Cancer Treatment

ক্যানসার কী ভাবে নিরাময় করা সম্ভব? আলোচনায় তিন বিশিষ্ট ক্যানসার বিশেষজ্ঞ

ভারতীয়দের মধ্যে ক্যানসারের প্রবণতা ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং অন্যান্য রোগের তুলনায় ক্যানসারের বৃদ্ধির হারও বেশি। যদিও এই রিপোর্ট এবং এই অনুমান-ভিত্তিক দাবিগুলি আপনাকে ভয় দেখাতে পারে, তবে আশাবাদী হওয়ারও কারণ রয়েছে।

এবিপি ডিজিটাল ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৪৮
Share:

ক্যানসারের চিকিৎসা নিয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

গ্লোবাল ক্যানসার অবজারভেটরি ২০২০-র রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি বছর ১৩ লাখ ভারতীয় ক্যানসারে আক্রান্ত হন। অনুমান বলছে, ২০৩৫-২০৪০ সালের মধ্যে অন্তত তিন জন ভারতীয়ের মধ্যে এক জন ক্যানসারের রোগী হিসাবে চিহ্নিত হবেন। ভয়ঙ্কর শোনাচ্ছে, তাই না? তবে এটাই সত্যি! ভারতীয়দের মধ্যে ক্যানসারের প্রবণতা ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং অন্যান্য রোগের তুলনায় ক্যানসারের বৃদ্ধির হারও বেশি। যদিও এই রিপোর্ট এবং এই অনুমান-ভিত্তিক দাবিগুলি আপনাকে ভয় দেখাতে পারে, তবে আশাবাদী হওয়ারও কারণ রয়েছে। ক্যানসার রোগের নিরাময়, এমনকি প্রতিরোধও করা যেতে পারে। চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের জন্যও এই রোগের ক্ষেত্রে অনেক নতুন চিকিৎসা এসেছে, যা ইতিমধ্যেই কলকাতা শহরেও সহজলভ্য হয়েছে।

সম্প্রতি শহরের তিন জন বিশিষ্ট ক্যানসার বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে আনন্দবাজার অনলাইন। তাঁরা এই সাক্ষাৎকারে ক্যানসারের বিভিন্ন সাধারণ লক্ষণ, ঝুঁকি, ক্যানসার নির্ণয় পদ্ধতি এবং এই রোগ নির্মূল করতে বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং সবশেষে এই চিকিৎসার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

ক্যানসারের বিরুদ্ধে একত্রিত পদক্ষেপ: সচেতনতা এবং প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞদের অন্তর্দৃষ্টি

অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল কলকাতা, মেডিক্যাল অনকোলজির সিনিয়র কনসালট্যান্ট চিকিৎসক সন্দীপ গঙ্গোপাধ্যায় ক্যানসারের উপসর্গ নিয়ে যা বলেছেন, সেগুলিতে মনোযোগ দেওয়া হলে ক্যানসার নিরাময়ে সাহায্য হতে পারে৷ “অজানা কাশি, দীর্ঘদিন ধরে মুখের সংক্রমণ, স্তন ফুলে যাওয়া, জরায়ু বা যোনিপথে রক্তপাত, অজানা কারণে ওজন হ্রাস, শারীরিক দুর্বলতা বা অজানা জ্বর ক্যানসারের লক্ষণ। এগুলির কোনওটি থাকলে অবশ্যই উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া”, মত চিকিৎসকের।

স্ক্রিনিং কী ভাবে ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে, সে ব্যাপারে সবিস্তার জানিয়েছেন অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল কলকাতা, মেডিক্যাল অনকোলজির সিনিয়র কনসালট্যান্ট চিকিৎসক জয়দীপ ঘোষ। তিনি বলেন, “যদিও সব ক্যানসারের স্ক্রিনিং করা যায় না, তবে স্তন, কোলন, প্রস্টেট, সার্ভাইক্যাল এবং ফুসফুসের মতো সাধারণ ক্যানসারের জন্যে স্ক্রিনিং কার্যকর হতে পারে। স্তন ক্যানসারের জন্য ম্যামোগ্রাফি, কোলন ক্যানসারের জন্য কোলনোস্কোপি, কম্বিনেশন স্টুল ব্লাড টেস্ট এবং প্রস্টেট ক্যানসারের জন্য রক্ত পরীক্ষা (প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন) এবং ফুসফুসের ক্যানসার শনাক্তকরণে স্বল্পমাত্রিক ফুসফুস সিটি স্ক্যানের মতো পদ্ধতিগুলি উপযোগী হতে পারে। স্ক্রিনিং অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট বয়স থেকে করা উচিত এবং ক্যানসারের ইতিহাস রয়েছে এমন পরিবারগুলিতে এই স্ক্রিনিং পদ্ধতি অপরিহার্য৷" এ ছাড়াও তাঁর মতে, “ক্যানসার তাড়াতাড়ি শনাক্ত হলে নিরাময়েরও হার বেশি থাকে।”

কলকাতার অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল কলকাতার সিনিয়র কনসালট্যান্ট মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট চিকিৎসক বিভাস বিশ্বাস ক্যানসার শনাক্ত হওয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সবিস্তার আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “ক্যানসারের প্রথম ধাপ থেকে তৃতীয় ধাপ পর্যন্ত নিরাময় করা সম্ভব। সার্জারি, রেডিয়েশন এবং কেমোথেরাপির মতো ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য একাধিক পদ্ধতি রয়েছে। এই তিন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি আজকাল খুবই সাধারণ।” কেমোথেরাপি সম্পর্কে অনেক কথা বলা হয় এবং লোকেরা প্রায়শই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বেশ ভীত থাকেন। চিকিৎসক বিশ্বাস বলেন, "এখন অনেক উন্নত ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে যা এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে সাহায্য করে।”

এই দীর্ঘ আলাপচারিতায় চিকিৎসক সন্দীপ গঙ্গোপাধ্যায় টার্গেট থেরাপির উন্নত কৌশল সম্পর্কেও বেশ কিছু কথা বলেন, যা অস্বাভাবিক ভাবে কাজ করা কোষগুলিকে নির্দিষ্ট করে ক্যানসারের চিকিৎসা চালায়। তাঁর কথায়, “ফুসফুসের ক্যানসারে চতুর্থ ধাপের রোগীরা এই থেরাপির মাধ্যমে আরও চার থেকে পাঁচ বছর ভাল ভাবে বেঁচে থাকতে পারেন।" এমনকি তিনি বলেছেন, “এটির মাধ্যমে, স্তন এবং ডিম্বাশয় ক্যানসারে আক্রান্ত্র রোগীরাও অনেক দিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে।”

২০১৫ সালের পর থেকে ক্যানসারের ক্ষেত্রে আর একটি নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি চালু হয়েছে, যার নাম ইমিউনোথেরাপি। চিকিৎসক জয়দীপ ঘোষ বলেন, “ইমিউনোথেরাপিতে অস্ত্রোপচার জড়িত নয়। তবে এটি এক ধরনের ওষুধ, যা শরীরে স্যালাইনের সঙ্গে ইনজেকশন হিসাবে দেওয়া হয়। কেমোথেরাপির জন্যেও একই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। এটি ক্যানসারের চতুর্থ ধাপে থাকা রোগীদের জন্যে প্রাথমিক ধরনের চিকিৎসা হয়ে উঠেছে। ইমিউনোথেরাপি ইমিউন সিস্টেমের মাধ্যমে ক্যানসার কোষকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে। এটি কেমোথেরাপির চেয়েও বেশি কার্যকর এবং মাঝে মাঝে কেমোথেরাপির সঙ্গে একত্রেও এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এটি ফুসফুস এবং কিডনির ক্যানসারের চিকিৎসায় কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে।” যদিও তাঁর সংযোজন, “ইমিউনোথেরাপি দিয়ে সব ক্যানসারের চিকিৎসা করা যায় না।”

চিকিৎসক ঘোষ আরও একটি নতুন ধরনের চিকিৎসা, কার টি-সেল থেরাপির কথাও বলেছেন, যা ক্যানসার অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধক কোষগুলিকে সক্রিয় করে তোলে। তিনি আরও বলেন, “এই থেরাপি ব্লাড ক্যানসারের চিকিৎসায় সবচেয়ে কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে।”

তিন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের প্রত্যেকেই ক্যানসারের চিকিৎসার ব্যাপারে খুবই আশাবাদী। চিকিৎসক ঘোষের মতে, ক্যানসার চিকিৎসার অগ্রগতির জন্য পরবর্তী ৫-১০ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়াও তিনি যোগ করেন, কলকাতার অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালে এই সমস্ত স্ক্রিনিং, উন্নত চিকিৎসার সুবিধা এবং উন্নত ডায়াগনস্টিক সরঞ্জাম পাওয়া যায়।

যে কোনও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রশ্নের জন্য, অ্যাপোলোতে যোগাযোগ করুন:

জরুরি নং: ১০৬৬

হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩৪৪২০২১২২

ই-মেইল আইডি: infokolkata@apollohospitals.com

এই প্রতিবেদনটি ‘অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল কলকাতা’-এর সঙ্গে আনন্দবাজার ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন