা দেওয়া হচ্ছে স্বেচ্ছায় কাটানো পিএফের বাড়তি টাকা থেকেই।
• এখন চাইলেও বাড়তি পেনশন চাওয়ার জো নেই। প্রশ্ন উঠছে, বাকিরা সবাই ওই সুবিধা পাবেন না কেন?
তবে যে সব সদস্য ২০১৪ সালের ৩১ অগস্টের মধ্যে অবসর নিয়েছেন, তাঁদের জন্যও বাড়তি পেনশনের দরজা খোলা। কিন্তু সে জন্যও বেশ কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হবে তাঁদের।
নিয়ম অনুযায়ী, কর্মীর কাছ থেকে মূল বেতনের নির্দিষ্ট সীমার পেনশন খাতে যে টাকা জমা পড়ে, তার উপরে কেন্দ্রও অতিরিক্ত ১.১৬% টাকা জমা দেয়। কিন্তু বর্ধিত পেনশনের জন্য জমা পড়া বাড়তি টাকার উপরে ওই ১.১৬% মিলবে না। তা দিতে হবে সেই সংশ্লিষ্ট কর্মীকেই।
পিএফ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যে সমস্ত সংস্থার পিএফ তহবিল সেই সংস্থার কর্মী ও নিয়োগকারীদের নিয়ে গঠিত ট্রাস্টই পরিচালনা করে (পিএফ আইনের ভাষায় এগজেম্পটেড ফান্ড), সেই সব সংস্থার সদস্যরা কিন্তু বর্ধিত হারে পেনশন পাওয়ার সুযোগ পাবেন না। বিষয়টি এখনও আদালতের বিচারাধীন রয়েছে বলেও খবর।
এ ছাড়া যে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা সংবাদপত্র-সহ কিছু প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে। যেখানে পিএফের টাকা কাটার বিষয়ে মূল বেতনের ঊর্ধ্বসীমা নেই। তাই তাদের ২৬(৬) ধারায় অপশন দেওয়ার প্রশ্নও নেই। বর্ধিত পেনশনের নিয়ম এদের ক্ষেত্রে কী হবে, তার উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Cha• • el - এ।