‘দুর্নীতিতে মেয়েরা একটু কমই জড়ান। দুর্নীতিতে মেয়েদের চেয়ে অনেক অনেক এগিয়ে রয়েছেন ছেলেরা।’
‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’-এর একটি অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার এই ভাবেই নারীদের মূল্যবোধ সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়নের কথা জানালেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ।
হাসিনা বলেন, ‘‘মেয়েদের হাতে কাজ দিলে তাঁরা তা অত্যন্ত সুনিপুণ ভাবে করেন। দুর্নীতিতে মেয়েরা একটু কম জড়ান। ছেলেরা একটু বেশি জড়ান, এতে কোনও সন্দেহ নেই। তাই নারীদের আর এ ভাবে অবহেলা করা যাবে না।’’
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর আগার গাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। মহিলাদেরও যে আত্মসচেতন হতে হবে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে হাসিনা বলেন, ‘‘আমাদের কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকলে চলবে না। নিজেদের এগিয়ে যেতে হবে। নিজের মর্যাদা নিজেকেই কর্মের মধ্য দিয়ে অর্জন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এক জন মেয়ে যদি সারা দিন কাজ করে আঁচলে বেঁধে কিছু টাকা নিয়ে আসেন, তা হলে সংসারে তার দাম থাকে। আর্থিক ভাবে নিজেকে স্বচ্ছল করতে পারলে সংসার, সমাজ সবাই তাঁকে দাম দেবে। একটি সংসার সুখের করতে মেয়েদের অনেক অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। আশা করি, আমার বোনেরা সেই দায়িত্ব পালন করবেন। কথায় আছে যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে। মেয়েরা সব পারেন। ঘরে যেমন কাজ করতে পারেন, বাইরেও কাজ করতে পারেন।’’
আরও পড়ুন- জামাত নেতা মির কাসেমের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট
বাংলাদেশে নারীদের সামাজিক অবস্থানটা এখন ঠিক কী রকম আর তাকে আরও উন্নত করে তোলার জন্য কী কী করা প্রয়োজন, তা বোঝাতে গিয়ে হাসিনা বলেন, ‘‘আমরা যত বেশি সুযোগ সৃষ্টি করতে পারব, তত বেশি কাজ করার সুযোগ মহিলারা পাবেন। এ দেশে সরকারের প্রধান, সংসদের স্পিকার, বিরোধী দলনেতা, সংসদ উপ-নেতা সকলেই নারী। বিশ্বের কোথাও এ ধরনের দৃষ্টান্ত নেই। বিশ্বের অনেক দেশ আছে, যারা ধনী। উন্নয়নে যারা বিশ্বজুড়ে মোড়লগিরি করে বেড়ায়, তারা কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো নারীপ্রধান সরকার গড়ে দেখাতে পারেনি। তারা নারীর ভোটের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে অনেক পরে।’’
এর পর হাসিনা বলেন, ‘‘এখনও নারীরা মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। কাজ করলেও ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত। তাঁরা এখনও অবহেলিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা যুদ্ধ হলে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন। কারণ, তাঁরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। আমাদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সমাজের অর্ধেক নারীকে বাদ রেখে উন্নয়ন কখনওই সম্ভব নয়। আমরা যদি মানবদেহের কথা বলি, একটা অংশ পঙ্গু হলে চলাফেরা কত কষ্টকর, সেটা সবাই উপলব্ধি করতে পারে। সে বিবেচনা করেই আমাদের সবাইকে চিন্তা করতে হবে, সমাজের সবাইকে নিয়েই এক সঙ্গে সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এগোতে হবে।’’