আজ ভোট, সুরক্ষায় মুড়েছে বাংলাদেশ

পরিবেশ আপাত শান্ত। কিন্তু রবিবারের নির্বাচনে ‘অভূতপূর্ব নাশকতা ও হিংসার’ আশঙ্কা করে গোটা বাংলাদেশকে কার্যত নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলেছে সরকার। গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে সারা দেশে আগামী কাল রাত পর্যন্ত থ্রি-জি ও ফোর-জি মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

কুদ্দুস আফ্রাদ

ঢাকা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৪৮
Share:

তোড়জোড়: কড়া নিরাপত্তায় ব্যালট বাক্স নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছেন কর্মীরা। শনিবার বাংলাদেশের রাজশাহিতে। নিজস্ব চিত্র

পরিবেশ আপাত শান্ত। কিন্তু রবিবারের নির্বাচনে ‘অভূতপূর্ব নাশকতা ও হিংসার’ আশঙ্কা করে গোটা বাংলাদেশকে কার্যত নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলেছে সরকার। গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে সারা দেশে আগামী কাল রাত পর্যন্ত থ্রি-জি ও ফোর-জি মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাস, ট্রেন, স্টিমার-সহ সব যানবাহন চলাচলও বন্ধ। এমনকি জরুরি পরিষেবা ছাড়া হেলিকপ্টারের উড়ানেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

Advertisement

বাংলাদেশের মানুষ বলছেন, ভোট এই প্রথম হচ্ছে না। কিন্তু এমন আঁটোসাঁটো নিরাপত্তায় কার্যত সরকারি হরতালের পরিস্থিতি এর আগে দেখা যায়নি। শনিবার থেকেই রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম-রাজশাহির মতো বড় শহরে জনজীবন ছিল স্তব্ধ। রাস্তায় মোড়ে মোড়ে সেনাসদস্যদের টহল দিতে দেখা গিয়েছে। এর মধ্যেই ভোটকর্মীরা ব্যালটবাক্স ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে ভোটকেন্দ্রগুলিতে রওনা হয়েছেন। তাঁদের জন্য কড়া সুরক্ষার বন্দোবস্ত। তবে গ্রামে এই শ্বাসরুদ্ধকর ছবিটা অনুপস্থিত।

সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ শনিবারও বলেছেন, ‘‘বিগত ৪৭ বছরে এমন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ভোটের আগে দেখা যায়নি।’’ কিন্তু তার পরেও কেন এই বজ্রআঁটুনি?

Advertisement

নির্বাচনী কথা • আসন: ৩০০ (২৯৯) • ভোটার: ১০,৪২,৩৮,৬৭৭ • প্রার্থী: ১৮৬১

গোয়েন্দা দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের পরিকল্পনায় জামাতে ইসলামি ও বেশ কয়েকটি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন নির্বাচনের দিন নাশকতার চক্রান্ত করেছেন বলে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য এসেছে। ইতিমধ্যেই বিপুল অস্ত্র ও অর্থ বাংলাদেশে এসেছে। এই নাশকতা অভূতপূর্ব হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা যে কোনও রকমের হিংসা প্রতিরোধের জন্যই গোটা দেশকে কঠোর সুরক্ষায় মুড়ে ফেলতে হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামি লিগও ভোটের আগের দিন ভোটারদের উৎসবের মেজাজে ভোট দিতে আসার আবেদন করেও ভোট বানচালে বিএনপি-জামাতের চক্রান্তের অভিযোগ করেছেন।

আরও পড়ুন: বজ্র আঁটুনিতে রবিবার ভোট বাংলাদেশে, বন্ধ থ্রি-জি ফোর-জি

দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়্যারম্যান এইচ টি ইমাম বলেন, ‘‘আমাদের কাছে খবর আছে, ভোটের দিন বিএনপি-জামাত নির্বাচন বানচালের জন্য ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে পারে। তারা নৈরাজ্য, হিংসা ও সন্ত্রাস তৈরি করতে পারে। এমনকি ভুয়ো ব্যালট, ভুয়ো বুথ তৈরি করে তার ভিডিয়ো ছবি তুলে গুজব সৃষ্টি করতে পারে।’’ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামি লিগের নেত্রী শেখ হাসিনা আশঙ্কা করছেন, ভোটের দিন সকালে নির্বাচন বয়কটের ডাক দিতে পারে বিএনপি-জামাত। তিনি বলেন, ‘‘সকলের কাছে আবেদন, বিএনপির ঘোষণায় ভোট থেকে সরবেন না।’’ দেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা কঠোর হাতে হিংসা মোকাবিলার জন্য পুলিশ ও প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন।

বিএনপি জোট : ২৮২, জাতীয় পার্টি: ১৭৫, নির্দল: ১২৮, নিরাপত্তা সদস্য: প্রায় ৭ লক্ষ

দুর্নীতির দায়ে কারাদণ্ড পেয়ে বন্দি থাকায় এ বার ভোটে অংশ নিতে পারছেন না বিরোধী দল বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া। তবে জেল থেকে বিবৃতি দিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা কর্মীদের ভোটের আগে থেকে ভোট গণনা পর্যন্ত বুথগুলির পাহারায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। খালেদা বলেছেন— ‘‘ভয়-ভীতি, হুমকি উপেক্ষা করে সকলে ভোট দিন। শনিবার থেকেই বুথে বুথে পাহারা দিন। ভোট হয়ে যাওয়ার পরেও বুথ ছাড়বেন না।

আরও পড়ুন: ঢাকায় সেনা টহল, আতঙ্ক হুমকি বার্তায়

ভোট গণনার পরে হারজিত নিশ্চিত হওয়ার আগে কেউ কোনও কাগজে সইও করবেন না।’’ বিএনপি-জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা কামাল হোসেন অভিযোগ করেছেন, শাসক দলের দুর্বৃত্তরা নিরাপত্তার বেড়াজালের সুযোগে ভোট লুটের চক্রান্ত করছেন। তিনি বলেন, ‘‘ভোটাররা সকাল সকাল ভোট দিতে যান। তা হলেই দুর্বৃত্তরা বুথ ছেড়ে পালাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement