Blood Donation

রক্তদান মহৎ দান কেন? স্বাস্থ্য ভাল রাখতে রক্তদানের গুরুত্ব কতখানি?

রক্তদান সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ‘এলজি ইলেক্ট্রনিক্স ইন্ডিয়া লিমিটেড’ এই নিবন্ধটি তৈরি করেছে।

এবিপি ডিজিটাল ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:১২
Share:
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কথায় বলে, রক্তদান মহৎ দান। তা সত্ত্বেও বহু মানুষ রক্ত দিতে ভয় পান এবং রক্তদান সম্পর্কে এখনও অনেকের মনে নানা ধরনের ভুল ধারণা রয়েছে। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, মাত্র এক ঘণ্টা সময় ব্যয় করে আপনি একসঙ্গে তিন-তিনটি জীবন বাঁচাতে পারেন। রক্তদান এমনই এক মহৎ কাজ, যা দুর্ঘটনাগ্রস্ত, ক্যানসার রোগী বা অস্ত্রোপচার হয়েছে, এমন ব্যক্তিদের প্রাণ বাঁচাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবু, অনেকেই রক্তদান করতে দ্বিধাবোধ করেন, যার নেপথ্যে মূলত থাকে ভয়, বিভ্রান্তি বা ভুল ধারণা।

তাই রক্তদানের উপকারিতাগুলি জেনে নিন। এতে রক্তদান সম্পর্কিত ভুল ধারণা থেকেও নিজেকে বিরত রাখতে পারবেন।

রক্তদান কী কী ভাবে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী?

স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে:

শুধু যাঁরা গ্রহীতার ভূমিকায় থাকেন, তারাই উপকৃত হন তা নয়। বরং যাঁরা রক্তদাতার ভূমিকায় থাকেন, তাঁরাও উপকৃত হন। অপরকে রক্ত দেওয়ার মাধ্যমে আপনি শুধু এক জন নয়, বহু মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারেন। এই অনুভূতি অনন্য। নিয়মিত রক্তদান শরীরে অতিরিক্ত আয়রনের মাত্রা কমিয়ে হার্টের রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। পাশাপাশি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ওজন নিয়ন্ত্রণ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে।

প্রতি বার রক্তদানের আগে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। সেখানে রক্তচাপ, হিমোগ্লোবিন ও সার্বিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকে। এই পরীক্ষা আপনাকে নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতেও সাহায্য করে।

রক্তদানে আসে মানসিক প্রশান্তি ও সন্তুষ্টি:

আপনার দেওয়া রক্ত কারও জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেছে, তা জানার আনন্দই আলাদা। রক্তদান করলে মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন নামে এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে ও মন ভাল রাখে। রক্তদান বিষয়টি ছোট কিন্তু এক মহৎ উপায়, যার মাধ্যমে আপনি সমাজের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন।

একটি রক্তদান তিনটি জীবন বাঁচাতে সক্ষম:

মাত্র এক ঘণ্টা সময় ব্যয় করে রক্তদানের মাধ্যমে আপনি তিন জন মানুষের জীবন বাঁচাতে পারেন। রক্তদানের মাধ্যমে হাসপাতালগুলিতে জরুরিভিত্তিক রক্তের জোগান নিশ্চিত হয়, যা দুর্ঘটনা, অস্ত্রোপচার বা অন্যান্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়।

রক্তদান সম্পর্কিত প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা:

“রক্তদান খুব কষ্টদায়ক এবং আমি রক্ত দেওয়ার বয়সের জন্য উপযুক্ত নই”

অনেকেই মনে করেন রক্তদানের পদ্ধতি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। এই বিষয়টি ৯০ শতাংশ ভুল। রক্তদানের পদ্ধতি খুবই সহজ এবং অল্প ব্যথার অনুভূতি হয়। রক্তদানের জন্য বয়স সাধারণত ১৮ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে হওয়া দরকার (নতুন দাতাদের ক্ষেত্রে ৬০ বছর পর্যন্ত)। যদি আপনার ওজন কমপক্ষে ৪৫ কেজি হয় এবং আপনি যদি সুস্থ থাকেন, তবে আপনি নিশ্চিন্তে রক্তদান করতে পারবেন।

“রক্তদান করতে অনেক সময় লাগে এবং রক্ত দিলে দুর্বলতা অনুভব হবে”

রক্তদানের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে সময় লাগে মাত্র এক ঘণ্টা। রক্তদানের প্রকৃত সময় ৮-১০ মিনিট। এর পরে কিছু ক্ষণ বিশ্রাম নিতে বলা হয় এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে হালকা খাবার দেওয়া হয়। রক্তদান করলে শরীরে খুব দ্রুত নতুন রক্ত তৈরি হয়। ফলে দুর্বল হওয়ার কোনও কারণ নেই।

“রক্তদান শুধুমাত্র নির্দিষ্ট রক্তের গ্রুপের মানুষদের জন্য”

রক্তদানের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম ভুল ধারণা হল, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট রক্তের গ্রুপের মানুষেরাই রক্ত দিতে পারেন। আসলে প্রত্যেকটি রক্তের গ্রুপই গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, ‘ও(O)-পজিটিভ’ রক্তের গ্রুপকে ‘সর্বজনীন দাতা’ বলা হলেও প্রতিটি রক্তের গ্রুপেরই সমান চাহিদা রয়েছে। সমস্ত গ্রুপের রক্তই রোগীদের বিভিন্ন চাহিদা মেটাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

“ট্যাটু বা পিয়ার্সিং করালে রক্ত দেওয়া যায় না”

যদি আপনার ‘ট্যাটু’ বা ‘পিয়ার্সিং’ কোনও লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানে করা হয় এবং তার পরে ১২ মাস পার হয়ে যায়, তবে রক্তদানে কোনও সমস্যা নেই। এ ছাড়া, অনেক ধরনের ওষুধ খেলেও রক্তদানে সমস্যা হয় না। তবে কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

“জীবনে এক বারই রক্ত দেওয়া যায়”

এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা! সুস্থ ব্যক্তিরা প্রতি তিন মাস অন্তর রক্তদান করতে পারেন। শরীর পুনরায় দ্রুত রক্ত তৈরি করতে পারে। ফলে নিয়মিত রক্তদান করা সম্ভব এবং এই মহৎদান অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করে।

সুস্থ ও সঠিকভাবে রক্তদান করার আগে কী কী করণীয়:

  • পর্যাপ্ত পরিমাণে জল বা তরল কিছু পান করুন।
  • পুষ্টিকর খাবার খান এবং আগের রাতে ভাল ভাবে ঘুমিয়ে নিন।
  • রক্ত দিতে যাওয়ার সময় আরামদায়ক ও ঢিলেঢালা পোশাক পরুন, যাতে হাত সহজেই গুটিয়ে নেওয়া যায়।
  • যে কোনও শারীরিক সমস্যা থাকলে রক্তদানের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ করে নিন।

রক্তদান শুধু অন্যের জীবন বাঁচায় তা-ই নয়, এটি আপনার নিজের স্বাস্থ্যের জন্যও খুব উপকারী। পাশাপাশি রক্তদান সমাজকে আরও মানবিক ও সহানুভূতিশীল করে তোলে। তাই ভুল ধারণা ও বিভ্রান্তি দূর করে রক্তদানের মতো মহৎদানে এগিয়ে আসুন, কারণ প্রতিটি রক্তদানই অত্যন্ত মূল্যবান।

রক্ত দিন, জীবন বাঁচান এবং অন্যের জীবনের নায়ক হয়ে উঠুন।

তথ্যসূত্র:

চিকিৎসক অঞ্জলি হাজারিকা

মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিনিয়র এডিএম গ্রেড)

ভারপ্রাপ্ত - ‘ব্লাড ট্রান্সফিউশন সার্ভিসেস’ (রক্ত ​​সঞ্চালন পরিষেবা)

কার্ডিয়ো - নিউরো সেন্টার

অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস,

নিউ দিল্লি - ১১০০২৯

এই প্রতিবেদনটি ‘এলজি ইলেক্ট্রনিক্স ইন্ডিয়া লিমিটেড’-এর সঙ্গে আনন্দবাজার ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন