Bangladesh Election 2018

বজ্র আঁটুনিতে রবিবার ভোট বাংলাদেশে, বন্ধ থ্রি-জি ফোর-জি পরিষেবা, যানবাহনেও নিয়ন্ত্রণ

এটা বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোটদানের উত্সাহ নজর করার মতো।

Advertisement

অঞ্জন রায়

ঢাকা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ২০:২৯
Share:

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টহল সেনার। ছবি: এপি।

কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে রবিবার জাতীয় সংসদের ভোট হতে চলেছে বাংলাদেশে। প্রাক্ নির্বাচনী হিংসা এ বার অতীতের থেকে কম। কিন্তু ভোটের দিনেও, যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৈরি রাখা হয়েছে সে দেশের সেনা থেকে শুরু করে সব ধরনের নিরাপত্তা বাহিনীকে। বাংলাদেশ জুড়ে শনিবার থেকেই মোবাইলের থ্রি-জি এবং ফোর-জি পরিষেবা স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাইবার দুনিয়ায় গত বেশ কয়েক দিন ধরে যে তুমুল নির্বাচনী যুদ্ধ চলছিল, তা বন্ধ হয়েছে এর ফলে।

Advertisement

দলীয় সরকারের অধীনে এবং সব দলের অংশগ্রহণে, ১৯৯০ সালের পর এই প্রথম ভোট হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। যদিও আওয়ামি লিগ সভাপতি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, হার নিশ্চিত বুঝলে তার দায় ভোটপ্রক্রিয়ার উপর চাপিয়ে দিতে ভোটগ্রহণের মাঝপথ থেকেও সরে যেতে পারে বিএনপি-জামাতের জোট। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির অবশ্য এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, তাঁর দল ‘শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে।’

এটা বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোটদানের উত্সাহ নজর পড়ার মতো। আবার এই ভোটের দিকে তাকিয়ে আছে ভারত-সহ বাকি বিশ্বও। এই ভোট সফল এবং শান্তিপূর্ণ হলে, বাংলাদেশের নির্বাচনী গণতন্ত্রের ভিত আরও শক্ত হবে তাতে সন্দেহ নেই।

Advertisement

নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ব্যালট বক্স। ছবি: এপি।

আরও পড়ুন: আমরাই আসছি, মানুষ আমাদের চাইছেন: বিশেষ সাক্ষাৎকারে হাসিনা​

ভোটগ্রহণ চলবে রবিবার বাংলাদেশি সময় সকাল ৮টা (ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে ৭টা) থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত। তার পরই ভোটগণনা। ফলাফল একটু একটু করে বেরোতে শুরু করবে তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই।

বাংলাদেশের মোট ৩০০ সংসদীয় আসনের একটিতে প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে রবিবার ভোট হচ্ছে না। ২৯৯টি আসনে হবে ভোটের লড়াই। মোট ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোটকেন্দ্রের ২ লক্ষ ৬ হাজার ৪৭৭ ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ চলবে। মোট ভোটারের সংখ্যা এ বার ১০ কোটি ৪২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৬৭৮ জন। এর মধ্যে মহিলা ভোটার ৫ কোটি ১৬ লক্ষ ৬৬ হাজার ৩১২ এবং পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ২৫ লক্ষ ৭২ হাজার ৩৬৫ জন।

নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৮৩১ জন। এর মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে ১ হাজার ৭৪৫ জন প্রার্থী। ৯৬ জন নির্দল। বাংলাদেশের নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সবগুলোই এই ভোটে অংশ নিয়েছে। এ বারে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর। হাতপাখা প্রতীকে এই দলটির প্রার্থীর সংখ্যা ২৮১ জন।

এ বারের নির্বাচনে ৬টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করে ভোট গ্রহণ হবে। এই আসনগুলোয় ৪৮ জন প্রার্থী রয়েছেন। ৬ আসনের আসনে মোট ভোটার ২১ লক্ষ ২৪ হাজার ৫৪৪ জন। আসনগুলোর ৮৪৫টি কেন্দ্রের ৫ হাজার ৩৮টি ভোটকক্ষে ইভিএম থাকবে। ইতিমধ্যেই সব ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে গিয়েছে ব্যালট পেপার-সহ যাবতীয় নির্বাচনী সামগ্রী।

বাংলাদেশের একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময়ে- মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রতিটি ভোটকেন্দ্র নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৬ জন করে সদস্য। সশস্ত্র পুলিশ তিন জন, আনসার ১২ জন ও একজন করে গ্রাম পুলিশ। অন্য দিকে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে বাড়তি দুই পুলিশ-সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোট সদস্য থাকবেন মোট ১৮ জন। সব মিলিয়ে সারা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকছে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৭ লাখ সদস্য। সারা দেশে যানবাহন চলাচলের উপর আরোপ করা হয়েছে বিধিনিষেধ। রবিবারে বাংলাদেশে সরকারি ছুটিও ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় সেনাবাহিনীর টহল চলছে।

শনিবার ঢাকার আজিমপুর এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, “নির্বাচনে সারা দেশে সেনাবাহিনীর ৫০ হাজার সদস্য মোতায়েন রয়েছে। যদি প্রয়োজন হয় তা হলে আরও সেনা সদস্য নিয়োজিত করার জন্য স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে।” সেনাপ্রধান আরও বলেন, “আমরা পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার ও অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে একটি টিম হিসেবে একই সঙ্গে কাজ করব। কাউকে যেন কেউ ভয়ভীতি দেখাতে না পারে সে জন্য আমরা কাজ করব। আমাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। জনগণের মধ্যে যাতে কোনও ভয়ভীতি কাজ না করে সে জন্য টহল ও নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেব। দিন শেষে আমরা সুন্দর ও সুষ্ঠু একটা নির্বাচন চাই।”

এ দিকে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের থ্রিজি এবং ফোরজি পরিষেবা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন। শনিবার দুপুরের পর থেকে রবিবার রাত ১২টা পর্যন্ত নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখার জন্য বাংলাদেশের মোবাইল ফোন অপারেটরদের নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিটিআরসি।

এক মোবাইল ফোন অপারেটরের শীর্ষকর্তা এই তথ্য সংবাদমাধ্যমের কাছে নিশ্চিত করেছেন। তার কথায়, “বিটিআরসি-র নির্দেশ পেয়ে আমরা থ্রিজি ও ফোরজি বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করেছি।” টুজি পরিষেবা অবশ্য চালু থাকবে। তার ফলে, টেক্সট পাঠানো গেলেও ছবি ও ভিডিও সেলফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে পাঠানো বা গ্রহণ করা যাবে না। এই ইন্টারনেটের গতি কমে যাওয়ায় ফেসবুক-সহ সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহার বাধাপ্রাপ্ত হবে।

এ বার ভোটের লড়াই হচ্ছে মূলত আওয়ামি লিগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এ বারের এ নির্বাচন অনেকটাই ব্যতিক্রমী। দলীয় সরকারের অধীনে এ বারই প্রথম সব দল নির্বাচন অংশগ্রহণ করছে। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হলেও, তাতে ৩৬টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে মাত্র ১২টি অংশ নিয়েছিল। দণ্ডিত হওয়ার কারণে এ বারের নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অংশ নিতে পারছেন না। তিনি এখন জেলবন্দি। তাঁর ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দণ্ডের কারণে নির্বাচনের বাইরে। তিনি লন্ডনে রয়েছেন।

ভোট নিয়ে উত্সাহ নাগরিকদের মধ্যে। ছবি: এপি।

আরও পড়ুন: ঢাকায় সেনা টহল, আতঙ্ক হুমকি বার্তায় ​

এ বারের নির্বাচনে বিধিনিষেধ বেশ কড়া। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে মোবাইল ফোন ব্যবহারেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, কেন্দ্রের ভেতরে কেবল প্রিসাইডিং অফিসর এবং কেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের ইনচার্জ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। ভোটাররা মোবাইল ফোন সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রে যেতে পারলেও ফোন বন্ধ রাখতে হবে। ভোটের দিন সড়কপথে যান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে বিদেশে যাওয়া, হাসপাতালে যাওয়া ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কাজে যাতায়াতে বিধিনিষেধ শিথিল থাকবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

নির্বাচনে বাংলাদেশের ৮১টি প্রতিষ্ঠানের ২৫ হাজার ৯০০ পর্যবেক্ষক থাকবেন। এ ছাড়া ফেমবোসা, এএইএ, ওআইসি ও কমনওয়েলথ-এর তরফ থেকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক থাকবেন ৩৮ জন। কূটনীতিকদের মধ্যে বিদেশি মিশনের ৬৪ কর্তা এবং বিভিন্ন দূতাবাস ও বিদেশি সংস্থায় কাজ করছেন এমন ৬১ জন বাংলাদেশের নাগরিকও চোখ রাখবেন এ বারের ভোটের মাঠের দিকে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এবারের নির্বাচন কয়েকটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এ বারেই ১৯৯০-এর পর প্রথম কোনও দলীয় সরকারের অধীনে সবার অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। অন্য দিকে এ বারের ভোটের ফলাফলেই নির্ধারিত হবে কারা কী ভাবে ২০২২ সালে পালন করবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরের উৎসব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement