কড়া নিরাপত্তার মধ্যে চলছে ভোটগ্রহণ। ছবি: এএফপি
বাংলাদেশের ভোটগ্রহণে বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুথ-দখলের চেষ্টা, পাল্টা বাধা দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে দিনভর সরগরম গোটা বাংলাদেশ। এছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংঘর্ষ, বোমাবাজি, গুলি চালানোর খবরও পাওয়া গিয়েছে। ভোট সংক্রান্ত হিংসায় আহত হয়েছেন শতাধিক।
বিরোধী বিএনপি-জামাত জোটের অভিযোগ, বহু বুথে দলীয় এজেন্টকে মারধর করে হুমকি দিয়ে বাইরে বের করে দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে বিরোধীরা সন্ত্রাস করে ভোটকে অশান্ত করার চেষ্টা করেছে বলে পাল্টা অভিযোগ তুলেছে শাসক দল আওয়ামি লিগও।
যদিও বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের দাবি, বিক্ষিপ্ত কিছু হিংসার ঘটনা ছাড়া মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ হয়েছে।
আরও পড়ুন: লাইভ: চলছে বাংলাদেশে ভোট গণনা, এগিয়ে আওয়ামি লিগ
কুমিল্লা
কুমিল্লার চান্দিনার পশ্চিম বেলাশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে বিএনপির সমর্থকরা পাঁচটি ব্যালট বাক্স নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। পুলিশ তাদের রুখতে গুলি চালালে মৃত্যু হয় এক জনের। গুলিবিদ্ধ হন আরও এক জন। এছাড়া নাঙ্গলকোটের বটতলা ইউনিয়নের সন্ধ্যাইয়ল গ্রামে আওয়ামি লিগ ও বিএনপি-র কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে মৃত্যু হয় আরও একজনের।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার রাজঘর কেন্দ্রে ভোট সংক্রান্ত গন্ডগোলে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। জানা গিয়েছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৩ আসনে মহাজোটের প্রার্থী মোক্তাদির চৌধুরী ওই কেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে একদল দুষ্কৃতী তাঁর ওপর হামলার চেষ্টা করে। তার জেরে সংঘর্ষে এক জনের মৃত্যু হয়।
কক্সবাজার
কক্সবাজারের পেকুয়ায় আওয়ামি লিগ-বিএনপির সংঘর্ষে এক যুবলিগ কর্মীর মৃত্যু হয়। আহত হন আরও আট জন।
চট্টগ্রাম
ভোটগ্রহণ ঘিরে গত রাত থেকেই উত্তেজনা ছড়ায় চট্টগ্রামের পটিয়ায় পশ্চিম মালিয়ারা এলাকায়। ওই এলাকার একটি বুথ দখল ঘিরে আওয়ামি লিগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষে এক যুবকের মৃত্যু হয়। তিনি বিএনপি সমর্থক বলে জানা গিয়েছে। এই সংঘর্ষে গুলি চলে বলেও স্থানীয় সূত্রে খবর। গত রাতেও পটিয়ার গুরনখাইন এলাকায় বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। তাতে এক যুব লিগ কর্মী নিহত হন।
রাজশাহী
রাজশাহী-৩ আসনের মোহনপুরের পাকুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্রের বাইরে আওয়ামি লিগ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে এক জনের মৃত্যু হয়। মৃতের নাম মেরাজুল ইসলাম। অন্যদিকে রাজশাহী-১ আসনের একটি বুথ দখল করতে বিএনপি-জামাত জোটের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ ওঠে। দুপুর দেড়টা নাগাদ তানোর উপজেলার মহম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এক আওয়ামি লিগ কর্মীর মৃত্যু হয়।
বগুড়া
বগুড়ার বাঘুইল এলাকায় সংঘর্ষে এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। এ দিন ভোট দেওয়ার পর বুথের কাছে একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহেল-সহ আওয়ামি লিগের নেতাকর্মীরা। সেই সময় দু’তিনশো’ বিএনপি-জামাত নেতাকর্মী ওই কেন্দ্রে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সোহেল ও তাঁর অনুগামীরা বাধা দিলে সংঘর্ষ বেধে যায়। সেই সময় ওই ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছিলেন স্থানীয় এক ব্যক্তি ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছিলেন। তাঁকে বাঁশ-লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
রাঙামাটি
অন্য দিকে ভোট শুরুর আগেই রাঙামাটিতে আওয়ামি লিগ এবং বিএনপি-র কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। মৃত্যু হয় আওয়ামি লিগ নেতা বাসেরুদ্দিনের। বাসেরুদ্দিন ইউনিয়ন যুব লিগের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক। এই ঘটনায় জখম হয়েছেন দু’দলের ১৫ জন। কুমিল্লা এবং চট্টগ্রামে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন দুই বিরোধী সমর্থক।
এছাড়াও বিভিন্ন বুথে উত্তেজনা, হামলা, পাল্টা হামলার খবর পাওয়া গিয়েছে। খাস ঢাকার মিরপুরে বোমাবাজি হয়েছে। তার জেরে কিছুক্ষণের জন্য ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে হয়।
আরও পড়ুন: ‘পিটিয়ে খুন করে এস, আমরা দেখে নেব’, ছাত্রদের ‘শিক্ষা’ দিলেন উপাচার্য
শান্তিপূর্ণ ভোট: দাবি ইসি-র
তবে বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা দাবি করেছেন, দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার খবর পাওয়া গেলেও ভোটহগ্রহণ মোটের উপর শান্তিপূর্ণ। তবে পুরো প্রক্রিয়া শেষ হলে তবেই এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত বলা যাবে। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম ও নোয়াখালির মতো দুই এক জায়গায় বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা শুনেছি। তবে পুলিশ-প্রশাসন কড়া হাতে তা মোকাবিলা করেছে। এজেন্টদের বের করে দেওয়ার যে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা, সে বিষয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘‘এজেন্টনা এলে আমরা কিছু করতে পারি না।
(আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক চুক্তি, আন্তর্জাতিক বিরোধ, আন্তর্জাতিক সংঘর্ষ- সব গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের আন্তর্জাতিক বিভাগে।)