Ananda Utsav 2019

জাত-ধর্ম বিচার নয়, পুজোয় বার্তা

পলাশিপাড়ার পুজোর আয়োজনে তাঁদের ‘ধর্ম’ কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।

Advertisement

সাগর হালদার

পলাশিপাড়া শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৯:২৭
Share:

‘মোরা একই বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু মুসলমান’— কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার এই লাইনটি যেন মূর্ত হয়ে উঠেছে পলাশিপাড়া অভিযাত্রী ক্লাবে। প্রতিমা আনা থেকে শুরু করে ফল বাজার, অঞ্জলির আয়োজন সবেতেই সমান ভাবে জুড়ে রয়েছেন ক্লাবের মুসলিম সদস্যেরা। ক্লাব কর্তারা জানান, গত দশ বছর ধরে বিভিন্ন বিভাগে প্রথম হয়েছে ওই ক্লাব। তার মূলে রয়েছে সম্প্রীতি।

Advertisement

পলাশিপাড়ার অভিযাত্রী ক্লাব সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ক্লাব। সদস্য রয়েছেন ১৩৫ জন। তার মধ্যে বেশ কয়েক জন মুসলিম। পুজোর আয়োজনে তাঁদের ‘ধর্ম’ কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ক্লাব তৈরি হওয়ার অনেক আগেই ক্লাব সংলগ্ন মাঠে কালীপুজো, সরস্বতীপুজো করতেন ক্লাবের বর্তমান সদস্য শফিক শেখ, হান্নান শেখ ও জাহাঙ্গীর মণ্ডলেরা।

জাহাঙ্গীর মণ্ডল পেশায় আইনজীবী। দুর্গাপুজো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নানা দায়িত্ব সামলাতে হয় তাঁকে। তিনি জানান, পুজো কমিটির সভাপতিও তিনি হয়েছেন। এটা তাঁর কাছে খুবই আনন্দের। তিনি বলেন, ‘‘এটা সমাজকে বুঝিয়ে দেওয়া যে, মানুষ এক ও অভিন্ন। জাতপাত, ধর্ম বলে কিছু হয় না। আমি নিজেই অষ্টমীর দিন অঞ্জলি দিই।’’

Advertisement

আরও পড়ন:৪০ ফুটের দুর্গা, ভিড় সামলাবে কে!​

পুজো মণ্ডপে শফিক (বাঁ দিকে গোলাপি ডোরা গেঞ্জি)। নিজস্ব চিত্র

ক্লাবের আর এক সদস্য শফিক শেখ পেশায় রাজমিস্ত্রি। ক্লাবের সদস্যেরা জানান, শফিককে ছাড়া পুজোর কথা তাঁরা ভাবতে পারেন না। পুজো সর্বাঙ্গসুন্দরও হত না। শফিক বলেন, ‘‘ক্লাব তৈরি হওয়ার অনেক আগে বন্ধুরা মিলে কালীপুজো, সরস্বতীপুজো করেছি। ক্লাব তৈরি হওয়ার পর ক্লাবে অনেক মুসলিম সদস্য রয়েছেন যাঁরা দুর্গাপুজোকে সুন্দর ভাবে করতে নানা চেষ্টা করে চলেছেন।’’ ক্লাবের সদস্য রকিপ মণ্ডল পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘‘ধর্মের দিক থেকে আমরা আলাদা হলেও মানুষ হিসেবে আমরা সবাই সমান। আমাদের এই কাজ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঠিক পথে নিয়ে যাবে এই ভেবে আমরা সবাই মিলে এই দুর্গাপুজো আরম্ভ করি।’’

আরও পড়ুন: পুরনো রীতিতে পুজোর ঢাকে কাঠি গাড়ুই গ্রামে​

ক্লাব সূত্রে জানা গিয়েছে, অষ্টমীতে যে ‘বাটা ভোগ’ দেওয়া হয় সেগুলির কোনও না কোনওটি মুসলিম বাড়ি থেকে আসে। ক্লাব সদস্য অর্ক দাস, রনি দাস, শুভময় বিশ্বাস বলেন, ‘‘কে মুসলমান, কে হিন্দু, কে খ্রিস্টান সে সব দেখি না। আমাদের এখানে হিন্দুরা যেমন ঠাকুর দেখতে আসেন ঠিক তেমনই মুসলিমেরা। মুসলিম সদস্যেরা না থাকলে পুজো করতে গিয়ে নানা অসুবিধার মুখে পড়তে হত। ঠাকুর নিয়ে আসা, ফল, পুজোর বাজার সব কিছুর দায়িত্ব আমরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিই।’’ ক্লাব সম্পাদক বাসুদেব বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের এখানে হিন্দু-মুসলমান কোনও ভেদাভেদ নেই। আমরা বুঝি ভাল মানসিকতা ভাল মানুষ সৃষ্টি করে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের এই একতা থেকে অনেক কিছু শিখবে। আমাদের পুজো দেখতে মুসলিম ভাই, বোন, দিদিরা আসেন। আনন্দ করেন। এটাই আমাদের কাছে বড় প্রাপ্তি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement