স্পেকট্রাম, লাইসেন্স ইত্যাদি খাতে সরকারের প্রাপ্য মেটাতে গিয়ে এখনও ঘাড়ে চেপে রয়েছে বিপুল ধারের বোঝা। তার উপর সস্তার পরিষেবার গলা কাটা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গিয়ে গ্রাহক পিছু আয় কমছে টেলি পরিষেবা সংস্থাগুলির। টান পড়ছে মুনাফায়। এতটাই যে, তার প্রভাবে তাদের বেহাল আর্থিক অবস্থা সরকারি কোষাগারে ছোপ ফেলেছে বলে স্পষ্ট জানিয়েছে ট্রাই। কারণ, আয়ের ভিত্তিতেই কেন্দ্রকে ফি দেয় তারা। কিন্তু এই সব কিছুর মধ্যেও এখন হিড়িক উঠছে তাড়াতাড়ি ৫জি পরিষেবা চালুর। ফলে সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন উঠছে, আর্থিক সমস্যায় ধুঁকতে থাকা টেলিকম শিল্প এই নতুন বিনিয়োগের জন্য আদৌ প্রস্তুত তো?
রিলায়্যান্স-জিয়ো বাজারে আসার পরে মাসুল-যুদ্ধ আরও তীব্র হয়েছে। ট্রাই জানিয়েছে, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের এই শিল্পের আয় কমেছে ১৬%। এই আয়ের ভিত্তিতেই তাদের কাছ থেকে লাইসেন্স ফি, স্পেকট্রাম ফি ইত্যাদি আদায় করে সরকার। ফলে ট্রাইয়ের দাবি, সরকারের লাইসেন্স ফি বাবদ ১৬% ও স্পেকট্রাম ফি বাবদ প্রায় ৩০% আয় কমেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, জিয়ো নিখরচার পরিষেবা বন্ধ করে মাসুল নেওয়া শুরু করার পরে সব সংস্থারই গ্রাহক পিছু আয় বেড়েছিল। কিন্তু ফের সস্তার পরিষেবা নিয়ে হুড়োহুড়ির জেরে তা কমতে শুরু করেছে। অথচ তড়িঘড়ি ৫জি প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে বদ্ধপরিকর কেন্দ্র।
মূল্যায়ন সংস্থা ইক্রা এই পরিপ্রেক্ষিতে জানিয়েছে, মাসুল যুদ্ধ আরও তীব্র হওয়ার সম্ভাবনায় ও নগদ জোগানে টান পড়ায় টেলিকম শিল্পের বৃদ্ধির চাকায় আগামী কয়েক মাসের মধ্যে গতি ফেরার আশা কম। এই অবস্থায় চালু পরিষেবা ঠিক মতো বজায় রাখা নিয়েই সংশয় রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে। কারণ ২জি, ৩জি ও ৪জি পরিষেবা চালিয়ে যাওয়ার জন্যও ক্রমাগত লগ্নির প্রয়োজন। নগদ জোগানের অভাব ঘটলে তা বড়সড় ধাক্কা খেতে পারে।
খতিয়ান
• ২০১৭ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরের চেয়ে অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে সংস্থাগুলির গ্রাহক পিছু (জিএসএম পরিষেবা) আয় কমেছে ৫.৩৭%
• এর মধ্যে প্রিপেড পরিষেবায় গ্রাহক পিছু আয় মাসে ৭১ টাকা থেকে কমে ৬৭ টাকা
• পোস্টপেডে তা মাসে ৩৬১ টাকা থেকে কমে ৩৪৮ টাকা
• সিডিএমএ পরিষেবায় আয় ১২৫ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১১১ টাকা
তথ্যসূত্র: ট্রাই
তবে এরই মধ্যে ৫জি প্রযুক্তি নিয়েও চর্চা চলছে। এ ব্যাপারে টেলিকম শিল্পের সংগঠন সিওএআইয়ের এক অনুষ্ঠানে টেলিকম সচিব অরুণা সুন্দররাজন জানান, জুনের মধ্যে কেন্দ্র এই লক্ষ্যে পথনির্দেশ বা ‘রোডম্যাপ’ তৈরি করে ফেলবে। সিওএআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল রাজন ম্যাথুজও জানিয়েছেন, সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারতীয় গ্রাহকদের কাছে এই পরিষেবা পৌঁছে দিতে চান তাঁরা।
মাসুল যুদ্ধ চালিয়ে টেলিকম শিল্প কী ভাবে আগামী দিনের সেই প্রযুক্তি আনার বিপুল লগ্নি জোগাড় করবে, সেটাই এখন দেখার।