ঢাকা কাণ্ডের পর কলকাতা নিয়ে উদ্বিগ্ন মোদী, পাশে চান মমতাকে

বাংলাদেশে উদ্ভূত নাশকতামূলক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে চাইছেন। ঢাকার গুলশানের কাফেতে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৬ ১৫:৫৪
Share:

সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে প্রস্তুত বাহিনী।

বাংলাদেশে উদ্ভূত নাশকতামূলক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে চাইছেন।

Advertisement

ঢাকার গুলশানের কাফেতে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব তথা পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডার, প্রবীণ আমলা ভাস্কর খুলবে রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। ঘটনার সম্ভাব্য কারণ, পরিণতি এবং ভবিষ্যৎ সতর্কতা নিয়ে আদানপ্রদান হচ্ছে উভয়পক্ষের মধ্যে।

সচিবালয় সূত্রের বক্তব্য, উত্তপ্ত বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের নিরাপত্তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের মোট দৈর্ঘ্য ৪০৯৬ কিলোমিটার, যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত দৈর্ঘ্য ২২১৭ কিলোমিটার। অর্থাত্ দুই রাষ্ট্রের সীমান্ত দৈর্ঘ্যের অর্ধেকের চেয়ে বেশি পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ভাগ করে বাংলাদেশ। ফলে এই উদ্বেগ খুবই স্বাভাবিক বলেই মনে করছে নয়াদিল্লি।

Advertisement

গরু এবং ফেন্সিডিল চোরাপাচার নিয়ে দু্ দেশের সীমান্ত বরাবরই উত্তপ্ত থেকেছে। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি তাতে অনেক বেশি স্পর্শকাতর বিষয় বাংলাদেশ থেকে রাজ্যে জঙ্গি অনুপ্রবেশের বিষয়টি। এই উদ্বেগ অবশ্য নেহাতই আজকের নয়। পশ্চিমবঙ্গে বাম জমানায় যখন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তখন তত্কালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী বারবার বৈঠক করেছেন তাঁর সঙ্গে। সে সময় কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে জানিয়েছিল, সীমান্তবর্তী কিছু মাদ্রাসায় মৌলবাদের চাষবাস হচ্ছে। সে সময় রাজ্য সরকারও বিষয়টি খতিয়ে দেখে কিছু পদক্ষেপ করে।

কিন্তু সেই পদক্ষেপ যে যথেষ্ট নয় তার প্রমাণ মিলেছে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর। অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশের মৌলবাদী জিহাদিরা এখনও প্রশিক্ষণের জন্য সীমান্তকে বেছে নিচ্ছে। বর্ধমানের শিমুলিয়ায় বাংলাদেশি জামাতদের মৌলবাদী তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, এমন তথ্যও উঠে এসেছিল এনআইএ-র প্রাথমিক তদন্তে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের ভূকৌশলগত অবস্থানের কথা মাথায় রেখে স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী-- এই দু ধরণের ব্যবস্থাই নেওয়ার কথা ভাবছে কেন্দ্র এবং রাজ্য, নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বিভিন্ন মঞ্চে জানিয়েছেন, পূব যদি শক্তিশালী না হয়, তাহলে গোটা ভারতই দু্র্বল থেকে যাবে। অ্যাক্ট ইস্ট-এর মাধ্যমে তিনি পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন, তথা নিরাপত্তার প্রশ্নটির দীর্ঘমেয়াদী সমাধান করতে চাইছেন।

পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শীঘ্রই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন মোদী। আগামি ১৮ তারিখ শুরু হচ্ছে সংসদের বাদল অধিবেশন। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, অধিবেশন শুরু হওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি আসবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠকে বাংলাদেশের বিষয়টি গুরুত্ব পেতে চলেছে। এর আগেও মনমোহন জমানায় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী দু’বার কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়ে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননও মমতাকে বাংলাদেশ সীমান্তে জঙ্গি তত্পরতা নিয়ে রিপোর্ট দিয়েছিলেন।

রাজ্য সরকার সূত্রের খবর, গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ওয়াকিবহাল। সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্তাদের সঙ্গে তিনি বৈঠক শুরু করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গেও সহযোগিতার মাধ্যমে চলতে চাইছেন তিনি। সম্প্রতি বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, “বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত সখ্যতা যথেষ্ট। মমতা তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাসিনাকে আমন্ত্রণও করেছিলেন।”

বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সহযোগিতা বাড়ুক এটা কেন্দ্রও চাইছে। শুধুমাত্র সন্ত্রাস মোকাবিলায় নয়, তিস্তা চুক্তিও রয়েছে দ্বিপাক্ষিক তালিকায়। পাশাপাশি আমেরিকাও সন্ত্রাসবিরোধী মঞ্চে পশ্চিমবঙ্গে সামিল করতে চাইছে এবং সেটি প্রধানমন্ত্রীর সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারেই। সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসনের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি টমাস এ শ্যাননের কলকাতা সফরটিও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। ভারতে তাঁর গন্তব্য কোন শহরে হবে, তা নিয়ে আগেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেছিল হোয়াইট হাউস। বিনিয়োগ এবং লগ্নির পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের ভূকৌশলগত অবস্থানের দিকটিও বিবেচিত হয়েছিল শ্যাননের কলকাতা সফরের প্রশ্নে। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, কলকাতায় দু’তরফের বৈঠকে (মমতা এবং শ্যাননের মধ্যে) নিরাপত্তার প্রশ্নটিও গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়েছে।

আরও পড়ুন:
সন্ত্রাসের ছোবলে রক্তাক্ত ঢাকা! রাত ঢাকল আতঙ্কে

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement