তৎপরতা: দুর্গাপুজো হবে, রাজ্য সরকারের তরফে এই নির্দেশ জারি হওয়ার পরেই জোরকদমে শুরু হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। মঙ্গলবার, কুমোরটুলিতে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
কথায় বলে, ওস্তাদের মার শেষ রাতে!
মাস দেড়-দুই আগেও ওঁরা বুঝতে পারছিলেন না, এ বার পুজোটা আদৌ হবে কি না। কিন্তু এ বার পুজোর একেবারে দোরগোড়ায় এসে কাজ শেষ করতে হিমশিম অবস্থা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিয়ম মেনে দুর্গাপুজো করার নির্দেশ দিয়েছেন সম্প্রতি। আর তাঁর সেই ঘোষণার পরে কুমোরটুলিতে প্রতিমা তৈরির বায়না দেওয়ার সংখ্যাও রোজ বেড়ে চলেছে।
করোনার প্রকোপ এবং তার জেরে বলবৎ হওয়া লকডাউনের আবহে ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়েছিলেন কুমোরটুলির প্রতিমাশিল্পীরা। বরাত আসা প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। পুজো আদৌ হবে কি না, তা নিয়েই চরম সংশয়ে ছিলেন ওঁরা। এ বার থিম পুজো এবং বড় বাজেটের পুজো বেশি না হলেও মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় পটুয়াপাড়া কিছুটা হলেও স্বস্তিতে। শিল্পী মিন্টু পালের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকেই রোজ তিন-চারটি করে প্রতিমার বায়না আসছে। তবে অধিকাংশই পাঁচ-ছ’ফুটের
প্রতিমা।’’ একই কথা কাঞ্চি পালের মুখেও। তিনি বললেন, ‘‘পুজোর আর মোটে দু’সপ্তাহ বাকি। শেষ মুহূর্তে যে এত অর্ডার আসবে, ভাবতেই পারিনি। এমনকি, অনেককে ফিরিয়েও দিতে হচ্ছে। আসলে প্রতিমা বানানোর সময় তো আর নেই!’’
আরও পড়ুন: সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে থিম সং ‘বদ্রীনাথ’
কুমোরটুলি সাংস্কৃতিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক বাবু পালের কথায়, ‘‘আসলে এ বার পুজো হবে কি না, মাসখানেক আগেও তা বোঝা যাচ্ছিল না। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই পুজোর উদ্যোগ প্রাণ পেল। আমরা ওঁর কাছে কৃতজ্ঞ। এখন শিল্পীরা প্রত্যেকেই কিছু বায়না পাচ্ছেন।’’
গত কয়েক বছরে শহর ও শহরতলিতে গণেশ পুজোর সংখ্যা প্রচুর বেড়েছে। মূর্তির বায়নাও চলে আসে অনেক আগে। ঠিক দুর্গাপুজোর মতো। কিন্তু এ বছর অতিমারির জেরে মাথায় হাত পড়েছিল শিল্পীদের। তবু গণেশ পুজোর দিন দুয়েক আগে থেকে ছোট মূর্তি বিক্রি হয়েছিল বেশ কিছু। তখনই শিল্পীদের মনে একটা আশা জাগে, তা হলে হয়তো দুর্গা প্রতিমাও বিক্রি হবে কিছু।
মিন্টু পাল বললেন, ‘‘এ বার অনেকটা সরস্বতী পুজোর মতো ঘরেই দুর্গাপুজো পালনের হিড়িক পড়েছে। অনেকেই আসছেন ছোট প্রতিমা কিনতে।’’ আর এক শিল্পী কার্তিক পালের কথায়, ‘‘গণেশ পুজোর পরে যে এই হারে ছোট দুর্গা প্রতিমার
বায়না আসবে, তা আমাদের ভাবনার বাইরে ছিল।’’
আরও পড়ুন: ছেলের বায়না মেটাব কী করে
স্লগ ওভারে রান তুলতে একচালার সাবেক প্রতিমা তৈরির কাজে এখন রাত-দিন এক করে কাজ করে চলেছেন কুমোরটুলির শিল্পীরা।