পুজোর ছুটিতে বাঙালির বেড়াতে যাওয়া মানেই দশ জনের মধ্যে সাত জনের গন্তব্যস্থল দী-পু-দা! আদি, অকৃত্রিম দীঘা-পুরী-দার্জিলিং!
সেই দার্জিলিংয়ের ট্রেনের টিকিট কেটেছেন পুজোর ছুটিতে। এ দিকে, বড়-মেজো-সেজো-ছোট, সব হোটেলেই ঠাঁই নাই রব! পুজোয় অবশ্য এটাই চেনা ছবি দার্জিলিংয়ের!
কুছ পরোয়া নেহি! এ বারের ছুটিতে দার্জিলিংয়েই থাকবেন আপনি! কী ভাবে? আনন্দবাজার অনলাইন আপনাকে দিচ্ছে দার্জিলিংয়েরই প্রায় এক ডজন হোম স্টে-র খোঁজ। দিব্যি 'স্টে' করুন সপরিবার বা সবান্ধবে। আর মনের সুখে কাটুক পাহাড়ি ছুটি!
সমীর হোম-স্টে: নিজের বাড়ির উপর তলায় পর্যটকদের জন্য হোম-স্টে বানিয়েছেন বাড়ির মালিক। দার্জিলিংয়ের প্রাণকেন্দ্র ম্যাল-এর থেকে একটু নীচে এর অবস্থান। আধুনিক ওয়েস্টার্ন উডেন স্টাইলে বানানো গোটা চারেক ঘরে দিন কয়েক কাটালে মনে হবে যেন বিদেশে আছেন! হোম-স্টে'র আসল আকর্ষণ যদিও ঘরের জানালা দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্ধর্ষ ভিউ!
লিটল সিমারিং হোম-স্টে: ম্যাল থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরত্বে। ছবির মতো প্রাকৃতিক দৃশ্যপট, খাওয়াদাওয়া-থাকার আধুনিক সমস্ত সুযোগসুবিধের জন্য দার্জিলিংয়ের অন্যতম জনপ্রিয় হোম-স্টে এটি। বারান্দায় বসেই চার পাশের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে সময় কাটিয়ে দিতে পারেন। সেই সঙ্গে এদের আতিথেয়তা আপনাকে মুগ্ধ করবে। দার্জিলিংয়ের রক ক্লাইম্বিং, রোপওয়ে এখান থেকে হাঁটাপথ। সামনেই!
হ্যাপি ভ্যালি হোম-স্টে: দার্জিলিংয়ের লোয়ার ডাউন মার্কেট থেকে মাত্র ১৫ মিনিটের হাঁটা পথে এই হোম-স্টে। থাকা-খাওয়ার সব রকম সুবিধে আছে। শহরের মধ্যে হলেও কোলাহল নেই। ভিড়ে-ভিড়াক্কার দার্জিলিং শহর চষে বেড়ালেন, ফিরে বিশ্রাম নিলেন শান্ত-নিরিবিলি এই হোম-স্টে'তে। একদম কাছে দার্জিলিং হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, চিড়িয়াখানা, বেঙ্গল ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম, রাজভবন। দেখতে পারেন হেঁটেই।
পাহাড়ি সোল হোম-স্টে: শহর থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে, হিলকার্ট রোডের উপরে এই আস্তানা। থাকা-খাওয়ার সুবন্দোবস্ত আপনাকে মানসিক শান্তি দেবে। তবে এর 'ইউএসপি' হল, ঘরের জানালা দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার পুরো ভিউ। যাকে বলে অসামান্য!
হিয়াগ্রিভা হোম-স্টে: দার্জিলিংয়ের হৈ-হট্টগোল থেকে দূরে থাকতে হলে ম্যাল থেকে ১৫ মিনিটের হাঁটা পথের দূরত্বে থাকুন এই হোম স্টে-তে। এর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ চার পাশের বরফে ঢাকা পর্বত শৃঙ্গগুলো। সেই সঙ্গে এর দুর্দান্ত খাওয়াদাওয়া, আতিথেয়তা বাড়িয়ে দেবে জমাটি ছুটির স্বাদ।
স্প্রিংফিল্ড হোম স্টে: দার্জিলিং রেল স্টেশন থেকে গুনে গুনে ১৭০০ মিটার দূরত্বে এই হোম-স্টে। ইচ্ছে করলে নিজে রান্না করে খেতে পারেন। ফ্রিজ, টিভি, গ্যাস ওভেন, ডাইনিং টেবিল, বাসনপত্র ছাড়াও আছে টিভি। ৪-৫ জনের ছোট দল দিব্যি পিকনিকের করার মেজাজে ২-৩ দিন আনন্দে কাটাতে পারে এখানে।
হিমালয়ান ইন হোম-স্টে: বাজেট একটু কম থাকলে, দার্জিলিংয়ের চৌরাস্তার খুব কাছে এই হোম-স্টে'তে থাকতে পারেন। চৌরাস্তার কোলাহল কিন্তু পৌঁছতে পারে না এখানে। শান্ত, নিরিবিলি ছোট্ট জায়গাটি।
স্নো লায়ন হোম-স্টে: একটি তিব্বতি পরিবার চালান এটি। ম্যাল থেকে ১০ মিনিটের হাঁটা পথে ইতালিয়ান ফ্লোর টাইলস আর পাইন কাঠের দুটো ঘর। তাতে ভিনদেশি আমেজ। তবে এখানে খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত নেই। বাইরে থেকে খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। যদিও বাইরে পা দিলেই অনেক খাবারের হোটেল পাবেন।
সিঙ্গেল হোম-স্টে: এটা অবশ্য কার্শিয়ংয়ে। দার্জিলিং থেকে ২১ কিলোমিটার। তবে এর চারপাশের চা-বাগানের অপরূপ সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে দিতে পারে। ছোট্ট এই হোম-স্টে বানিয়েছেন মকাইবাড়ি চা-বাগানের কয়েক জন আবাসিক। নিরিবিলি শান্ত পরিবেশের মধ্যে এই থাকা-খাওয়ার জায়গাটি চালান মকাইবাড়ি চা-বাগানের কর্মীরাই।
লাতপাঞ্চার হোম স্টে: গুরুং-এর হোম-স্টে বলেই ঢের বেশি পরিচিত এবং জনপ্রিয়ও বটে। চারদিকের অসামান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এর বাড়তি আকর্ষণ। থাকা-খাওয়ার সমস্ত সুযোগসুবিধা আছে। শুধু টিভি ও ইন্টারনেট পাবেন না। দু'তিন দিন এমন মনোরম, রোমান্টিক জায়গায় কাটাতে না হয় ইন্টারনেটের মায়া ত্যাগই করলেন!
মানেভঞ্জন: এটা চালান কেশব গুরুং নামে এক ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রী। নিজেদের বাড়ির বাইরের দিকের মাত্র দুটো ঘর নিয়ে এই ছোট্ট, ছিমছাম ছোট হোম-স্টে। বিনোদন বা বিলাসবহুল সুযোগসুবিধে খুব বেশি না পেলেও থাকা-খাওয়ার দারুণ সুবন্দোবস্ত আছে। বাড়তি আকর্ষণ, এর চারপাশে ট্রেক করতে পারেন। গুরুং দম্পতিই আপনাকে ট্রেকিংয়ে নিয়ে যাবেন সাবধানে দেখেশুনে! এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।