ইতিহাসের ‘রোজ় গার্ডেন’ প্রাসাদ। ছবি: গেটি ইমেজেস।
বাইশ বিঘা জমির ওপর ১৯৩১ সালে বাড়িটি তৈরি করেছিলেন ঢাকার ধনী ব্যবসায়ী হৃষিকেশ দাস। করিন্থীয়-গ্রিক শৈলী অনুকরণে সাত হাজার বর্গফুটের মূল বাড়িটির দোতলায় রয়েছে একটি বিরাট জলসাঘর, যার মেঝে দামী শ্বেত পাথরের, সিলিংয়ে সবুজ কাচ দিয়ে তৈরি ফুলের নকশা। সামনে শান বাঁধানো পুকুরে শ্বেত পাথরের ঘাট। বিদেশ থেকে আনা পাথরের ভাস্কর্য ও ফোয়ারা দিয়ে সাজানো বাগান। তবে ফোয়ারা নয়, সে বাগানের আসল আকর্ষণ তার কয়েক হাজার গোলাপ গাছ— ইরাকের বসরা ছাড়া হল্যান্ড, বেলজিয়ামের নানা শহর থেকে বাছাই করে এনে বসানো হয়েছিল সেগুলো। শীত পড়লে আজও রংয়ের উৎসব। আর সেই কারণেই এই বাড়ির নাম ‘রোজ় গার্ডেন’।
এই বাড়ি-ই কিনে নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। বর্তমান মালিককে এ জন্য ৩৩১ কোটি ৭০ লক্ষ ২ হাজার ৯০০ টাকা দিতে হবে বলে বুধবার জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তবে স্থাপত্য ও গোলাপ বাগান ছাড়াও স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে ‘রোজ় গার্ডেন’-এর, আর সে জন্যই সরকারের এই সিদ্ধান্ত। ১৯৪৯-এর ২৩ জুন এই বাড়িতেই শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুসলিম লিগ ভেঙে গঠিত হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামি মুসলিম লিগ’। ১৯৫৫-এ নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে সেই দলই পরিণত হয় আওয়ামি লিগ-এ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিল যারা।
তবে শখের বাড়িটি তৈরির পরেই ব্যবসায় মন্দা নামে হৃষিকেশের। এক সময়ে দেউলিয়াই হয়ে যান। পুস্তক ব্যবসায়ী কাজি আব্দুর রশিদ ১৯৩৬-এ বাড়িটি কিনে প্রভিন্সিয়াল লাইব্রেরি গড়ে তোলেন। ১৯৬৬–তে মালিকানা পান তাঁর ভাই কাজি হুমায়ুন বশির। ১৯৭০-এ ‘বেঙ্গল স্টুডিয়ো ও মোশান পিকচার্স’ নামে একটি সংস্থা ‘রোজ় গার্ডেন’ প্যালেস ইজারা নিয়ে চলচ্চিত্রের শুটিং স্পট তৈরি করে। কিন্তু ১৯৮৯-এ বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রাসাদটিকে ‘সংরক্ষিত ভবন’ ঘোষণা করায় সে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এর পরে ১৯৯৩-এ ফের ‘রোজ় গার্ডেন’-এর দখল ফিরে পান কাজি আব্দুর রশিদের ছেলে কাজি আব্দুর রকিব।
তাঁর বিধবা স্ত্রী লায়লা রাকিবের কাছ থেকেই সরকার বাড়িটি কিনবে। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি বুধবারের বৈঠকে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে।