সার্ভিক্যাল ক্যানসার
বিশ্ব জুড়ে সার্ভিক্যাল ক্যানসারের প্রতি তিন জন রোগীর মধ্যে এক জন ভারতের। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রও সার্ভিক্যাল ক্যানসারের কারণে সর্বাধিক সংখ্যক মৃত্যু প্রত্যক্ষ করে। জরায়ুর ক্যানসারের কারণে মৃত মহিলাদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই ভারতের।
জরায়ুর ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব এই রোগের ক্ষেত্রে একটি গুরুতর সমস্যা। জরায়ু ক্যানসার সম্পর্কিত সচেতনতা ও এর পূর্বাভাস নিয়ে সবিস্তার আলোচনা করেছেন কলকাতার অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের অ্যাকাডেমিক হেড এবং কনসালট্যান্ট সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট বিশেষজ্ঞ শুভদীপ চক্রবর্তী।
আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, সার্ভিক্যাল ক্যানসার ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রে একটি বড় বোঝাস্বরূপ। চিকিৎসক চক্রবর্তী বলেন, “জরায়ু মুখের ক্যানসারের কারণে মৃত্যুর নিরিখে বিশ্বের মধ্যে ভারত প্রথম। চিকিৎসা করতে আসা চার জন রোগীর মধ্যে তিন জনই এই রোগের পর্যায়ে রয়েছে। ভারতে এই ধরনের দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায়। তাই এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে।’’
সার্ভিক্যাল ক্যানসার সচেতনতার পরামর্শক ও সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট চিকিৎসক শুভদীপ চক্রবর্তী বলেন, “অনিয়মিত মাসিক রক্তপাত, মিলনের পর রক্তপাত, সহবাসের সময়ে ব্যথা, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব সার্ভিক্যাল ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ।’’
তা ছাড়াও চিকিৎসক চক্রবর্তী উল্লেখ করেছেন যে, গ্রামীণ এলাকার মহিলারাই বেশির ভাগ দুর্বলতা বা মাসিক স্বাস্থ্যবিধির অভাবের কারণে এই রোগে আক্রান্ত হন। এটি গ্রামীণ এলাকায় মহিলাদের মধ্যে মাসিক সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সচেতনতার অভাবকে তুলে ধরে।
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে জরায়ু মুখের ক্যানসার হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি)-এর দুটি স্ট্রেন দ্বারা সৃষ্ট হয়। ১৫-৫০ বছর বয়সীরা ৮০ শতাংশই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়।
কিন্তু কী ভাবে সংক্রামিত হওয়া এড়ানো যায়?
এই বিষয়ে চিকিৎসক চক্রবর্তী কয়েকটি সহজ পরামর্শ দিয়েছেন যা এই রোগে আক্রান্ত কোনও রোগীর প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হতে পারে। তিনি বলেছেন, “একাধিক যৌন সঙ্গী না থাকা, যৌনতায় সুশৃঙ্খল পদ্ধতি অবলম্বন, উপযুক্ত সময়ে টিকা দেওয়া সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস করে।"
টিকা এবং প্রাথমিক সনাক্তকরণের গুরুত্বের উপরও জোর দিয়েছেন চিকিৎসক চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “৯-১২ বছর বয়সী মেয়েদের অবশ্যই এইচপিভি ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত। এ ছাড়াও প্রাথমিক শনাক্তকরণের মাধ্যমে ভাইরাসের স্ট্রেন অনুযায়ী যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করা যেতে পারে।’’
চিকিৎসক চক্রবর্তীর মতে, সার্জারি এবং রেডিয়েশন থেরাপির মাধ্যমে এই রোগের প্রাথমিক শনাক্তকরণ খুব উন্নত পর্যায়ে কাজ করে। তাঁর সংযোজন , “দরকার শুধু একটি স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম, যার মধ্যে একটি ব্যথাহীন প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষা রয়েছে। প্রতি তিন বছরে ২০ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের জন্য এটি অপরিহার্য। এ ছাড়াও, এইচপিভি পরীক্ষা রোগের প্রাথমিক লক্ষণকে শনাক্ত করে।’’
সাক্ষাৎকারের শেষে চিকিৎসক চক্রবর্তী জরায়ু মুখের ক্যানসারের সঙ্গে মোকাবিলা করার গুরুত্বকেও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমাদের অবশ্যই জরায়ু মুখের ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করা, স্ক্রিনিং করা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসার জন্যে এগিয়ে আসতে হবে। আসুন আমরা সবাই এই সার্ভিক্যাল ক্যানসারের ঊর্ধ্বে উঠি।’’
যে কোনও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রশ্নের জন্য, অ্যাপোলোতে যোগাযোগ করুন:
জরুরি নং: ১০৬৬
হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩৪৪২০২১২২
ই-মেইল আইডি: infokolkata@apollohospitals.com
এই প্রতিবেদনটি ‘অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল’-এর সঙ্গে আনন্দবাজার ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।