ননদ-বৌদি: নিপু মল্লিক ও পূজা মল্লিক। কতুপালংয়ের শরণার্থী শিবিরে। নিজস্ব চিত্র
মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে আসা মুসলিম রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েকশো হিন্দু পরিবারও। কিন্তু কাদের হামলায় ঘরছাড়া হলেন, তা নিয়েই ধন্দে তাঁরা।
রাখাইনে এ দিনই হিন্দুদের একটি গণকবর মিলেছে। সে দেশের প্রশাসন এই হত্যাকাণ্ডের জন্য রোহিঙ্গা জঙ্গিদেরই দায়ী করেছে। রাখাইনের ফকিরাবাজার থেকে সব হারিয়ে আসা অনিতা-পূজারাও ধন্দে— যারা তাঁদের বাড়িতে হামলা চালালো, তারা কি সত্যিই মায়ানমারের সেনা? তা হলে বর্মীর পাশাপাশি চাটগাঁইয়া বাংলাতেও কেন কথা বলছিল তারা? চাটগাঁইয়া ভাষা তো বলে রোহিঙ্গারা!
ফকিরাবাজার থেকে কী পরিস্থিতিতে পালিয়ে এসেছেন, তা বর্ণনা করতে গিয়ে এখনও আতঙ্কে কাঁপছেন হিন্দু শরণার্থীরা। তবে এই শিবিরে থাকা অনেকেরই দাবি, যারা হামলা চালিয়েছে তারা সেনাবাহিনীর লোক হয়তো নয়। রোহিঙ্গাদের ওপর ঝাল মেটাতে মায়ানমারের সেনারা হিন্দুদের কেন খুন করবে? তা হলে কি সম্পত্তি ও সোনা-দানার লোভে অন্য কেউ পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে?
কতুপালংয়ের একটি শিবিরে রাখা হয়েছে পাঁচশোর বেশি হিন্দু শরণার্থীকে। রিকা ধরের স্বামীর সোনার দোকান ছিল। দোকানের সোনা লুঠ করে তাঁর চোখের সামনেই মারা হয় সবাইকে। রিকা বলেন, ‘‘সব টাকা বার করে দেওয়ায় ছেলে দু’টোকে ছেড়ে দিয়েছে। আমি আর দেরি করিনি। বোরখা পরে পালিয়ে এসেছি।’’
আরও পড়ুন: ত্রাণেও দুর্গা সহায়, অসুস্থ হলেও হাঁটছে রোহিঙ্গারা
স্বামী, শ্বশুর-সহ একাধিক আত্মীয়কে স্রেফ গলা কেটে খুন করা হয়েছে, দাঁড়িয়ে দেখেছেন অনিতা ধর। অন্তঃসত্ত্বা ওই তরুণী গৃহবধূ কোনওক্রমে বোরখা পরে রোহিঙ্গা মহিলাদের সঙ্গে পালিয়ে এসেছেন। শিবিরে আশ্রয় নেওয়া অনিতা সোমবার বলেন, ‘‘কালো পোশাকে মুখ ঢাকা একদল লোক সকাল ৮টা নাগাদ আসে। স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ির পাশাপাশি ননদের তিন বছরের মেয়েকেও তারা ছাড়েনি।’’
একই এলাকার পূজা মল্লিকও বছর তিনেকের ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশে এসে খুঁজে পেয়েছেন ননদ নিপু মল্লিককে। নিপু চিকনছড়িতে মামার বাড়ি গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও সকলের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ায় তিনি আজ শরণার্থী। বৌদি পূজার কাছেই জেনেছেন, বাড়িতে আর কেউ বেঁচে নেই।