তিব্বত যাওয়া মোটেই খুব একটা সহজ কাজ নয়। বিশেষত ভারতীয়দের অনেকেরই এই জায়গায় যাওয়ার স্বপ্ন থাকলেও, একটু কঠিন হয়ে পড়ে তাঁদের পক্ষে। চিনের থেকে ভিসা করানো, এবং বেজিং হয়ে তিব্বতের লাসা পৌঁছোনোর ঝক্কি অনেকটাই। খরচের অঙ্কও বেশ বড় হয়ে যায় এতে। তার পরে তিব্বতের ছোট গ্রামগুলো দেখতে গেলে, লাসা থেকে পারমিট বের করতে হয়, সেটাও খুব জটিল কাজ। কিন্তু এত সব ঝক্কির মধ্যে না গিয়েই যদি তিব্বতের মতো সুন্দর জায়গায় ঘুরে আসা যায়? সেটাই সম্ভব নেপালের কাগবেনি গেলে।
ট্রেনে হাওড়া থেকে রক্সৌল। সেখান থেকে নেপাল সীমান্তের বীরগঞ্জ। বীরগঞ্জে নেপালে ঢোকার পারমিটের কাগজ বানিয়ে নিয়ে বাসে পোখারা। সকালে বাস ধরলে বিকেল হয়ে যাবে পৌঁছোতে পৌঁছোতে। পরের দিনটা পোখারায় কাটিয়ে তার পরের দিন কাগবেনির দিকে যাত্রা। যাত্রাপথ আগে খুব একটা সুগম ছিল না। বাসে ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে জোমসোম পর্যন্ত যেতে হত। তবে এখন রাস্তার মান আগের চেয়ে ভালো হয়েছে।
জোমসোম এই চত্বরের সবচেয়ে বড় শহর। বাস নিয়ে যাবে ওই শহর পর্যন্তই। তার ছোট্ট ব্রিজ পায়ে হেঁটে পেরোতে হবে। রাস্তার ওপার থেকে আবার গাড়ি। ছোট বাস বা টাটা সুমোর মতো গাড়ি রয়েছে ওপারে। সেগুলোই সোজা নিয়ে যাবে কাগবেনি। জোমসোম পৌঁছোতে দেরি হলে রাত্তিরটা সেখানে থেকে যাওয়াই ভালো। ওই রাতে আর কাগবেনি যাওয়ার ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়। পরের দিন কাগবেনি যাওয়া যেতে পারে। গাড়ি বা ছোট বাসে সময় লাগবে ঘণ্টাখানেকের মতো। এই পথও খুব একটা সুবিধার নয়।
নেপালের অন্নপূর্ণা সার্কিট ট্রেক অ্যাপভেঞ্চারপ্রেমীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। অন্নাপূর্ণার রেঞ্জকে প্রদক্ষিণ করে পথ শেষ হয় মুক্তিনাথ মন্দিরের কাছে। জোমসোম থেকে রাস্তা গাড়ির গিয়েছে এই মুক্তিনাথ মন্দির পর্যন্তই। সেই গাড়ির রাস্তারই মাঝে এই কাগবেনি।
গত শতাব্দীর গোড়ার দিকে এই জোমসোম ছিল তিব্বতের ভিতরে। পরে তিব্বতের সঙ্গে এই এলাকার দখল নিয়ে নেপালের যুদ্ধ হয়। নেপাল যেতে। কাগবেনির দখল নেপাল পেলেও স্থানীয় অধিবাসীরা এলাকার কোনও বদল ঘটাননি। প্রাচীর যুগের তিব্বতের যে সব বাড়িঘর এখানে ছিল, তা একই ভাবে তাঁরা রেখে দিয়েছেন। নিজেরাও বাস করছেন সেই সব জায়গায়। আজও এই ছোট্ট জনপদের অলিগলিতে পুরোপুরি তিব্বতী গ্রামের আদল। মাটির ঘরবাড়ি, বাঁকে বাঁকে প্রাচীন তিব্বতী তান্ত্রিক বৌদ্ধ মূর্তি, তিব্বতীদের রেখে যাওয়া রান্নাঘর, আস্তাবল— সব কিছু।
নেপালের অন্যতম দুর্গম জায়গা আপার মুসটাং ভ্যালি। এই এলাকার শালগ্রাম শিলার কথা অনেকেই জানেন। পৃথিবীর একমাত্র জায়গা, যেখানে পাওয়া যায় এই শালগ্রাম শিলা। জুরাসিক যুগের পরে এই মুসটাং এলাকার ভূমিরূপে আর কোনও বদল হয়নি। আপার মুসটাং ভ্যালিতে পৌঁছোতে হলে লম্বা ট্রেক করতে হয়। তার ওপর রয়েছে পারমিটের বিরাট খরচ। যাঁরা আপার মুসটাং দেখতে চান, কিন্তু এতটা ঝক্কি না সামলেই, তাঁদের জন্য কাগবেনি দারুণ একটা গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে। এই শহর হল লোয়ার মুসটাং ভ্যালির অন্তর্গত। এই শহর পর্যন্ত পৌঁছোতে মুসটাং ভ্যালির পারমিট লাগে না। অন্নপূর্ণা রেঞ্জের পারমিট থাকলেই হয়।
ফেরার সময় জোমসোম থেকে বিমানেও আসতে পারেন পোখারা। আকাশ থেকে দেখা যায় গোটা মুসটাং। তবে বিমানযাত্রার আশঙ্কাও আছে। এই ছোট বিমান মাঝেমাঝেই দুর্ঘটনায় পড়ে। ঝড়বাদলে তাই বিমানের অপশন না ভাবাই ভালো।