খালেদা জিয়া এবং সুষমা স্বরাজ। —ফাইল চিত্র।
ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ঢাকা সফরে এসে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করুন, চায় না ঢাকা। সরকারি ভাবে তারা এ বিষয়ে কিছু না বললেও শাসক আওয়ামি লিগের নেতা-মন্ত্রী এবং প্রশাসনের কর্তাদের মতে, এর ফলে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভাল বার্তা যাবে না।
দু’দিনের সফরে রবিবার ঢাকায় পৌঁছচ্ছেন সুষমা। ভারতের অর্থসহায়তায় নির্মিত ১৫টি প্রকল্পের শিলান্যাস করার কথা তাঁর। সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বসবেন সুষমা। পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বাড়ানোর কৌশল হিসাবে চিন বাংলাদেশে বিপুল বিনিয়োগ করছে, যা নিয়ে কিছুটা কপালে ভাঁজ দিল্লির। এই পরিস্থিতিতে মাস খানেক আগেই ঢাকা ঘুরে গিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তার পরেই সুষমার এই সফরে দু’পক্ষের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে বলে মনে করছে ঢাকা ও দিল্লি। কিন্তু বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর বৈঠকে খুশি নয় শেখ হাসিনা প্রশাসন।
আওয়ামি লিগের এক বর্ষীয়ান মন্ত্রীর কথায়, ‘‘ভারত-বিরোধী রাজনীতি করেন খালেদা। এখন বিরোধী নেত্রীও তিনি নন। এর আগে ঢাকা সফরে আসা রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সময় নিয়েও তিনি দেখা করতে যাননি। এর পরে সুষমা তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন কেন?’’ বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘চিকিৎসার নামে লন্ডনে বসে আইএসআইয়ের সাহায্যে চোরাপথে ক্ষমতা দখলের চক্রান্ত চালিয়েছেন খালেদা। সে বিষয়ে গোয়েন্দারা সরকারকে সবিস্তার রিপোর্ট দিয়েছে। দিল্লিও তা জানে। তার পরেও সুষমাজি তাঁর সঙ্গে বৈঠক করলে ভুল বার্তা যাবে।’’
ঠিক হয়েছে রবিবার রাত আটটায় ঢাকার গুলশনে খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’-য় গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন সুষমা। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, নির্বাচনে অংশ না-নিলেও বিএনপি বাংলাদেশের ব়ৃহত্তম বিরোধী দল। খালেদা জিয়া প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। সুষমার সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয়ও রয়েছে তাঁর। খালেদার সঙ্গে দেখা করাটা তাই সুষমার সৌজন্যের মধ্যেই পড়ে। তা ছাড়া কোনও নির্দিষ্ট দলের প্রতি আনুগত্য দেখাতে চায় না দিল্লি।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার দাবি, নির্বাচনে পারবেন না বুঝে শরিক জামাতে ইসলামির মাধ্যমে লন্ডনে গিয়ে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের সহযোগিতায় ক্ষমতা দখলের চক্রান্ত করছিলেন খালেদা। এ বিষয়ে গোয়েন্দাদের পাঠানো তথ্য ঢাকা ও দিল্লির কাছে রয়েছে। লন্ডনে আইএসআইয়ের কর্তা জুনাইদ আলমের মাধ্যমে ব্রিগেডিয়ার আসফাক, কর্নেল নাভিদ ইকবালের মতো পাক গুপ্তচর বিভাগের মাথাদের সঙ্গে বারে বারে যোগাযোগ করেছেন তিনি। ইউরোপে গা-ঢাকা দিয়ে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামাত নেতা চৌধুরী মইনুদ্দিনের সঙ্গেও দেখা করেছেন খালেদা। তিন জন পাক জেনারেলও তাঁর সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন। অগস্ট ও সেপ্টেম্বরে সরকার ফেলার অন্তত তিনটি চক্রান্ত ঠেকিয়েছে বাংলাদেশের প্রশাসন। দিল্লিও এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা করেছে।
যদিও বিএনপি-র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি গোয়েন্দাদের এই তথ্যকে ‘নেত্রীর ভাবমূর্তি নষ্টের চক্রান্ত’ বলে বর্ণনা করেছেন। আনন্দবাজারকে রিজভি বলেন, ‘‘নেত্রী একান্তই চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন। গোড়া থেকেই মিথ্যাচার চলছে। এমনও বলা হয়েছিল, তিনি আর ফিরবেনই না।’’ রিজভির কথায়, খালেদা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। ঘুরপথে ক্ষমতা দখলের চক্রান্ত তিনি কখনওই করতে পারেন না।
সুষমার সঙ্গে বৈঠকে খালেদা দুই বন্ধু দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাই বলবেন বলে দাবি বিএনপি মুখপাত্রের।