প্রতীকী চিত্র
‘মহালয়ার ভোর থেকে ওই ডাকছে ঢাকের বাজনা,
আসছে পুজো, হাসছে শহর, আজ থেকে আর কাজ না’
ঢাকে কাঠি পড়ল বলে! কানে যে আওয়াজ আসতে না আসতেই নড়েচড়ে বসে বাঙালি। জাঁকিয়ে বসে পুজোর আমেজ। সে কলকাতাই হোক আর ক্যালিফোর্নিয়া। আসলে পুজো আর ঢাক যে ওতপ্রোত জড়িয়ে। ঢাকের বোল ছাড়া বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব অসম্পূূর্ণ। কিন্তু সারা পৃথিবীতে এত বাদ্যযন্ত্র থাকতে পুজোতে ঢাকের ব্যবহার অপরিহার্য কেন? কেনই বা এই বাদ্যি ছাড়া মায়ের বোধন হয় না? আসুন জেনে নিই এমন অজানা কিছু তথ্য।
বাংলা ও অসম, এই দুই জায়গাই মূলত ঢাকের উৎপত্তিস্থল। পূর্ববঙ্গে জন্ম। এর পর আস্তে আস্তে বিভক্ত ভারতের উৎসবে প্রধান অঙ্গ হয়ে ওঠে এই ঢাক। বিশাল আকৃতির কারণে ঢাকের আওয়াজ এত গমগমে এবং জনপ্রিয়। শাস্ত্রে বলে, অশুভের বিনাশকালে ঢাক, শঙ্খ, কাঁসর-ঘন্টা ইত্যাদি বাজিয়ে শুভশক্তির সূচনা হয়েছিল। দুর্গাপুজো ছাড়াও কালীপুজো, জগধাত্রী পুজো, বাসন্তী পুজো, সরস্বতী পুজো, বিশ্বকর্মা পুজো, সবেতেই ঢাকের আওয়াজ এক অন্য মাত্রা যোগ করে।
সাধারণত উৎসব উদযাপনের মাধ্যম হিসেবেই ঢাকের বাদ্যি এত প্রসিদ্ধ। বহু যুগ আগে মনে করা হত, গ্রামের সব মানুষকে পূজাপার্বণে এক জায়গায় একত্রিত করার কাজে ঢাক বাজানো হত। সব মানুষের মনের অন্ধকার দূর করে আনন্দের বোল বাজানোই ঢাকের কাজ। দেবীর আগমন রটিয়ে দিতে এবং শুভশক্তির উদযাপনেই মূলত ঢাকের আওয়াজের মাহাত্ম্য।
বড় আকারের কাঠের খোলের দুই মুখে পুরু চামড়ার ছাউনি দিয়ে গড়া হয় ঢাক। কাঠের দুটি সরু কাঠি দিয়ে তার গায়ে আঘাত করে বোল তোলা হয়। কাঠি দু’টি ব্যবহারের পরে ঢাকের বিশাল আকৃতির পেটের গায়ে গুঁজে রাখা হয়। ঢাকিরা বলেন, পুজোর পাঁচ দিন পাঁচ রকম আওয়াজে ঢাক বাজে। অষ্টমীর সন্ধিপুজোর ঢাকের বাদ্যি একেবারে আলাদা।
সাধারণত ঠাকুর্দা-বাবা-নাতি, এ ভাবে বংশ পরম্পরায় ঢাক বাজিয়ে ঢাকির তকমা মেলে। কিন্তু অধিকাংশ ঢাকির পুজো ছাড়া বছরের বাকি সময়টা কাটে অত্যন্ত অভাবে ও অর্থকষ্টে। তাই বিকল্প জীবিকা হিসেবে অনেকেই বছরের অন্য সময়ে অন্য পেশায় যুক্ত হন। ক্রমশঃ হারাতে বসা এই পেশার মানুষদের উপার্জনও খুব কম।
তবে বাঙালি যত দিন থাকবে, থাকবে দুর্গাপুজো, আর তত দিন ঢাকের বোলেই মেতে উঠবে আট থেকে আশি! আর ঢাকের তালে দুলবে কোমর, খুশিতে নাচবে মন!
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।