কলকাতার দুর্গাপুজোর ইতিহাস বহুচর্চিত। আজ একটু পড়শি দেশের দুর্গাপুজোর ইতিহাস সম্পর্কে জানা যাক? ওপার বাংলায় দুর্গাপুজো কী ভাবে শুরু হল তা নিয়ে নানা কাহিনি প্রচলিত রয়েছে।
এদের মধ্যে রাজধানী ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের দুর্গাপুজো অন্যতম। এটি বাংলাদেশের জাতীয় মন্দির হিসেবে পরিচিত। প্রায় ৮০০ বছর আগে ঢাকার এই ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো শুরু হয়।
এই স্থায়ী মন্দিরে প্রথম দিকে অষ্টভুজার প্রতিমা এবং পরবর্তী সময়ে দশভুজা দুর্গা প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছিল। ঐতিহাসিকদের মতে, এই মন্দিরে পূজিতা দুর্গার আরেক রূপ দেবী ঢাকেশ্বরীর নাম অনুসারেই ঢাকার নামকরণ হয়।
জানা যায়, ১৮৩০-এ পুরনো ঢাকার সূত্রাপুর অঞ্চলের ব্যবসায়ী নন্দলাল বাবুর মৈসুন্ডির বাড়িতে আয়োজিত হয় ঢাকার সবচেয়ে বড় দুর্গাপুজো। সিপাহি বিদ্রোহের সময়, ১৮৫৭-তে, বিক্রমপুর পরগণার ভাগ্যকূল জমিদার বাড়ির রাজা ব্রাদার্স এস্টেট এবং সাটুরিয়া থানার বালিহাটির জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো আয়োজন করা হয়। সিদ্ধেশ্বরী জমিদার বাড়ি এবং বিক্রমপুর হাউজেও বেশ জাঁকজমক করেই পুজোর আয়োজন করা হয় সেই সময়।
১৯২২-২৩ নাগাদ ঢাকার আরমানিটোলায় জমিদার শ্রীনাথ রায়ের বাড়ির পুজোও বেশ নামকরা ছিল। এছাড়াও রয়েছে সিদ্ধেশ্বরী কালিবাড়ি, রমনা কালিবাড়ি, রামকৃষ্ণ মিশন ইত্যাদি। রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, কলাবাগান, উত্তরা এবং বনানীর পুজো। ধীরে ধীরে এই পুজোগুলিতে আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটে। এই মণ্ডপগুলিতে হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সব ধর্মের মানুষ উৎসাহ ভরে অংশ নিতেন।
এছাড়া প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো শ্রীহট্টের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ের দুর্গাপুজো। এখানে পূজিতা দেবী রক্ত বর্ণের। জানা যায়, গোটা উপমহাদেশে এক মাত্র এখানেই রক্তবর্ণা দুর্গা। অর্থাৎ মায়ের রং লাল। দেশের তো বটেই, দেশের বাইরে থেকেও দর্শনার্থীরা লাল রঙের এই মা দুর্গাকে দেখতে আসেন।
বিংশ শতকের শুরুর দিকে ওপার বাংলায় শুধুমাত্র সমাজের বিত্তশালী ও অভিজাত হিন্দু পরিবারগুলি দুর্গাপুজোর আয়োজন করত। গত শতাব্দীর শেষের দিকে এখানে দুর্গাপুজো সর্বজনীনতার রূপ পায়। আসলে দেশভাগের পর একক ভাবে পুজোর আয়োজন যেমন ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে ওঠে তেমনই অন্য দিকে অভিজাত ও বিত্তশালীদের প্রভাব প্রতিপত্তি কমতে থাকে। এর ফলে প্রথমে বারোয়ারি এবং ক্রমে সর্বজনীন পুজোর প্রচলন হয়।
অন্য দিকে কথিত আছে, বাংলাদেশের রাজশাহীতে প্রথম দুর্গাপুজো শুরু হয় ১৫৮৩—এ। শোনা যায়, তাহেরপুরের রাজা কংস নারায়ণ প্রথম দুর্গাপুজোর প্রবর্তন করেন। তিনি বাংলার বারো ভূঁইঞার এক ভূঁইঞা। সেই সময়কার রাজাদের মধ্যে নিজের সামাজিক প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি এই পুজোর আয়োজন করেন। প্রায় আট লক্ষ টাকা খরচ করেন সে সময়ের হিসেবে।
রাজশাহীর ভাদুরিয়ার রাজা জয় জগৎ নারায়ণ ওই বছরই বাসন্তী পুজোর আয়োজন করেন জাঁকজমক ভাবে। সেই সময়ে তিনি কংস নারায়ণের থেকে এগিয়ে থাকার জন্য প্রায় ৯ লক্ষ টাকা খরচ করেন এই পুজোয়। বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায়, আঠারো শতকে দেশের দক্ষিণের জেলা সাতক্ষীরার কলারোয়া থানার মঠবাড়িয়ার নবরত্ন মন্দিরে দুর্গাপুজো হত।