ছবি সংগৃহিত
সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নের প্রতীক হাজরা পার্ক দুর্গাপুজো। তাদের ৮২ তম বছরের ভাবনা ‘শুদ্ধি’ অর্থাৎ শুদ্ধিকরণ। এই পুজোর উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের সাংসদ শ্রী সুব্রত বক্সী, কৃষিমন্ত্রী শ্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শ্রী সায়ন দেব চ্যাটার্জি সহ আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।
বছরের পর বছর ধরে, এই পুজো ছোট সমাবেশ থেকে একটি বিশাল অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে যা সমগ্র শহরের ভক্তদের আকর্ষণ করে। এত খ্যাতির পরেও এটি তার শিকড় থেকে বিছিন্ন হয়ে যায়নি। এই পুজোর সংগঠকরা, প্রাথমিকভাবে দলিত সম্প্রদায় থেকে, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সাম্যের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। এই বছরের পুজোর ভাবনা, ‘শুদ্ধি’, যা একটি অনুস্মারক। যদিও সমাজের অনেক অগ্রগতি হয়েছে তবুও বেশ কিছু ক্ষেত্রে সমতার জন্য লড়াই অব্যাহত রয়েছে। যাঁরা আরও ন্যায়পরায়ণ সমাজ গঠনের জন্য চেষ্টা করছেন তাঁদের জন্য এই পুজো একটি অনুপ্রেরণার কাজ করবে।
হাজরা পার্কের পুজো সবসময় সাম্য ও মানবাধিকারের লড়াইয়ের অগ্রভাগে থেকেছে। মূলত দলিত সম্প্রদায়ের দ্বারা সংগঠিত, এই পুজো সম্মিলিত কর্মের শক্তি প্রদর্শন করে এবং এটি কলকাতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৯৪০-এর দশকের সামাজিক-রাজনৈতিক সংগ্রাম অতিবাহিত করার ভূমিকায় এই পুজোর উৎস গভীরভাবে নিহিত। হাজরা পার্কের দুর্গাপুজো শুধু একটি ধর্মীয় উৎসবই নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু। এটি একটি আন্দোলন। বিশ্ব যখন বৈষম্যের সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে, হাজরা পার্কের দুর্গাপুজো আশার আলো দেখাচ্ছে।
হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সায়ন দেব চ্যাটার্জী বলেন, “আমাদের পুজো শুধু বিশ্বাস কেই উদযাপন করে না, বরং এটি আমাদের সম্মিলিত শক্তি ও স্থিতিস্থাপকতাকেও উদযাপন করে। এটি মনে করিয়ে দেয় যে প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা একত্রিত হতে পারি। এই বছরের থিম বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বিবৃতি এবং আরও ন্যায়সঙ্গত সমাজ গঠনে আমরা যে এগোচ্ছি তার একটি অনুস্মারক। আমরা আমাদের ইতিহাসকে সম্মান করে এমন একটি সম্প্রদায় গড়ে তোলার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যেখানে প্রত্যেকে মূল্যবান এবং অন্তর্ভুক্ত।”
এই পুজোটি সামাজিক পরিবর্তনের জন্য একটি অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে স্পর্ধা দেখিয়েছে এবং সকলকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে অন্যান্য সম্প্রদায়কে অনুপ্রাণিত করেছে। কলকাতা যখন আসন্ন দুর্গাপুজো উৎসবের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব তখন আবারও সামাজিক ন্যায়বিচারের অনুস্মারকরূপে আশার আলো দেখাচ্ছে।
ছবি সংগৃহিত
হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের (কেএমসি) দলিত কর্মচারীদের দ্বারা একটি ছোট পুজো হিসেবে শুরু হয়েছিল। সেই সময়ে কলকাতায় প্রচলিত বর্ণ-ভিত্তিক বৈষম্যকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এই পুজো শুরু করা হয়েছিল। দলিত বা অস্পৃশ্য, যাদের শহরের নর্দমা পরিষ্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। হাজরা পার্কের দুর্গাপুজো এই নিপীড়নমূলক রীতিকে স্পর্ধা দেখিয়ে, প্রান্তিকদের উপাসনা ও উদযাপনের জন্য একটি জায়গা প্রদান করে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।