ঘুরতে যাওয়া হোক বা কাজের জন্যে, বাড়ি থেকে লাগেজ নিয়ে বেরনো মানেই গোটা রাস্তা হাত বা কাঁধে তাকে নিয়ে চলা। ব্যাগে দামি জিনিস থাকলে তাকে আবার অতি সাবধানতায় রাখা, যাতে কোনও ভাবে হারিয়ে বা চুরি না হয়ে যায়। আধুনিকতা এবং বিজ্ঞানের হাত ধরে এ বার এই সমস্যার সমাধান হাজির।
এখন ফোন থেকে গাড়ি, ফ্রিজ থেকে ঘড়ি— সবটাই যদি স্মার্ট হয়ে যেতে পারে, আপনার সখের লাগেজটি কি দোষ করল? বাজারে যদিও স্মার্ট লাগেজ অনেক এসে গিয়েছে, যেখানে লাগেজে ফোন চার্জের সুযোগ পাবেন, আপনার দামি গ্যাজেট সাবধানতার সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার আলাদা খোপ পাবেন। কিন্তু আপনাকে যদি বলা হয়, এই লাগেজ আপনার কোনও রকম সাহায্য ছাড়াই আপনার সঙ্গে সঙ্গে, পাশে পাশে এগিয়ে যাবে?
এয়ারহুইল এসআর-৫। গত বছরের শেষের দিকে বাজার হাজির হয়েছে এই নতুন স্মার্ট সুটকেস। জেমস বন্ড হোক কি কল্পবিজ্ঞান, সব কিছু যেমন অটোমেটিক দেখানো হত, এই সুটকেসটিও যেন একেবারে সে রকম। দূর থেকে দেখতে একেবারেই সাধারণ একটি সুটকেসের মতো, কিন্তু ম্যাজিক শুরু আপনি চলতে শুরু করলেই। ব্যাটারিচালিত এই সুটকেস ক্যামেরা ও সেন্সরের মাধ্যমে বুঝতে পারে আপনার থেকে ব্যাগের দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে মোটরচালিত দু’টি চাকা সুটকেসটিকে আপনার ঠিক পাশে নিয়ে যাবে। যদি সামনে কোনও বাধা পায়, ঠিক তাকে কাটিয়ে এগিয়ে যাবে। আপনার হাতে একটি স্মার্ট ব্যান্ড থাকবে, যার সঙ্গে সুটকেসটির নিরন্তর যোগাযোগ থাকবে। ফলে আলো থাক কি অন্ধকার, সুটকেস সব সময়তেই আপনার উপস্থিতি টের পাবে।
তবে, শুধু নিজে নিজে চলতে পারায় এর একমাত্র গুণ নয়। রয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডার, ফলে সুরক্ষার দিক থেকেও এটা সাধারণ সুটকেসের থেকে এগিয়ে। ফোনের সঙ্গে ব্লু-টুথ দিয়ে সংযোগ করে দিলে ফোন থেকেও আপনি সুটকেসটি কন্ট্রোল করতে পারবেন। রয়েছে অ্যান্টি থেফ্ট অ্যালার্ম, সুটকেসের সঙ্গে আপনার কোনও ভাবে দূরত্ব একটু বেড়ে গেলেই হাতের ব্যান্ডে কম্পন এবং ফোনে অ্যালার্ম বেজে উঠবে। ফলে আপনার ভুলেই হোক, বা অন্য কারও অসৎ উদ্দেশ্যে, লাগেজ হারিয়ে যাওয়ার ভয় আর নেই।
দামি, শক-প্রুফ এই ব্যাগ ঠোক্কর খেলে অথবা হাত থেকে পড়ে গেলেও খুব একটা ক্ষতি হবে না। চাকাগুলো এমন ভাবেই বানানো, যাতে চলার সময় কোনও আওয়াজ না হয়, কোনও কম্পন না হয়। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬ কিলোমিটার গতিবেগে চলতে পারে এই সুটকেস, ফলে আপনার হাঁটার গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ক্ষমতা রাখে। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৬০ হাজার টাকা দামের এই সুটকেস সকলের জন্য নয়, কিন্তু সবাই কিনে নিলে সেটা আর ম্যাজিক রইল কই? স্বাভাবিক ভাবেই, এখনও সিঁড়ি দিয়ে চলার ক্ষমতা হয়নি এই ব্যাগের, ফলে স্টেশনে ট্রেন থেকে ওঠা-নামা কিংবা আপনার গাড়ি থেকে ওঠা-নামার সময় একটু হাত লাগাতেই হবে, কিন্তু বাকি সময়ে আপনি হাতে কফি ধরুন, কিংবা ফোন, অথবা দুটোই, কারণ ব্যাগের জন্যে আপনাকে আর চিন্তা করতে হবে না।