বহু প্রাচীন বন্দর শহর বিশাখাপত্তনম। মানুষের মুখে মুখে যেটা ‘ভাইজাগ’ নামেই অনেক বেশি পরিচিত এবং জনপ্রিয়। এমনিতে শহরের অতিপরিচিত ক্যাঁচোরম্যাচোর লেগে আছে ভাইজাগেও।
কিন্তু এক বার এই শহর থেকে একটু দূরে সমুদ্রের সঙ্গে লাগোয়া সেই বঙ্গোপসাগরের ঋষিকোন্ডা সৈকতে পা রাখলেই ম্যাজিকের মতো এক লহমায় পাল্টে যায় যেন গোটা পরিবেশ!
সত্যিই সার্থকনামা ঋষিকোন্ডা সৈকত। ঋষির মতোই শান্ত। পূর্বঘাট পর্বতমালার ঢালে অবস্থিত ঋষিকোন্ডা-কে অনেকেই বলে থাকেন, ভারতে তো বটেই, পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর নির্জন সৈকত।
পাহাড় আর সমুদ্র এক সঙ্গে যাঁরা উপভোগ করতে ভালবাসেন ঋষিকোন্ডা বিচ তাঁদের জন্য আদর্শ পর্যটন কেন্দ্র। দেশি-বিদেশি অসংখ্য দম্পতিদের ভিড় ঋষিকোন্ডা সৈকতে বছরভর লেগেই থাকে। এর শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ ও নির্জনতায় দিনভর কাটালেও এতটুকু একঘেঁয়ে লাগে না।
পর্যটকদের দেখারও অনেক কিছু আছে। ঋষিকোন্ডা থেকে অল্প দূরে দক্ষিণ ভারতীয় সমুদ্র সৈকতের নাম রামকৃষ্ণ বিচ। সৈকতের অন্যতম দ্রষ্টব্যস্থান হল, রামকৃষ্ণ মিশন। মন ভরে যায় এখানে এসে কিছুক্ষণ কাটালে। শোনা যায়, পরিব্রাজক স্বামী বিবেকানন্দ স্বয়ং ঋষিকোন্ডা সৈকতে ধ্যানে বসেছিলেন!
রামকৃষ্ণ বিচের পাশেই রাখা রয়েছে সাবমেরিন আইএনএস কুরোসওয়া। ডুবো জাহাজের ভেতরটা কেমন রহস্যময়, টিকিট কেটে দেখে নিতে পারেন। এ ছাড়াও অবশ্য দ্রষ্টব্য মৎসদর্শিনী। মাছের মিউজিয়াম। সমুদ্রের একদম তলদেশে থাকা, নাম না জানা, নানা রকমের মাছেদের নিয়ে তৈরি একটা আস্ত মিউজিয়াম।
এখান থেকে রোপওয়ে চেপে ঘুরে এবং দেখে আসতেই হবে পাহাড়ের চুড়োয় অবস্থিত কৈলাসগিরি মন্দির। এক দিন বাড়তি থেকে ঘুরে আসতে পারেন সীমাচলম-ও। সীমাচলম মন্দির এ দেশের একমাত্র দেবত্বস্থান, যেটা একই সঙ্গে পীঠস্থান ও জ্যোতির্লিঙ্গস্থান!
সতীর ৫১ পিঠের একটা হল যেমন সীমাচলমে, তেমনই শিবের দশ জ্যোতির্লিঙ্গর একটিও সেখানেই! কথিত আছে, স্বয়ং মহাদেব মর্ত্যের দশ স্থানে পা রেখেছিলেন। সেই দশ জায়গার শিবমন্দিরকে বলা হয়ে থাকে দশ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির। এখানেই গাড়ি ভাড়া করে দেখে আসতে পারেন ভারতের এক মাত্র নৃসিংহদেবের মন্দির।
হাতে সময় থাকলে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ুন বরো কেভের উদ্দেশ্যে। যুগ যুগ ধরে চুনাপাথরের গা চুঁয়ে জল পড়ে পড়ে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়েছে এই অপরূপ গুহা। দেখে তাক লেগে যায়!
আরাকু ভ্যালি যাওয়ার পথে পড়বে বরো কেভ ছাড়াও আদিবাসী সংগ্রহশালা। আরাকু ভ্যালি ট্রেনে গেলে যাত্রাপথে প্রচুর টানেল পড়ে। ওই যাত্রা বেশ মনে রাখার মতো। তবে স্বাদ নেবেন সড়ক পথেরও। ট্রেনে গিয়ে, সড়কে ফেরা। নয়তো উল্টোটা। নয়ন জুড়নো দুই যাত্রাই।
কীভাবে যাবেন - হাওড়া থেকে ট্রেনে বিশাখাপত্তনম স্টেশনে নেমে অটোয় ঋষিকোন্ডা পৌঁছতে মোটামুটি ১ ঘণ্টা বা তার কাছাকাছি। বিমানে কলকাতা-বিশাখাপত্তনম যেতে লাগে ২ ঘন্টা। নেমে গাড়িতে ঋষিকোন্ডা পৌঁছতে ওই একই রকম সময়।
থাকার জায়গা - অসংখ্য বড়-ছোট, নানান রেটের হোটেল রয়েছে। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।