সুতানুটি গ্রাম ছিল একেবারে জঙ্গল অধ্যুষিত।
নদীর পাশেই অরণ্যবেষ্টিত এক শ্মশানে তান্ত্রিক উদয়নারায়ণ ব্রহ্মচারী তৈরি করেন সিদ্ধেশ্বরী কালী মূর্তি, যা বর্তমানে ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির অধিষ্ঠাত্রী দেবী।
সেটি ছিল আনুমানিক ১৭০৩ সাল। অর্থাৎ আজ থেকে ৩২০ বছর আগের কথা।
তান্ত্রিক উদয়নারায়ণ ব্রহ্মচারীর কালীপুজোর প্রায় ১০০ বছর পরে জনৈক শঙ্কর ঘোষ নামের এক ব্যবসায়ী সিদ্ধেশ্বরী কালী মূর্তির মন্দিরটি গড়ে তোলেন।
বর্তমানে শঙ্কর ঘোষের বংশধররাই এখন এই মন্দিরের সেবায়েত রয়েছেন।
জনশ্রুতি রয়েছে, জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যখন কেউ যেতেন, তখন দূর থেকেও শোনা যেত এই কালী মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি।
অপর মতে ঘন্টা বাজিয়ে এক সময় ডাকাতদের হামলার সতর্ক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হত।
সেই ঠন ঠন আওয়াজ থেকেই এলাকার নাম হয় ঠনঠনিয়া।
উত্তর কলকাতার এই কালীপুজোতে দেবী পূজিতা হন সিদ্ধেশ্বরী রূপে।
এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ইতিহাসও। কথিত, কামারপুকুর থেকে যখন কিশোর গদাধর চট্টোপাধ্যায় কলকাতায় আসেন, তখন মন্দিরের কাছেই ঝামাপুকুরে থাকতেন তিনি। ঠনঠনিয়া কালীমন্দিরে দেবী মূর্তির সামনে বসে গানও গাইতেন গদাধর। দক্ষিণেশ্বেরে গিয়ে রামকৃষ্ণ পরমহংস হওয়ার পরেও বেশ কয়েকবার এখানে এসেছেন তিনি। আবার গবেষকদের মতে, সাধক রামপ্রসাদও জড়িত ছিলেন এই সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের সঙ্গে।
কার্তিক মাসের অমাবস্যায় কালীপুজো সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় কালী মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম হল ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি। ভক্তদের বিশ্বাস, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। দেবীর আশীর্বাদে ভক্তদের মনস্কামনা পূরণ হয় বলেও বিশ্বাস। এই কালীমন্দিরের অবস্থান উত্তর কলকাতার কলেজ স্ট্রিট থেকে একটু দূরেই বিধান সরণিতে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।