বাংলাদেশে আশা জাগানো গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এখন ধুঁকছে

সংকট খটমট শব্দ। কানে খটাস করে লাগে। সোনা ছুঁলে লোহা হয়। সংকটের ছাপ বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাঙ্কেও। নোবেল প্রাইজ পাওয়া যে ব্যাঙ্ক বিশ্বে ঝড় তুলেছিল, তার এখন করুণ পরিস্থিতি। অন্যতম স্থপতি শান্তির নোবেল জয়ী মোহম্মদ ইউনুস ব্যাঙ্কের সঙ্গে নেই।

Advertisement

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৬ ১৪:৪১
Share:

সংকট খটমট শব্দ। কানে খটাস করে লাগে। সোনা ছুঁলে লোহা হয়। সংকটের ছাপ বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাঙ্কেও। নোবেল প্রাইজ পাওয়া যে ব্যাঙ্ক বিশ্বে ঝড় তুলেছিল, তার এখন করুণ পরিস্থিতি। অন্যতম স্থপতি শান্তির নোবেল জয়ী মহম্মদ ইউনূস ব্যাঙ্কের সঙ্গে নেই। তাঁর প্রচলিত মাইক্রো ক্রেডিট সিস্টেম বা ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প শুধু ভারত কেন অন্য অনেক দেশ অনুসরণ করতে চেয়েছিল। এর লক্ষ্য ছিল, মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষদের টেনে তোলা। প্রকল্পটা ভাল হলেও সুদ ছিল বড্ড বেশি। যারা ঋণ নিল তাদের বেশির ভাগই ফেরত দিতে পারল না। জলে গেল প্রকল্প। বাঁশও গেল বাঁশরীও বাজল না।

Advertisement

সবার উপরে যেমন মানুষ সত্যি, সব বাণিজ্যে তেমন প্রফিট সত্যি। ‘প্রফিট ইজ দ্য বটম লাইন’। সেটা না থাকলে বা কমতে থাকলে সব গেল। ব্যাঙ্কটির এক বছরে মুনাফা নেমেছে ১৩৩ কোটি থেকে ৪৩ কোটিতে। দেশ জুড়ে ছড়িয়ে শাখা-প্রশাখা। মোট ২ হাজার ৫৪৪টি শাখায় কাজ চালিয়েও যদি লাভ বাড়ান না যায় তাহলে কী করা যাবে। গ্রামীণ ব্যাঙ্ক প্রত্যন্ত গ্রামে ছড়িয়ে পড়াতেই আশার আলো দেখেছিলেন শ্রমিক, কৃষক থেকে দারিদ্র্যদীর্ণ মানুষ। তারা ভেবেছিলেন, এই ব্যাঙ্কই তাদের দুরবস্থা দূর করবে। আরও রাস্তা খুলবে। আশ্বাসে ভুল ছিল না। আর পাঁচটা ব্যাঙ্ক যখন দূরে, এক মাত্র গ্রামীণ ব্যাঙ্ক তাদের কাছে এসে সাদরে ডেকে বলেছিল, তোমরা এস, আমরা তোমাদের জন্যই। তোমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। হল না। সব আশা শুকোল অচিরেই।

সবার কল্যাণের ভাবনা এখন শিকেয়। মুনাফা যদি তিন ভাগের এক ভাগে নেমে আসে উদ্বেগ বাড়বেই। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো পাল্লা দিয়ে কমছে মূলধন। বাড়ছে জালিয়াতি। তহবিল তছরূপের ঘটনা শুনলে শিউরে উঠত গ্রামীণ ব্যাঙ্ক। এখন তারাও এতে অভ্যস্ত। ঋণের টাকা পরিশোধের আগ্রহ নেই গ্রাহকদের। এক বছরে অনাদায়ী ঋণ বৃদ্ধি ৩৭৫ কোটি টাকা। আপাতত ব্যাঙ্কে মোট আমানতের পরিমাণ ১৭ হাজার কোটি। আমানতকারীরা ব্যাঙ্কের ওপর আস্থা হারাচ্ছে।

Advertisement

বিদেশি তহবিলও নিম্নগামী। ১৪০ কোটি থেকে নেমে ১৩০ কোটিতে। অনিয়মও কমছে না। পর্যবেক্ষণের অভাব। ৪৫১টি অনিয়মের ঘটনায় খেসারত ২৬ কোটি ৮৫ লাখ। অনেক কষ্টে ৫ কোটি ৭৮ লাখ আদায় করা গেছে। বাকিটা অনাদায়ী পড়ে আছে। নিট ইন্টারেস্ট মার্জিন হ্রাস পেয়েছে এক শতাংশ হারে।

চিকিৎসা না করে রোগীকে ফেলে রাখলে রোগ বাড়ে। সেটাই হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাঙ্কে। সমস্যা আছে কিন্তু প্রতিবিধানের ব্যবস্থা নেই। নিয়মিত বোর্ড মিটিং হওয়াটাও কর্মসূচির তালিকায় থাকছে না। ম্যানেজিং ডিরেক্টার পদটি খালি পড়ে আছে। ২০১৩র অগস্টে চেয়ারম্যান খোন্দকার মোজাম্মেল হক পদত্যাগ করলেও সেটা গ্রহণ করেনি সরকার। তবুও তিনি কর্মক্ষেত্র থেকে দূরে। ন’টি ডিরেক্টর পদ শূন্য। পূরণ করার অবকাশ নেই। পদগুলো নিয়ে মামলা চলছে। সরকার চাইছে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক নিজের ক্ষমতায় চলুক। সরকার নাক গলাবে না। লজ্জায় নোবেল জয়ী ব্যাঙ্কের যে নাক কাটা যাচ্ছে, তার কী হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement