সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে সেই ভাস্কর্য। ছবি:এএফপি।
হেফাজতে ইসলাম-সহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার মাঝরাতে সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে সরিয়ে নেওয়া ভাস্কর্যটি একই আদালত চত্তরের অ্যানেক্স ভবনের সামনে পুনরায় স্থাপন করা হয়েছে। শনিবার রাত ১০টা থেকে ভাস্কর্য আবারও স্থাপনের কাজ শুরু হয়ে রাত ১২ টায় শেষ হয়েছে। নির্মাতা ভাস্কর মৃণাল হক সেখানে উপস্থিত থেকে স্থাপনের কাজটি শেষ করেছেন।
রাতে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে একটি ট্রাকে ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে এনে কপিকল দিয়ে নামানো হয়। নতুন করে স্থাপনের কাজ শুরু কাজে অংশ নেন ৩০ জন শ্রমিক। এই স্থাপনকার্য চলাকালে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সাংবাদিকদেরও ভিতরে যেতে দেওয়া হয়নি। ভাস্কর্যটির স্থপতি মৃনাল হক শনিবার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রাত ১২টার দিকে এটি কংক্রিটের ভিত্তির ওপর বসানো সম্পন্ন হয়েছে। তার খেদ- 'সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের পেছনে অ্যানেক্স ভবনের এই জায়গায় বাইরের লোকজন তেমন আসে না। এখানে বসানো না বসানো একই কথা। এখানে কেউ দেখবে না, জানবে না, শুধু কোর্টের লোকজনই দেখবে।'
গত বছরের শেষে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রাঙ্গনে রোমান যুগের ন্যায়বিচারের প্রতীক 'লেডি জাস্টিসে'র আদলে এই ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। দু’মাস পর এ নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী এক বিবৃতিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে ভাস্কর্যটি অপসারণের দাবি জানান। তার সাথে আরও কয়েকটি ইসলামি দল একই দাবি তোলে। উল্টো দিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ছাত্র সংগঠন ভাস্কর্যটির না সরানোর দাবিতে পাল্টা আন্দোলন গড়ে তোলে।
আরও পড়ুন: ৬৫০ টাকা ফেললেই এখন বাসে খুলনা-কলকাতা
এই সময়ে গত ১১ এপ্রিল রাতে গণভবনে কওমি মাদ্রাসার আলেমদের সঙ্গে এক সাক্ষাতে ভাস্কর্যটি সরাতে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই বৈঠকে কওমি মাদ্রাসাগুলোর শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধি এবং হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীও উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় শেখ হাসিনা এই বিষয়ের যুক্তি হিসেবে এর নন্দনতাত্ত্বিক সমস্যার পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ইদগাহের অবস্থানের কথাও বলেছিলেন। গ্রিক দেবীকে পরানো শাড়ি নিয়েও প্রশ্ন তুলে-ভাস্কর্যটি সরাতে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।
পরবর্তীতে গত বৃহস্পতিবার মাঝরাতে ভাস্কর্যটি সরানোর কাজ শুরুর সময়েই সুপ্রিম কোর্টের তালাবদ্ধ ফটকের বাইরে বিক্ষোভ দেখান ব্লগার, ছাত্র ও সংস্কৃতিকর্মীরা। তাঁরা ভাস্কর্যটি অপসারণের প্রতিবাদ জানান। পরদিন শুক্রবার ছাত্রদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষও হয়। জল কামান কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের অনেককে আটকও করা হয়। ধৃত চারজনকে আজ, রবিবার, অবশ্য জামিন দিয়েছে আদালত।