ষষ্ঠীর দিন চলুন সুন্দরবন। সকাল সকাল শেয়ালদা স্টেশনে একটু ঢাকিদের ভিড় পাবেন। শরতের মিঠে রোদ গায়ে মেখে এ রপর এরা পাড়ি দেবে মহানগরীর অলিতে গলিতে। ছেলেমেয়েদের ট্যাকে গুঁজে বাক্স প্যাঁটরা সহ হ্যাঁচর প্যাঁচর করে ট্রেনে উঠতে উঠতে আপনার ঘড়িতে ছটা তিরিশ। আড়মোড়া ভেঙে, ধরা যাক ১২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম ছাড়বে ক্যানিং লোকাল।
ক্যানিং স্টেশনের বাইরেই পেট ভরে পেটাই পরোটা পাওয়া যায়। খেয়েদেয়ে অটো ধরে সোজা গদখালি। সেখানে অপেক্ষা করছে বিদ্যা নদী। শহুরে বাবুদের স্বাগত জানানোর জন্য। লঞ্চের ধিকিধিকি দুলুনি আর সঙ্গে গরম গরম মাছভাজা, একবার খেলে আপনিও বুঝতে পারবেন কেন লঞ্চের বাবুর্চির হাতের রান্না বলে বলে দশ গোল দেবে যে কোনও নামজাদা রেস্তরাঁকে।
শরতের শান্ত বিদ্যা নদীর বুকে এঁকে বেঁকে বিলি কেটে এগিয়ে চলে লঞ্চ। পেরিয়ে যায় বিদ্যা আইল্যান্ড। দূর থেকে বেজে ওঠে ঢাক। কোনও এক পল্লীর মাঝ বরাবর থেকে।
থাকুন পাখিরালয়তেই। তার ব্যবস্থা আগে ভাগেই করে নিন ওয়েবসাইট থেকে। পাখিরালয় পৌঁছে ডাবের খোলাটা হাত থেকে ফেলতে না ফেলতেই গ্রাম্য কুকুর পাক্কা শিকারির কায়দায় জড়িয়ে ধরবে আপনার দুই পা। অগত্যা ৫ টাকার বিস্কুটের প্যাকেট কিনে ওকে শান্ত করুন। নাহ, এর বেশি বিশেষ চাহিদা নেই ওর।
সামনে বসে ড্যাবড্যাব করে চোখ টাটায় সফট-টয়-রুপী দক্ষিণরায়। ঠিক নদীর ওপারেই বসত তাঁর। গায়ের লোম গুলি এপাড়ের ভাইটির মতো নরম নয় যদিও! ভাতঘুম শেষ করে পড়ন্ত বিকেলে গ্রাম্য পুজোর মণ্ডপ। রাত ঘনাবে অজস্র তারার শামিয়ানা টাঙিয়ে। কলকাতা থেকে ততক্ষণে চলে আসবে জমকালো যাত্রা পার্টি। মারকাটারী সামাজিক পালা। পালা গান প্রতি পাড়ায় পাড়ায়, রাত তিনটে নাগাদ ঘুমে ঢুলে পড়বে সামনে বসে থাকা বাচ্চারা। সন্ধ্যায় মেলার পাঁপড়, নাগরদোলা, গামলায় ধোঁয়া ছাড়তে থাকা ভটভটি জাহাজ! এক লহমায় ছোট বেলায় ফিরে যেতে বাধ্য আপনার মন।
ভিড় বাড়ার আগেই সক্কাল সক্কাল পৌঁছে যান সুধন্যখালির খাঁড়িতে অথবা পীরখালির সেই সুইট স্পটে। কপাল ভাল থাকলে আড়মোড়া ভেঙ্গে দেখা দেবেন শার্দূল ঠাকুর। আর যদি সেই সৌভাগ্য নাই বা হয়, থোড়াই কেয়ার। কাদামাটির বুকে অপেক্ষা করবে ভীত সন্ত্রস্ত হরিণ। নাক উঁচু করে রোদ পোয়াবে নোনা জলের কুমির। আট রকমের আলাদা প্রজাতির মাছরাঙা আর টাক মাথা বৃদ্ধের মতো গম্ভীর মদনটাক! প্রতি বাঁকে বাঁকে চমকে দেওয়ার মতো হরেক কিসিমের পসরা নিয়ে হাজির এই ‘আঠারো ভাটির দেশ’।
শরৎকালে যদিও দেখতে পাবেন না মধু আনতে যাওয়া মৌলেদের ভিড়, কিন্তু দোবাঁকীর ক্যানোপি ওয়াক আর নেতা ধোপানির গা ছমছমে জঙ্গল আপনার মন টানতে বাধ্য। আবার যখন ফিরতি পথে এসে ওঠা গদখালি ঘাটে, ততক্ষণে হয়তো কৈলাশপানে যাত্রা করেছেন মা ভবানী।
তাহলে? ভাবছেন কি মশাই, সময় যে আর বেশি নেই। যদি সত্যিই শহর ছেড়ে বেড়িয়ে পড়তে চান পুজোয়, চলে আসুন বাদাবনে। হাত যে বাড়িয়েই রেখেছেন দক্ষিণরায় স্বয়ং!
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।