Panchetgarh Durga Puja

পঁচেটগড়ের দুর্গাপুজো! এলাকার ইতিহাসে সম্রাট ঔরঙ্গজ়েব থেকে সঙ্গীতজ্ঞ যদুভট্টর নাম

আওরঙ্গজ়েব তাঁর কর্মচারী ও সেতারবাদক, কালামুরারির কাজে খুশি হয়ে তাঁকে জমি দান করেন। কালামুরারি সেখানে নির্মাণ করান বিরাট বাড়ি, মন্দির। পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরের এটি ‘পঁচেটগড় রাজবাড়ি'’ নামে জনপ্রিয়। কালামুরারির জ্যেষ্ঠ পুত্রর আমলে এখানে শুরু হয় ধুমধাম করে দুর্গাপুজো।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:৪৬
Share:

পঁচেটগড় রাজবাড়ি। ছবিঃ সংগৃহীত।

দিল্লির মসনদে তখন মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজ়েব। কালামুরারি দাস মহাপাত্র ছিলেন সম্রাটের দরবারের এক উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী। একজন গুণী সেতারবাদক। তিনি বাদশার অনুগ্রহে বাংলার বন্দর এলাকার সনদ লাভ করেন। কালামুরারি সনদ পাওয়ার পর তাম্রলিপ্তসহ বাংলার বিরাটবন্দর এলাকায় ব্যবসা বৃদ্ধি হয়। কালামুরারির সেরেস্তা ছিল জলেশ্বরে। যে কারণে লোকমুখে তখন একটা কথার খুব চল হয়, ‘বন্দর বালেশ্বর, শহর জলেশ্বর’!

Advertisement

আওরঙ্গজ়েব কালামুরারির কাজে খুশি হয়ে তাঁকে বন্দর এলাকায় জমি দান করেন। কালামুরারি বাংলার বন্দর এলাকায় জমিদারির পত্তন করেন। নির্মাণ করান বিরাট বাড়ি, মন্দির। পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরের পঁচেটগড় জমিদার বাড়ি এলাকায় ‘পঁচেটগড় রাজবাড়ি'’ নামেই জনপ্রিয়। এই বংশের আদিপুরুষ কালামুরারি পঁচেট গ্রামে ‘গড়হাভেলি’ নির্মাণ করান। তাঁর আমলেই নির্মিত হয় বিখ্যাত পঞ্চেশ্বর শিবের মন্দির। আর এই পঞ্চেশ্বর শিবের মন্দির থেকেই এলাকার নাম হয় 'পঁচেটগড়'। আর এই পঁচেটগড়ে পঞ্চেশ্বর শিবের মন্দির ঘিরে রয়েছে আরও কয়েকটি মন্দির যেকারণে এই এলাকা 'মন্দির নগরী' নামেও পরিচিত। কালামুরারির জ্যেষ্ঠ পুত্র ব্রজেন্দ্রমোহন দাস মহাপাত্রের আমলে পঁচেটগড়ে শুরু হয় ধুমধাম করে দুর্গাপুজো।

পঁচেটগড় রাজবাড়ি। ছবিঃ সংগৃহীত।

রাজবাড়িতে দুর্গাপটে পুজো হয়। এক সময় শাক্ত মতে পুজো হলেও পরে পঁচেটগড়ের রাজারা বৈষ্ণব হয়ে যান। তুলে দেন পশুবলি। সে জায়গায় শুরু করেন লাউ, কুমড়ো বলি। শোনা যায়, এক সময় পুজোর দিনে হাজারখানেক লাউ ও কুমড়ো বলি হত! মহাদেব কুন্ডের সরোবর থেকে জল এনে মা দুর্গার ঘট প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই রাজবাড়ির প্রতিটি মন্দিরের জন্য নির্দিষ্ট সরোবর, অর্থ এবং পাহারাদার নিযুক্ত রয়েছেন সেই অতীতকাল থেকেই। যে প্রথার আজও কোনো পরিবর্তন হয় নি। পঁচেটগড়ের ব্রজেন্দ্রমোহন ছিলেন পুরীর রাজার অন্তরঙ্গ পার্ষদ এবং একজন গুণী সঙ্গীতজ্ঞ। পুরীর রাজার আমন্ত্রণে তিনি জগন্নাথদেবের সম্মুখে ‘জগন্নাথ লীলাকীর্তন’ পরিবেশন করতেন। সেই সূত্রে তিনি জগন্নাথ ভক্ত হয়ে যান এবং পঁচেটগড়ে বৈষ্ণব ভাবধারার সূত্রপাত ঘটে। বিষ্ণুপুরের পর পঁচেটগড় ছিল ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দ্বিতীয় পীঠস্থান। বেনারস, মাইহার সহ বিভিন্ন ঘরানার দিকপাল সঙ্গীতজ্ঞদের প্রায়শই আনাগোনা ছিল এই রাজবাড়িতে। আসতেন যদুভট্টের মত সঙ্গীতজ্ঞ। তাঁর গানের খাতা আজও ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।

Advertisement

দুর্গাপটে পুজো ছবিঃ সংগৃহীত।

পঁচেটগড় জুড়ে হাজার হাজার ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। পঁচেটগড় সমৃদ্ধ করেছে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে। দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ বিভাগ পঁচেটগড় জমিদার বাড়িকে অবশেষে ‘হেরিটেজ’ মর্যাদা দেয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement